ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম আদালতে চার মামলার ১৫ বছর পার

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ২ এপ্রিল ২০১৯

চট্টগ্রাম আদালতে চার মামলার ১৫ বছর পার

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে সরকারী পরিত্যক্ত সম্পত্তি অবৈধ দখলে রাখতে তৎপর জামায়াত-বিএনপি’ সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের আশীর্বাদপুষ্ট এক সরকারী আমলার ইন্ধনে ৪টি মামলা ঝুলে আছে ১৫ বছর। প্ল্যানিং কমিশনে কর্মরত অফিস প্রধান সায়েদুজ্জামান এসব মামলার বিবাদী। প্রায় ৯০ কোটি টাকার ৬০ গণ্ডা ভূমি অবৈধ দখলে রাখতে কৌশলে বাদী বানানো হয়েছে সহোদর নুরুজ্জামানকে। চট্টগ্রাম আদালতে দায়ের করা এসব মামলার বিবাদী সত্তরোর্ধ এক বিধবা নারী। ১৫ বছর আগে এই মামলা দায়ের করলেও আদালতকে ফাঁকি দিতেই ৭ বছর ধরে বাদীর সাক্ষী চলছে ঝিমিয়ে। এদিকে, মহানগর ভূমি অফিস (কাট্টলী সার্কেল)-এর রেকর্ডে লাল কালিতে লেখা রয়েছে দায়েরকৃত মামলার এসব ভূমি সরকারী পরিত্যক্ত ও অবাঙালীর। ফলে ১৯৭২ সালের এপি তালিকাভুক্ত এসব ভূমির খাজনা নেয়া বন্ধ রয়েছে ১৯৯৪ সাল থেকে। এদিকে, সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে উন্নয়ন বন্ধ রেখেছে এই আমলা। সরকারী এই কর্মকর্তা প্রভাব খাটিয়ে ও সরকারী সম্পত্তি অবৈধ দখলে রাখতে আদালতকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ৪টি মামলায় চার শতাধিক বার সময় আবেদন দিয়ে আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করছে বাদী নুরুজ্জামান। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বাদীর ছলচাতুরীর কারণে আদালত বিভিন্ন সময়ে বাদীকে জরিমানা করলেও সাক্ষী শেষ করতে নারাজ বাদী। এমনকি বাদী সুস্থ থাকলেও মিথ্যা সময় আবেদন দিয়ে আদালতের বারান্দায় ঘুরছে। বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় আসার অপেক্ষায় আছে বাদী। গত ১৫ বছরে চট্টগ্রামের সিনিয়র ৩য় সহকারী জজ আদালতের বিচারকও পাল্টেছে কমপক্ষে ১০ বার। কাল ৩ এপ্রিল আবারও বাদীর সাক্ষীর নির্ধারিত দিন ধার্য রয়েছে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগরীর কাট্টলী সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার এস এম শান্তনু চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা সরকারী সম্পত্তি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে তালিকা তৈরি করছি। তালিকা অনুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে এ ধরনের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। ১৯৭২ সালের এপি তালিকাভুক্ত এসব ভূমির খাজনা নেয়া বন্ধ রয়েছে ১৯৯৪ সাল থেকে। এমনকি এসিল্যান্ড থেকে বিভিন্ন সময়ে নোটিস করা হলেও এসব সম্পত্তির অবৈধ দখলদাররা ভূমি দফতরে উপস্থিত হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, সরকারী সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে সরকারী আমলা তার সহোদরসহ চক্রের আরও কয়েক সদস্য লট-৯ পাহাড়তলী মৌজায় অপতৎপরতা চালাচ্ছে। বিএস খতিয়ান অনুযায়ী প্রায় ১ একর ২০ শতক জায়গা নামে বেনামে ভুয়া দলিলের মাধ্যমে দখলে রেখেছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম সাব-রেজিস্ট্রি ভবনে থাকা বালাম বইয়ের দুটি পাতা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে এসব ভূমির তথ্য গোপন করতে। এসব জায়গার একটি অংশে থাকা পাহাড় কেটে ফেলেছে এই ভূমিদস্যু চক্র। চট্টগ্রাম মহানগর কাট্টলী সার্কেল ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্ল্যানিং কমিশনে কর্মরত অফিস প্রধান সায়েদুজ্জামান ও মামলার বাদী নুুরুজ্জামান বিএস দাগ নং-৭২, ৭৩, ৭৪, ৭৫, ৭৬, ৭৮, ৭৯ ও ৮২ দাগে থাকা প্রায় ১ একর ২০ শতক সরকারী পরিত্যক্ত সম্পত্তি অবৈধ দখলে রেখেছেন। এসব দখলকৃত সম্পত্তি ২০০১ সালে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কর্তৃক পিও/৭২-এর আওতায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ফলে মহানগর কাট্টলী ভূমি অফিস ও জেলা প্রশাসনের দফতরে ৮৫, ৮৬, ৯৫ ও ১০১ নং খতিয়ানে এসব দাগ সরকারী পরিত্যক্ত (এপি) সম্পত্তি হিসেবে নথিভুক্ত আছে। ১৯৯৪ সালের পর থেকে ভূমি অফিস এসব জায়গার খাজনা আদায় চূড়ান্তভাবে বন্ধ রেখেছে। এমনকি এসিল্যান্ড থেকে বিভিন্ন সময়ে নোটিস করা হলে এসব সম্পত্তির অবৈধ দখলদাররা ভূমি দফতরে উপস্থিত না হয়ে দফতরের কর্মচারীদের ম্যানেজের অপচেষ্টা করছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম আদালতের ৩য় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ২০০৪ সালের ২৯ জানুয়ারি মামলা নং -১৯/২০০৪ রুজু হয়। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছরে ১৮১ তারিখে এই মামলায় আদালত বসলেও বাদী সাক্ষী দিতে নারাজ। বিভিন্ন সময়ে আদালত বাদীকে (কষ্ট) জরিমানা করার পরও বাদী সাক্ষী দিচ্ছে না। এর মধ্যে বাদী পক্ষের সাক্ষীর শুনানি ছিল প্রায় ৭৫ ধার্য্য দিন। কিন্তু বাদী মাত্র ৩/৪ তারিখে মামলার আর্জি থেকে কয়েকটি লাইনের ওপর সাক্ষ্য দিয়েছেন। বাকি অন্য সব তারিখে নানা অজুহাতে বাদীপক্ষ সময় ক্ষেপণের জন্য সময় আবেদন করেছেন। অপরদিকে, একই আদালতে ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল মামলা নং ১১১/২০০৮ রুজু করেন একই বাদী।
×