ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

আবরারের ঘাতক গাড়ির হেলপার ও কন্ডাক্টর গ্রেফতার

বাসটি দ্রুত পালানোর চেষ্টা করছিল

প্রকাশিত: ১১:০২, ২৮ মার্চ ২০১৯

বাসটি দ্রুত পালানোর চেষ্টা করছিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে সুপ্রভাতের বাস চাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় বহুল আলোচিত সেই বাস হেলপার ও কন্ডাক্টর গ্রেফতার হয়েছে। এ দু’জন গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। গ্রেফতারকৃতরা বলেছে, আবরারকে চাপা দিয়ে হত্যার আগে বাসটি শাহজাদপুরে আরেক শিক্ষার্থীকে চাপা দেয়। ওই সময় ক্ষুব্ধ ছাত্ররা বাসটির চালক সিরাজুল ইসলামকে ধরে পুলিশে দেয়। এমন খবর পেয়ে ভাংচুর হওয়ার ভয়ে বাস মালিক বাসটি নিয়ে দ্রুত পালানোর নির্দেশ দেয় হেলপার ও কন্ডাক্টরকে। নির্দেশনা মোতাবেক কন্ডাক্টর ইয়াছিন আরাফাত বাসটি বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করছিল। পালানোর সময় আবরারকে চাপা দেয়। গ্রেফতারকৃত হেলপার ও কন্ডাক্টরকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। বুধবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত ২৬ মার্চ রাতে চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি এলাকায় সুচিপাড়ার মিজানের ইটের ভাঁটিতে অভিযান চালিয়ে কন্ডাক্টর ইয়াছিন আরাফাতকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। ইয়াছিনের দেয়া তথ্য মোতাবেক বুধবার সকালে রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় হেলপার ইব্রাহিমকে। প্রসঙ্গত, গত ১৯ মার্চ সকালে আবরারকে চাপা দেয়ার পর গত ২০ মার্চ বাসটির চালক সিরাজুল ইসলামকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। চালক সিরাজুল ইসলাম ও সদ্য গ্রেফতারকৃত হেলপার এবং কন্ডাক্টরের বরাত দিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলছেন, সুপ্রভাত পরিবহনের যাত্রীবাহী ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৪১৩৫ নম্বরের বাসটি গত ১৯ মার্চ ভোর পৌনে ছয়টার দিকে পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকা থেকে ছাড়ে। বাসটি গাজীপুর যাচ্ছিল। বাড্ডার শাহজাদপুরের বাঁশতলা এলাকায় মিরপুর আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সিনথীয়া সুলতানাকে চাপা দেয়। সিনথিয়া গুরুতর আহত হয়। এ সময় বাসটির যাত্রীরা বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে ছাত্রী আহত করার ঘটনায় চালকের উপর চড়াও হয়। উত্তেজিত যাত্রীরা বাসটির চালক সিরাজুল ইসলামকে ধরে ট্রাফিক পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এ নিয়ে শোরগোল শুরু হয়। বাসটি ভাংচুর করতে উদ্যত হয় কিছু উত্তেজিত মানুষ। ওই সময় বিষয়টি মোবাইল ফোনে হেলপার ও কন্ডাক্টর বাসটির মালিক ননী গোপালকে জানায়। বাস মালিক বাস ভাংচুর হওয়ার ভয়ে কন্ডাক্টর ও হেলপারকে দ্রুত বাসটি নিয়ে পালিয়ে যেতে বলেন। কন্ডাক্টর ইয়াছিন আরাফাত বেপরোয়া গতিতে বাসটি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। পালানোর সময় নর্দ্দা এলাকায় বিইউপি শিক্ষার্থী আবরারকে চাপা দেয়। আবরার চাপা পড়ার পর ইয়াছিন বাসটি রেখেই পালিয়ে যায়। হেলপার ইয়াছিন এমন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আবরার নিহতের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গত ২০ মার্চ আসামি বাসটির চালক সিরাজুল ইসলামকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। একই মামলায় বাসটির কন্ডাক্টর সহযোগী ইয়াছিন আরাফাত ও হেলপার ইব্রাহিমকে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক কাজী শরীফুল ইসলাম। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। প্রসঙ্গত, গত ১৯ মার্চ সকালে প্রগতি সরণি এলাকায় সুপ্রভাত বাসের চাপায় বিইউপির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হন। ওইদিন রাতেই নিহত আবরারের পিতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আরিফ আহমেদ চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাসচালক সিরাজুল ইসলাম, তার সহকারী, কন্ডাক্টর ও মালিককে আসামি করা হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাসটির চালক বেপরোয়া দ্রুতগতিতে বাড্ডার দিকে থেকে প্রগতি সরণি রোড দিয়ে কুড়িলের দিকে যাওয়ার সময় পথে গুলশান থানাধীন শাহাজাদপুরের বাঁশতলায় শিক্ষার্থী সিনথিয়া সুলতানা মুক্তাকে (২০) চাপা দিয়ে মারাত্মত আহত করে। আবারও বেপরোয়া দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে গুলশান থানাধীন নর্দ্দা আইকন টাওয়ারের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল আসামিরা। যাওয়ার সময় প্রগতি সরণির পাকা রাস্তার ওপর জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় আবরার আহমেদ চৌধুরীকে চাপা দেয় বাসটি। বাসটি আবরারের মাথার উপর দিয়ে চালিয়ে দেয়। এতে তার মাথা থেঁতলে মগজ বের হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। এমন ঘটনার জেরে পুরো ঢাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ হয়। টানা দুই দিনের বিক্ষোভে রাজধানী এক ধরনের অচল হয়ে পড়েছিল। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, বিইউপির উপাচার্য মেজর জেনারেল এমদাদ-উল বারীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। ঘটনার পর পরই চালকের ও বাসটির লাইসেন্স বাতিল করা হয়। ঢাকায় বাসটির চলাচল বাতিল নিষিদ্ধ করা হয়। নিহত আবরারের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আবরারের পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করে। আবরারের নামে ঘটনাস্থলে একটি ফুটওভার ব্রিজ তৈরির কাজ চলছে।
×