ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রেমিকাকে পেতে চার বন্ধু মিলে জবাই করল সহপাঠীকে

প্রকাশিত: ১২:৩১, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

প্রেমিকাকে পেতে চার বন্ধু মিলে জবাই করল সহপাঠীকে

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী নীরব হত্যা রহস্য বেরিয়ে এসেছে। প্রেমঘটিত কারণ এই হত্যার মূল রহস্য। আটককৃত নীরবের দুই বন্ধুর মধ্যে একজন পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলে জানা গেছে। রবিবার তাদের আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দী গ্রহণ করাসহ ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এসএসসি পরীক্ষার্থী নীরব হত্যা রহস্য পুলিশ উন্মোচিত করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে নীরবের দুই বন্ধু রাব্বি ও আলালকে আটক করা হলে রাব্বি হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। রাব্বিসহ মোট চারজন এ হত্যা মিশনে অংশ নেয়। তবে তাদের গ্রেফতারের জন্য এখনই নাম বলতে চাচ্ছে না পুলিশ। সূত্রটি জানায়, নিহত নীরব একটি মেয়েকে ভালবাসতো। কিন্তু রাব্বিদের চার বন্ধুর মধ্যে আরও একজন ভালবাসতো ওই মেয়েটিকে। নীরবকে বার বার নিষেধ করার পরেও নীরব ওই মেয়েটির সঙ্গে প্রেম চালিয়ে যাচ্ছিল। এতে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হন রাব্বি ও তার বন্ধুরা। তাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার একটু আগে নীরবকে বাড়ি থেকে ডেকে আনে রাব্বি ও আলাল। তারা নীরবকে কুমারভোগ পদ্মা সেতু পুনর্বাসন কেন্দ্রের একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে একটি গাছের সঙ্গে রাশি দিয়ে বেঁধে ফেলে চার বন্ধু। সেখানে নীরবকে টর্চার করে তাকে ওই মেয়েটি থেকে সরে যেতে বলা হয়। কিন্তু নীরব তার ভালবাসার কথা আবারও ব্যক্ত করে। এতে ক্ষুব্ধতা আরও বেড়ে যায় রাব্বি ও তার বন্ধুদের মাঝে। ওই মেয়েটির ভালবাসা পেতে হলে নীরবকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে। নতুবা নীরবের কারণে ওই মেয়ের ভালবাসা পাবে না তাদের বন্ধু। তাই ভালবাসা আদায় করতে চার বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নেয় নীরবকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারা নীরবকে নিয়ে যায় পুনর্বাসন কেন্দ্রের একটি ডোবার ধারে। সেখানে নিয়ে নীরবের গলায় ছুরি দিয়ে জবাই করে নীরবকে হত্যা করে চার বন্ধু। লাশ ডোবার ধারেই ফেলে চলে যায় তারা। উল্লেখ্য, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পদ্মা সেতুর কুমারভোগ পুনর্বাসন কেন্দ্রে মোঃ নীরব হোসেন (১৬) নামে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে জবাই করে হত্যা করা হয়। গত শুক্রবার দুপুরে পুনর্বাসন কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী ডোবা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহস্পতিবার রাতেই নীরবের দুই বন্ধু রাব্বি ও আলালকে আটক করা হয়। নীরব কুমারভোগ পুনর্বাসন কেন্দ্রের নাঈম খানের ছেলে। সে মেদেনিমন্ডল আনোয়ার চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। নীরব বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাব্বি ও আলালের সঙ্গে বেড়িয়ে যায়। এরপর আর সে বাড়ি ফেরেনি। ওই পরীক্ষার্থী নিখোঁজের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই লৌহজং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে তার পরিবার। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাব্বি ও আলালকে আটক করে পুলিশ। রবিবার তাদের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণ করা হবে। রাব্বি লৌহজংয়ের পূর্ব কুমারভোগের বাবুল মোড়লের পুত্র। লৌহজং থানার ওসি মোঃ মনির হোসেন জানিয়েছেন, এসএসসি পরীক্ষার্থী নীরব হত্যা রহস্য উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। পুলিশ হত্যাকা- সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়েছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। হত্যাকারীদের অচিরেই গ্রেফতার করা হবে। এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার বিকেলে নীরবের মরদেহ কুমারভোগ নুরানী জামে মসজিদ কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এর পূর্বে নীরবের মরদেহ তার বাড়ি কুমারভোগ পদ্মা সেতু পুনর্বাসন এলাকায় পৌঁছলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। অর্ধশতাধিক মহিলা সেখানে বুক চাপড়ে আহাজারি করতে থাকে। তাদের কান্নার চিৎকারে আকাশ বাতাস ভাড়ি হয়ে উঠে পুনর্বাসন কেন্দ্রের। উপস্থিত কেউই সেখানে চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি। তাদের মুখে একটাই কথা ছিল এমন ফুটফুটে ছেলেটাকে কেন ওরা কেড়ে নিল। বেঁচে থাকলে হয়ত অনেক বড় হতো নীরব। কিন্তু স্কুলের গন্ডিই পেরুতে দিল না নরপিচাশ ঘাতকরা।
×