ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিএমইটি ও আইওএম প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে

এসডিজি অর্জনে কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণে গুরুত্বারোপ

প্রকাশিত: ১১:১৪, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

এসডিজি অর্জনে কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণে গুরুত্বারোপ

ফিরোজ মান্না ॥ টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) যৌথভাবে ‘এক্টিভিটি প্ল্যান ফর স্কিলস ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড মাইগ্রেশন মেনেজমেন্ট’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রতিষ্ঠান দুটি ২০২১ সাল পর্যন্ত এক সঙ্গে কাজ করবে। দক্ষ জনশক্তি রফতানি হলে প্রবাসী আয় অনেক বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ বিদেশে চাকরি করে যে পরিমাণ রেমিটেন্স দেশে পাঠাচ্ছেন তার প্রায় সমপরিমাণ অর্থ বিদেশী দক্ষ কর্মীরা বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ডিজি সেলিম রেজা সম্প্রতি বলেন, একজন দক্ষ কর্মীকে নিরাপদ, সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমেই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন সম্ভব হবে। সেই কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে সঠিক ব্যবস্থা হাতে নেয়া হয়েছে। দেশে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রবাসীরা বিদেশে যাওয়ার আগে তাদের কর্মদক্ষতা যাচাই করে পাঠানো হবে। দক্ষ কর্মী তৈরি করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। চলতি বছর বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠানোর জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ‘দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ করা হচ্ছে। দক্ষতা উন্নয়নে কয়েকটি মন্ত্রণালয় জড়িত, তারা যাতে সবাই ‘ইফেক্টিভ’ পন্থায় কাজ করতে পারে, সেজন্য জাতীয় একটি সংস্থা করতে যাচ্ছে সরকার। উন্নত বিশ্বে কর্মী পাঠাতে প্রথম কাজই হলো দক্ষতা উন্নয়ন। কর্মীদের ভাল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এটা করা সম্ভব হবে। তারা যদি দক্ষ হন তাহলে বিদেশে বেতনও বেশি পাবেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রতি বছর দেশ থেকে ৮ থেকে ৯ লাখ কর্মী বিভিন্ন দেশের চাকরি নিয়ে যাচ্ছে। দক্ষতার অভাবে তারা অনেক কম বেতনে চাকরি করছেন। অথচ অন্য দেশের কর্মীরা দক্ষতার কারণে বেশি বেতন পাচ্ছেন। দেশের প্রায় এক কোটি কর্মী বিদেশে চাকরি করলেও রেমিটেন্সের পরিমাণ বাড়ছে না। প্রতি বছরে রেমিটেন্স এসেছে সাড়ে ১৪ থেকে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অদক্ষ জনশক্তি রফতানির কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ দিনে দিনে নেমে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে বিদেশী ৫ থেকে ৬ লাখ দক্ষ জনশক্তি কাজ করছেন। তারা প্রায় সমপরিমাণ অর্থ দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে মন্ত্রণালয় দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আইওএম’র সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জানা গেছে, দালাল চক্রের মাধ্যমে বিদেশে বিপুল সংখ্যক অদক্ষ কর্মী যাওয়ার ফলে শুধু প্রবাসীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু রেমিটেন্স বাড়ছে না। এই অদক্ষ কর্মীরা বেশিরভাগই গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী থেকে আসা। তাদের নানাভাবে প্রলোভনে ফেলে মধ্যস্বত্বভোগীরা হাতিয়ে নিচ্ছে বড় অঙ্কের টাকা। তারা বিদেশে হাড় ভাঙ্গা খাটুনি খেটেও যে টাকায় বিদেশ গেছেন সেই টাকাই তুলতে পারেন না। এর মধ্যে ওই কর্মীর কাজ করার সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। পরে বাড়তি কিছু টাকা আয়ের আশায় তারা অবৈধ হয়ে লুকিয়ে কাজ করে। সূত্র জানিয়েছে, এই প্রকল্পের আগে জাপান অদক্ষ কর্মী নিয়ে তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য ‘টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামের’ (টিআইটিপি) আওতায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন গ্রহণ করছে। বাংলাদেশ থেকে এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে সর্বাধিক পরিমাণ টেকনিক্যাল ইন্টার্ন নিচ্ছে দেশটি। বাংলাদেশ থেকে নেয়া শিক্ষানবিস কর্মীদের পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেবে। পরে তারা দেশে ফিরে নিজেই উদ্যোক্তা হতে পারবেন। আইএম জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ২০১৫ সালের ৮ জুলাই টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। ওই সময় চারটি টেকনিক্যাল এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়। তখনকার চুক্তিতে টেকনিক্যাল ইন্টার্নগণ তিন বছর মেয়াদী জাপানে কাজের সুযোগ পেয়ে থাকত। চুক্তির মাধ্যমে টেকনিক্যাল ইন্টার্নগণ পাঁচ বছর মেয়াদী জাপানে কাজের সুযোগ পাবেন। তাদের অর্জিত দক্ষতা অনুযায়ী শিল্প ও কলকারখানায় উচ্চ বেতনে ম্যানেজার এবং সুপারভাইজার পর্যায় নিয়োজিত হতে পারবেন।
×