ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভুল চিকিৎসা ॥ ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করে নিঃস্ব পরিবার

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

 ভুল চিকিৎসা ॥ ২৭ লাখ টাকা  ব্যয় করে নিঃস্ব পরিবার

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা ॥ চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জ্বর-কাশির চিকিৎসা নিতে গিয়ে নার্গিস বেগম নামে এক প্রবাসীর স্ত্রীর জীবন এখন এলোমেলো হয়ে পড়েছে। ঢাকা, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন নামীদামী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পরেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি নার্গিস। ওই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক গোলাম কিবরিয়া টিপুর ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে এ পর্যন্ত ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করে নিঃস্ব হওয়ার অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবারটি। জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের যুগিরখিল গ্রামের প্রবাসী খোরশেদ আলমের শাশুড়ি নুরুন্নাহার বেগম ও অসুস্থ নার্গিসের একমাত্র কন্যা খাদিজা আক্তার মীম শুক্রবার কান্না জড়িত কণ্ঠে এসব কথা জানান। এ বিষয়ে প্রতীকার চেয়ে জেলা সিভিল সার্জন ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বরাবরে অভিযোগ করেন প্রবাসী খোরশেদ আলম। জানা গেছে, সামান্য জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে গত ১৪ অক্টোবর সকালে নার্গিস বেগম (২৮) চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। টিকেট নিয়ে ওই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ গোলাম কিবরিয়া টিপুকে দেখান। এ সময় ওই ডাক্তার তাকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেন এবং নিক্সন ২০ মি. নামের একটি ইনজেকশনসহ কয়েকটি ওষুধ লিখে দেন। পরে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে থাকা এক নার্স নিক্সন ইনজেকশনটি নার্গিসের শরীরে পুশ করলে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি (নার্গিস) অজ্ঞান হয়ে পড়েন। বিষয়টি ডাঃ গোলাম কিবরিয়া টিপুকে অবহিত করা হলে তিনি তার লেখা ইনজেকশনটির নাম প্রেসক্রিপশন থেকে কলম দিয়ে কেটে ফেলেন এবং অন্য ওষুধ লিখে দেন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নার্গিসকে প্রথমে কুমিল্লার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখানে রাতভর চিকিৎসার পর অবস্থার আরও অবনতি দেখা দিলে তার স্বজনরা তাকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আইসিইউতে প্রফেসর ডাঃ ওমর ফারুকের তত্ত্বাবধানে নার্গিসকে ২৩ দিন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। পরে তাকে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে নেয়া হয়। নার্গিসের জীবন রক্ষার্থে বিভিন্ন হাসপাতালে দীর্ঘ ১ মাস ৮ দিন চিকিৎসা বাবদ ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করে পরিবারটি এক রকম নিঃস্ব হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় দুই সন্তান লেখাপড়া। ঢাকার চিকিৎসকরা নার্গিসকে মাসে ২-৩ বার করে তাদের দেখানোর জন্য বললেও অর্থাভাবে পরিবারটির পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না। তার মেয়ে খাদিজা আক্তার মীম কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, ঘটনার ৪ মাসেও আমার মা কাউকে চিনতে পারছেন না, কথা বলতে পারছেন না। তিনি শুধু ফ্যাল-ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। ডাক্তার গোলাম কিবরিয়া টিপুর ভুল চিকিৎসার কারণে আমার মায়ের জীবন এখন সঙ্কটাপন্ন। আমরা এর বিচার চাই। এদিকে দুবাই প্রবাসী খোরশেদ আলম স্ত্রীর এহেন নির্মম অবস্থার খবর পেয়ে দেশে ছুটে আসেন, ধার-দেনা করে স্ত্রীর চিকিৎসায় মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয়ে কোন ইতিবাচক ফল না পেয়ে তিনি সপ্তাহখানেক আগে কর্মস্থলে চলে যান। মোবাইল ফোনে তিনিও সাংবাদিকদের নিকট সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের এ ধরনের ভুল চিকিৎসার কারণে তার স্ত্রী এ পরিণতির জন্য বিচার দাবি করেন। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক গোলাম কিবরিয়া টিপু ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ হাসিবুর রহমান জানান, নার্গিসের চিকিৎসায় কোন ভুল ছিল না। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এমন হতে পারে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ হাসিবুর রহমান আরও জানান, নার্গিসের স্বামী জেলা সিভিল সার্জনের নিকট অভিযোগ দায়ের করেছেন। সিভিল সার্জনের নির্দেশনা পেলে কমিটি গঠন করে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×