ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

প্রযুক্তি দিয়ে সাইবার জগত নিরাপদ করা হবে ॥ জব্বার

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

প্রযুক্তি দিয়ে সাইবার জগত নিরাপদ করা হবে ॥ জব্বার

ফিরোজ মান্না ॥ নতুন বছরে সাইবার জগতকে নিরাপদ করাই হবে প্রধান কাজ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে সাইবার জগত কিছুটা নিরাপদ হয়েছে। এবার প্রযুক্তি দিয়ে সাইবার জগত নিরাপদ করা হবে। এ জন্য হাতে নেয়া হবে নানা উদ্যোগ। এত দিন জগতটি ছিল অরক্ষিত। দেশের মানুষকে সাইবার জগতে নিরাপদ রাখতে হবে। মানুষ নিরাপদ না হলে সমাজও নিরাপদ হবে না। সমাজ নিরাপদ না হলে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত। সব দিক বিবেচনা করেই সাইবার নিরাপত্তার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। ভিশন ২০২১-আগেই বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে উন্নত দেশের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটবে। এখনই তথ্যপ্রযুক্তির অনেক শাখা বিশ্বমানে পৌঁছে গেছে। সম্প্রতি জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ কথা বলেন। মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেশে ডিজিটাল আইন জরুরী ছিল। যে হারে সাইবার জগতকে অপপ্রচারের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছিল তাতে দেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন না হলে এবারের নির্বাচনে অরাজকতা তৈরি হতো। আমরা সাইবার জগতকে নিরাপদ রেখে জনগণের কাছে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দিতে চাই। দেশের মানুষের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া আমাদের অঙ্গীকার। দেশের প্রতিটি মানুষের হাতে ইন্টারনেট সুবিধা থাকলে দেশের উন্নয়ন কেউ রোধ করতে পারবে না। উন্নত দেশের কাতারে দেশ এখনই অবস্থান করছে। ভিশন ২০২১ সালের আগেই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষমতা অর্জন করব। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে সাইবার জগতকে নিরাপদ রাখতে হবে। প্রতিটি মানুষকেও নিরাপদে রাখতে হবে। এ জন্য ডিজিটাল আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যার যা খুশি তাই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট করা যাবে না। এতে সমাজের শান্তি বিনষ্ট হতে পরে। এই চিন্তা মাথায় রেখেই আইনটি প্রণয়ন করা হয়। প্রথম দিকে আইনটি নিয়ে দেশের বেশ কিছু মানুষ আমাকে গালাগাল করেছে। পরে আইনটির প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরে এখন তারাই আইনটির সুবিধা ভোগ করছেন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশও এখন আমাদের অনুসরণ করতে হচ্ছে। এ আইন কপি করা ছাড়া তাদের বিকল্প রাস্তা নেই। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত এক দশকে দেশে জঙ্গীবাদ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। কিন্তু সাইবার অপরাধ বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে দেশবিরোধী একটি চক্র-রাজনৈতিক দল সাইবার অপরাধ করে যাচ্ছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন বছরে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিটিআরসিসহ সরকারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, আইসিটি আইন সংশোধন হওয়ার পরে ২০১৩ সালে ২৫টি, ২০১৪ সালে ৬৫টি, ২০১৫ সালে ৬৫টি, ২০১৬ সালে ১৫টি, ২০১৭ সালে ৫০টি ও ২০১৮ সালে ৬২টির মতো আইসিটি আইনে মামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪২টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। সাইবার অপরাধীরা বেশির ভাগ ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, গুগল ও স্কাইপে ভুয়া আইডি খোলাসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল, ব্লগে মিথ্যা মানহানিকর তথ্য প্রচার, অশ্নীল ছবি, ভিডিও ও ম্যাসেজ পাঠিয়ে উত্ত্যক্ত করছে সাইবার অপরাধীরা। এ সব বন্ধে ডিজিটাল নিরাপত্ত আইন অনেকটাই কাজে দিয়েছে। তা না হলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা অপপ্রচার ও গুজব ছড়িয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করা হতো। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে অপরাধের ধরনেও পরিবর্তন হয়। অনেক অপরাধী এখন সাইবার অপরাধে ঝুঁকে পড়েছে। তাদের দমন করাই হবে নতুন বছরে প্রধান কাজ। সূত্র জানিয়েছে, সাইবার জগতে নানা ধরনের অপপ্রচার আর গুজব ছড়াতে পাকা জামায়াত-শিবির। তাদের বিভিন্ন ব্লগ ও নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া হলেও দেশের বাইরে থেকে তারা নানাভাবে এই জগতে প্রবেশ করছে। ছড়াচ্ছে নানা গুজব ও অপপ্রচার। বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য-উপাত্তে ভরে তুলছে সাইবার জগত। দেশ ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার, প্রতিপক্ষের অবমাননার মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তা ছড়ানো হচ্ছে ব্যাপক হারে। কোন কোন গুজব ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। এবার যেমন নির্বাচনের আগে থেকেই অপপ্রচার ঠেকাতে সোচ্চার ছিল বিটিআরসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচনের পরেও একইভাবে সাইবার জগতকে নিরাপদ করার জন্য কয়েকটি সংস্থা যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে। হুমকি মোকাবেলায় যে কোন মুহূর্তে যে কোন ওয়েবসাইট বন্ধ করা হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে। সন্দেহজনক ফেসবুক আইডি ও পেইজ বন্ধ করা অব্যাহত রয়েছে। ইউটিউব চ্যানেলগুলোর ওপরও নজর রাখা হচ্ছে।
×