ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

গার্মেন্টসে সহযোগিতা বাড়ানোর আশ্বাস ইইউ’র

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

গার্মেন্টসে সহযোগিতা বাড়ানোর আশ্বাস ইইউ’র

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রফতানিমুখী তৈরি পোশাক খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে ইইউ মনে করে। এছাড়া সব ধরনের পণ্য রফতানিতে ইইউ জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার সচিবালয়ের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইইউ প্রতিনিধি দল বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলামের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে মিলিত হন। তিন সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজি তিরিঙ্ক। এ সময় ইইউ এ্যাম্বেসির ইকোনমিক মিনিস্টার উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠক শেষে বাণিজ্য সচিব কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। তিনি জানান, বাংলাদেশের রফতানির একটি বড় অংশ যায় ইউরোপের ২৮টি দেশে। ইইউতে রয়েছে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা। এ অবস্থায় ইইউর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা জরুরী। তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া দেশে কমপ্লায়েন্স কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর বিষয়টি এখন গুরুত্বপূর্ণ এই খাতের জন্য। ইইউ এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহযোগিতা বাড়াতে চায়। তৈরি পোশাকের ন্যায্য দামের বিষয়ে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে ইইউ কাজ করছে। বাণিজ্য সচিব বলেন, ইইউ বাজারে তৈরি পোশাকের উপযুক্ত মূল্য পেতে পণ্যের মান আরও বাড়াতে হবে বলে তাগিদ দিয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দাম বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন। এজন্য আমাদের ক্যাপাসিটি বিল্ডিংসহ বাড়ানোসহ উচ্চ মানসম্পন্ন পণ্যের দিকে যেতে হবে। নি¤œমানের পণ্য দিয়ে দাম বাড়ানো বা বাজার বাড়ানো যাবে না। তবে আমরা এখন অনেক ভাল করছি। মফিজুল ইসলাম বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) ইনিশিয়েটিভের আওতায় বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে বেশ উপকৃত হচ্ছে। এ বাণিজ্য সুবিধার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের উন্নতি হচ্ছে এবং বাংলাদেশের শ্রমিকরা উপকৃত হচ্ছেন। আশা করা হচ্ছে, আগামীতে এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি তৈরি পোশাক আমদানি করবে। এলডিসি দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার পর আগামী ২০২৭ সালের পর থেকে বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রদান করা হবে। এজন্য বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু করেছে। বাণিজ্য সচিব তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোয় সরকার ও শিল্প মালিকদের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। এছাড়া শ্রমিক ইস্যু, আইএলও কনভেনশন, মজুরি বোর্ড, পোশাক খাতের কমপ্লায়েন্সসহ অন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তৈরি পোশাক কারখানাগুলো উন্নত করে গড়ে তোলা হয়েছে। বিল্ডিং ও ফায়ার সেফটি নিশ্চিত করা হয়েছে। উন্নত ও কর্মবান্ধব পরিবেশও নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে এখন অনেক গ্রীন ফ্যাক্টরি গড়ে উঠছে। বিশ্বের ১০টি বড় গ্রীন কারখানার মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ৭টি। কাজের পরিবেশ আগে যে কোন সময়ের চেয়ে এখন ভাল। উন্নত পরিবেশে শ্রমিকরা কাজ করছেন। এছাড়া সরকার বাংলাদেশের শ্রম আইন সংশোধন করেছে। শ্রমিকরা এখন যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি শ্রম অধিকার ভোগ করছেন। রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশে আর কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। শ্রমিক ও মালিকরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছেন। ইইউর প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, বিল্ডিং ও ফায়ার সেফটি নিশ্চিতকরণ এবং কর্মবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। রেনজি তিরিঙ্ক এদেশের তৈরি পোশাকের মূল্য বাড়ানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি পোশাকের দাম বাড়াতে সংশ্লিষ্ট ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনাসহ এ খাতের সহযোগিতায় ইইউ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে। প্রসঙ্গত, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রফতানির ১৮ দশমিক ০৪ শতাংশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের রফতানি হয়েছে। ওই সময় ইউরোর অবমূল্যায়ন না হলে এ রফতানির পরিমাণ ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যেত বলে মনে করা হয়। প্রতিবছর ইইউতে দেশের রফতানি বাড়ছে।
×