ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘ঐক্যফ্রন্ট সংসদ সদস্যদের সংসদে আসা উচিত’

গণতন্ত্রের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চাই॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

গণতন্ত্রের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চাই॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারাবাহিকতা আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনসহ আগামী সকল নির্বাচনে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে দলকে সামগ্রিকভাবে শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া গণতন্ত্রের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পুনরায় বৈঠকে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার রাতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রথম যৌথসভায় এমন সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে। বৈঠক সূত্র জানায়, যৌথসভায় দলীয় নেতাদের এমন তথ্য জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা ওই সংলাপে অংশ নিয়েছিলেন তাদের ধন্যবাদ। এখন সবাইকে নিয়েই দেশ গড়ার কাজ করতে চান তিনি। এজন্য সংলাপে অংশ নেয়া সবাইকে একদিন আমন্ত্রণ জানাবেন তিনি। যৌথসভায় অংশ নেয়া একাধিক নেতা আরও জানিয়েছেন, সংলাপে অংশ নেয়া সব দলের সঙ্গে বৈঠক করার কথা বললেও নির্বাচনের মাঠের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদেরও ওই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানাবেন কী-না সেটি পরিষ্কার করেননি প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতাদের সঙ্গেও বসার আগ্রহ দেখিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। একাদশ নির্বাচনে পরাজয়ের পর ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন গত বৃহস্পতিবার গণফোরামের এক আলোচনা সভায় নতুন নির্বাচনের পথ বের করতে জাতীয় সংলাপের আহবান জানিয়েছেন। এর পরপরই দলীয় ফোরামের সভায় সংলাপে অংশ নেয়া সব দলের সঙ্গে বৈঠকে বসার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন আগ্রহকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে জানিয়েছেন সভায় অংশ নেয়া দলের কয়েকজন নেতা। যৌথসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সদ্যসমাপ্ত জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে মনোনয়নবঞ্চিত পাঁচ কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের ভূমিকার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, মনোনয়ন না পেলেও মন খারাপ করার কিছু নেই। ভবিষ্যতে তাদের এমন ত্যাগের মূল্যায়ন অবশ্যই করা হবে। সভায় আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে দলের অংশগ্রহণ বিষয়েও আলোচনা হয়। এ সময় শেখ হাসিনা জানান, দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনেও দলের জয় নিশ্চিত করতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। এজন্য দলকেও শক্তিশালী করতে হবে। দলীয় সংহতি বজায় রেখে কাজ করলে জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলাতেও বিজয় অর্জন সম্ভব হবে। এটি এবারের জাতীয় নির্বাচনেও প্রমাণ হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানান তিনি। সূত্র জানায়, বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দল ও সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে দল ও সরকার সংশ্লিষ্টদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার আহবান জানান তিনি। এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দলীয় কর্মসূচী ও সরকারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেতা হলেন, কে সংসদ সদস্য হলেন, কে মন্ত্রী হলেন আর কে হলেন না; এটা ভুলে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। জনগণ আমাদের ওপর আস্থা-বিশ্বাস রেখে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। তাই জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আমাদেরও চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। সূত্র জানায়, বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, হতাশার কোন কারণ নেই। সবাইকে তো আর মনোনয়ন দেয়া সম্ভব হয় না। তারপরও যারা মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন, তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতেই মূল্যায়ন করা হবে। সূত্র জানায়, বৈঠকে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হয়, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূলের মতামত প্রাধান্য দেবে কেন্দ্র। প্রথমে তৃণমূলের নেতারা প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠাবে। কেন্দ্রীয় স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করতে নেতাদের কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন। ১৯ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় মহাসমাবেশ সফল করা, ২১ ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ দিবস, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মবার্ষিকী, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস কর্মসূচীসহ ২০২০ সালের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে করণীয় ঠিক করতে নির্দেশনা ও পরিকল্পনা গ্রহণের আহবান জানান তিনি। সদ্য অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল হওয়ার এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। তিনি জানান, শীঘ্রই নির্বাচন সংশ্লিষ্ট দলের উপ-কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। সূত্র জানায়, যৌথসভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এইচটি ইমাম, কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, মুকুল বোস, অধ্যাপক খন্দকার বজলুর হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য এ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয় ও চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় প্রথমেই শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান তাঁরা। ঐক্যফ্রন্ট সংসদ সদস্যদের সংসদে আসা উচিত ॥ এর আগে আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অল্প আসনে বিজয়ী হলেও গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের জাতীয় সংসদে আসা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে হেরেছে। এই দোষ তারা কাকে দেবে? এই দোষ তাদের (বিএনপি) নিজেদেরই দিতে হবে। কারণ একটি রাজনৈতিক দলের যদি নেতৃত্ব না থাকে, মাথাই না থাকে তাহলে সেই রাজনৈতিক দল কীভাবে নির্বাচনে জেতার কথা চিন্তা করতে পারে? শনিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথসভায় সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, একটি রাজনৈতিক দলে পলাতক আসামি দিয়ে রাজনীতি করতে গেলে কী রেজাল্ট (ফলাফল) হয় সেটাই তারা পেয়েছে। প্রার্থী নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য যদি না হতো তাহলে হয়তো তারা (বিএনপি) আরও ভাল রেজাল্ট করতে পারত। মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে বিএনপিতে নিজেদের মধ্যে কোন্দল-মারামারির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ জানতে পেরেছে যে এদের চরিত্রটা কী। এদের (বিএনপি) চরিত্র শোধরায়নি। তাই বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তারপরেও যে কয়টা সিটে তারা জিতেছে, গণতন্ত্রের স্বার্থে তাদের পার্লামেন্টে আসা প্রয়োজন। এটুকু বলতে পারি যে, আমরা যখন সরকারে এসেছি, আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছি। জনগণের জন্য কাজ করেছি। আমরা কিন্তু কোন রিভেঞ্জ নিতে চাইনি বা আমরা কাউকে কোন হয়রানিও করতে যাইনি। নির্বাচনে দেশের মানুষ সবাই দেখেছে কোনমতে নির্বাচনটা যেন বানচাল করা যায় সেই চেষ্টাই বিএনপিরা করেছে। কিন্তু তা তারা পারেনি। লাল-সবুজের পতাকায় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত ॥ রাস্তার দুপাশে লাইনে দাঁড়িয়ে লাল-সবুজের পতাকায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানালো ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায় যোগ দিতে শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে দুইটার আগ থেকেই দক্ষিণ যুবলীগের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে হাজির হন। গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট থেকে মৎস্য ভবনের রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা, যুবলীগের দলীয় পতাকা নেড়ে অভিনন্দন জানান সংগঠনের নেতারা। জিরো পয়েন্টে নিজে উপস্থিত থেকে এতে নেতৃত্ব দেন যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। এ সময় নেতাকর্মীরা ‘বারবার দরকার শেখ হাসিনার সরকার, শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দুই নয়ন-বাংলাদেশের উন্নয়ন, জনগণের ক্ষমতায়ন- শেখ হাসিনার উন্নয়নসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। স্লোগান ও পতাকা নেড়ে অভিনন্দনের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গাড়ির ভেতর থেকে হাত নেড়ে অভিনন্দনের জবাব দেন।
×