ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

চুয়াডাঙ্গা পাউবো

জনবল সঙ্কটে নদী খনন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১২ জানুয়ারি ২০১৯

 জনবল সঙ্কটে নদী খনন  ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা

রাজীব হাসান কচি, চুয়াডাঙ্গা ॥ পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর জেলার ৫টি নদী ও ২টি খাল পুনর্খনন করার কাজ জনবল সঙ্কটের কারণে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জনবল সঙ্কট দূর করার জন্য বারবার সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা পনি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম। প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম জানান, ৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ খাল, ছোট নদী এবং জলাশয়ে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য পুনর্খননের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। কৃষি কাজে পানি ব্যবহার ও সুযোগ মতো মাছ চাষের জন্যই এ কর্মকান্ড ২০ জানুয়ারি থেকে পুরোদ্দমে শুরু হবে। তিনি জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলার ১৪ কিলোমিটার নবগঙ্গা নদী, ২৫ কিলোমিটার চিত্রা নদী, ১২ কিলোমিটার কুমার নদী ও ৬ কিলোমিটার নৌকা খাল এবং চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় মেহেরপুর জেলার ৮ কিলোমিটার ছেউটিয়া নদী, ৮ কিলোমিটার কাজলা নদী, মুজিবনগর উপজেলায় সরস্বতী খাল ১০ কিলোমিটার পুনর্খনন করা হবে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ কাজ বাস্তবায়নে ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে খনন কাজের উদ্বোধন করা হয়। ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হতে পারে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, খনন কাজ তদারকি ও বুঝে নেয়ার জন্য জনবল সঙ্কট রয়েছে। কিন্তু তা পূরণে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় মেহেরপুর জেলাও রয়েছে। কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলিয়ে ৬৯ জনের মধ্যে কর্মরত রয়েছে ২৯ জন, শূন্য রয়েছে ৪৩ জন। শূন্যপদগুলো হলো, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ১ জন, সহকারী প্রকৌশলী (রাজস্ব) ১ জন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাখা কর্মকর্তা ৩ জন, সহকারী সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ১ জন, সহকারী সেচ কর্মকর্তা ১ জন, উচ্চমান সহকারী প্রধান করণিক ১ জন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ৩ জন, সার্ভেয়ার (রাজস্ব) ১ জন, সার্ভেয়ার (প্রকৌশলী) ২ জন, ট্রেসার ১ জন, কার্যসহকারী ৬ জন, হিসাব করণিক ১ জন, গাড়ি চালক ৩ জন, ইলেক্ট্রিশিয়ান-এ ১ জন, পাম্প অপারেটর ১ জন, অফিস সহায়ক ৯ জন, মালী ১ জন, নিরাপত্তা প্রহরী ৩ জন ও সহকারী কুক ১ জন। বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম জানান, দ্রুত জনবল সঙ্কট দূর না হলে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দুষ্কর হবে। ভেস্তে যাবে সরকারের মহৎ উদ্যোগ। এদিকে নদী, খাল ও জলাশয় পুনর্খননে খুশি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ফুলবাড়ী গ্রামের মরহুম বিশারতের ছেলে কৃষক ইলিয়াস হোসেন (৫৫)। তিনি বলেন, আগে চিত্রা নদীর পানি ব্যবহার করেই আমাদের কৃষি কাজ চলত। চিত্রা নদীর উৎসমুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন আর সেটাতে পানি থাকে না। চিত্রা নদী চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন গ্রামের মধ্য দিয়ে ঝিনাইদহ, যশোর ও নড়াইল জেলার সঙ্গে মিশে গেছে। এই নদী খনন কৃষকদের জমিগুলোতে সেচ কাজে সহায়ক হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। একই উপজেলার দোস্ত গ্রামের মরহুম আব্দুল গফুরের ছেলে কৃষক হাবিবুর রহমান কাজল (৪৫) বলেন, পানির অভাবে আমাদের এ অঞ্চলে চাষাবাদ ব্যাহত হয়। এ গ্রাম দিয়ে চিত্রা নদী প্রবাহিত হলেও সেখানে পানি প্রবাহ নেই। এই নদীটি খনন হলে এখানকার মানুষ কৃষিতে আরও সমৃদ্ধিশালী হবে। চুয়াডাঙ্গার সদরের পৌর এলাকার স্বশানপাড়ার মরহুম আহাম্মদ মন্ডলের ছেলে কৃষক কুদ্দুস মন্ডল (৭০) বলেন, আমার আবাদি জমির পাশ দিয়ে নবগঙ্গা খাল প্রবাহিত হলেও সেখানে পানি না থাকায় সেচ সুবিধা পাওয়া যায় না। নবগঙ্গা খাল খনন হলে আমাদের কৃষি কাজে বেশ উপকার হবে। এরপর থেকে পানির সমস্যায় থাকতে হবে না।
×