ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

এর মধ্যেই চলছে নয়া পর্ষদ গঠনের নানা হিসাব-নিকাশ

বিমানের ঘাড়ে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণের বোঝা এখন

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৭ জানুয়ারি ২০১৯

 বিমানের ঘাড়ে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণের বোঝা এখন

আজাদ সুলায়মান ॥ বিমানের ঘাড়ে এখন সাড়ে দশ হাজার কোটি টাকার ঋণ। বিগত দশ বছরে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এই এয়ারলাইন্স বহরে একের পর এক আটটি অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ যোগ হলেও সেভাবে বাণিজ্যিক সাফল্যই আসেনি। তারপরও গত মাসে বিমান লভ্যাংশ প্রদান করেছে তিন বছরের। এর মধ্যে দুবছরের লাভ ছিল আগের আমলের অর্থাৎ জামাল জমানার। বিমানের সদ্যবিদায়ী পর্ষদ তিন বছর দায়িত্ব পালন করলেও লাভের মুখ দেখেছে মাত্র এক বছর। সেটাও ১৬-১৭ সালে। বিদায়ী ’১৮ সালের দশ মাস ছিল লোকসানে ভরা। এ অবস্থায় গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে বিমান পর্ষদশূন্য। কে হচ্ছেন বিমানের চেয়ারম্যান- এ নিয়ে চলছে ম্যানেজমেন্টের নানা হিসাব-নিকাশ। বিমান সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার সাতচল্লিশ বছরে রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যাত্রী বাড়লেও কমেছে রুট। ৫২ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান চলাচল চুক্তি থাকলেও বর্তমানে মাত্র ১৫ আন্তর্জাতিক রুটে বর্তমানে ফ্লাইট চলাচল করে। সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় কাক্সিক্ষত অবস্থানে যেতে পারেনি বিমান। তবে ’১৯ সালে বহরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আরও দুটি ড্রিমলাইনারসহ চারটি উড়োজাহাজ যুক্ত হলে চারটি নতুন রুটের প্রত্যাশা ’৭২ সালের ৪ জানুয়ারি পথচলা এই প্রতিষ্ঠানটির। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে যাত্রা শুরু হওয়া বিমানে আশির দশক থেকে বিমান সংখ্যা বাড়তে থাকে। কালক্রমে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার ২৯ আন্তর্জাতিক গন্তব্যে পাখা মেলে বিমান। সেই সোনালী সময় ছিল আশির দশক জুড়ে। পরে রাজনৈতিক বিবেচনায় ফ্লাইট পরিচালনা ও বেশি দামে উড়োজাহাজ লিজ নেয়ায় ক্রমাগত লোকসানে বন্ধ হয়ে যায় গৌরবময় নিউইয়র্কসহ অধিকাংশ রুট। বিগত ওয়ান/ইলেভেনের সময় সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক আমলে বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের ৭৩৭, ৭৭৭ ও ৭৮৭ মডেলের অত্যাধুনিক দশটি উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি হয়। এ চুক্তির আওতায় বিমান বহরে একের পর এক যোগ হতে থাকে উড়োজাহাজ। এর মধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এয়ার মার্শাল জামালের নেতৃত্বে ছিল বহুল আলোচিত শক্তিশালী পর্ষদ। এই পর্ষদের শেষ তিন বছর বিমান ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। তারপর থেকে এয়ার মার্শাল ইনামুল বারীর নেতৃত্বে গঠিত পর্ষদ বিমান পরিচালনা করে টানা তিন বছর। ওই পর্ষদ লাভের ধারা বজায় রাখতে সক্ষম হয় শুধু ’১৬ সালের মার্চ থেকে ’১৭ সালের নবেম্বর পর্যন্ত। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি ’১৮ সালে এসে ফের লোকসানের মুখে পড়ে বিমান। এ বছরে হজের দুই মাস শুধু লাভ দেখলেও গোটা বছর লোকসান গুনতে হয়েছে। বিমানের অর্থ বিভাগ জানায়, সদ্যবিদায়ী বছরে বিমান ২০১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। কেন এই লোকসান জানতে চাইলে বিমানের এক প্রভাবশালী পরিচালক বলেন, বিমানে অত্যাধুনিক মানের উড়োজাহাজগুলোকে সঠিক বাণিজ্যিক ব্যবহারে লাগানো যায়নি। নতুন কোন রুট চালু করতে পারেনি। উল্টো পাইলটদের অযৌক্তিক উচ্চ হারে বেতন বাড়ানোসহ অপচয় ও দুর্নীতিতে বড় আর্থিক লোকসানের মুখে পড়ে বিমান। এ অবস্থায় হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বিমানের সবাইকে লভ্যাংশ দেয়া হবে। তিন বছরের লভ্যাংশ হিসেবে যা পাওনা তার অর্ধেক পরিশোধ করা হয় গত মাসে। তবে বিমানের ক্যাজুয়াল কর্মীরা ছাড়া সবাইকে লভ্যাংশ দেয়ায় নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। অথচ শিল্প আইনে লভ্যাংশ পাওয়ার অধিকার কারখানার প্রতিটি কর্মীর। এখানে ক্যাজুয়াল আর স্থায়ীর কোন ব্যবধান নেই। এ সম্পর্কে বিমানের অপর এক পরিচালক বলেন, লভ্যাংশ যদি সবাইকে দেয়া হয়-তাহলে লোকসানের দায়ও নিতে হয় সবাইকে সমানহারে। এদিকে গত ২০ ডিসেম্বর বিমান পর্ষদের বার্ষিক সাধারণ সভা হয়। কোম্পানি আইন অনুযায়ী গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে বিমানে কোন পর্ষদ নেই। এখন নতুন পর্ষদ গঠনের অপেক্ষায়। এ বিষয়ে বিমান মন্ত্রী শাহজাহান কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, পর্ষদে কে চেয়ারম্যান হবেন, কে থাকবেন, কে বাদ পড়বেন, তা প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সংকেত পেলেই সিদ্ধান্ত হবে। তবে আমি আশাবাদী নতুন সরকার গঠনের পরই এ বিষয়ে খুব শীঘ্রই একটি শক্তিশালী পর্ষদ গঠনের সিদ্বান্ত পাওয়া যাবে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, বিমানের গন্তব্য বাড়াতে হবে, কার্গো অপারেশন তৈরি করতে হবে। চায়না ও ইউরোপিয়ান নেটওয়ার্কিং বাড়িয়ে অন্যান্য এয়ারলাইন্স ও সরকারী এয়ারলাইন্সের সুবিধার তারতম্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অন্যথায় এ বছরও বিমান লোকসানের মুখেই থাকবে।
×