ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম জয় পেল রংপুর

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৭ জানুয়ারি ২০১৯

  প্রথম জয় পেল  রংপুর

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) ষষ্ঠ আসরে প্রতিদিন দুটি করে ম্যাচ হচ্ছে। রবিবারও দুটি ম্যাচ হয়। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তান অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদির ব্যাটিং তা-বে সিলেট সিক্সার্সকে ৪ উইকেটে হারিয়ে লীগে শুভসূচনা করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। দ্বিতীয় ম্যাচে রাইলি রুশোর ব্যাটিং ঝড়ে খুলনা টাইটান্সকে চরমকার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে ৮ রানে হারের প্রথম জয়ের স্বাদ পায় রংপুর রাইডার্স। দিনের ম্যাচে স্কোরবোর্ডে যেন রানই জমা করা যাচ্ছে না। কিন্তু কৃত্রিম আলোয় যখন খেলা হয়, তখন স্কোরবোর্ড মজবুত হয়ে ওঠে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটকে কী এমনিতেই ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ বলা হয়। সিলেট যেমন ১২৭ রানের বেশি করতেই পারল না। এই রান করতে গিয়ে কুমিল্লাও বিপদে পড়ে। তবে শেষপর্যন্ত আফ্রিদি (২৫ বলে অপরাজিত ৩৯) ধামাকায় রক্ষা হয় কুমিল্লার। ৬ উইকেটে ১৩০ রান করে জিতে কুমিল্লা। রংপুরতো নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেও ক্রিস গেইলকে ছাড়া খেলতে নামে। এবার অবশ্য প্রথম ম্যাচের মতো হাল হয়নি। রুশোর (৫২ বলে অপরাজিত ৭৬) ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ের সঙ্গে রবি বোপারার অপরাজিত ৪০ রানে ১৬৯ রান করে রংপুর। জবাব দিতে নেমে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৬১ রান করে খুলনা। জয়ের কাছাকাছি গিয়েও হারে। পল স্টারলিং ৬১ ও জুনায়েদ সিদ্দিকী ৩৩ রান করেন। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দিনের প্রথম ম্যাচে কুমিল্লা-সিলেট ম্যাচে টস জিতে কুমিল্লা। আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন স্টিভেন স্মিথ। মিরপুরের যে উইকেট, তাতে রান তোলাই কঠিন। এমন উইকেটে যে দলই টসে জিতবে, তারাই ফিল্ডিং নেবে। বিশেষ করে সূর্য্যরে আলোয় খেলা হওয়া ম্যাচে। প্রতিপক্ষকে আগে ব্যাটিং দিয়ে অল্পতে বেঁধে রাখা গেলেই যে হলো। কুমিল্লা তাই করেছে। তাতে জয়ও মিলেছে। সেই জয়টি এসেছে পাকিস্তান অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদির ব্যাটিং ঝড়ে। ম্যাচটিতে কুমিল্লার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও সিলেটের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের দিকেই নজর ছিল। কিন্তু দুইজনই হতাশ করেন। ওয়ার্নার ১৪ রান করেন। স্মিথের ব্যাট থেকে আসে ১৬ রান। দুইজনকে ছাপিয়ে সব নজর কেড়ে নেন আফ্রিদি। তার জ্বালাময়ী ব্যাটিংয়েই যে কুমিল্লা জিতে। সিলেট আগে ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১২৭ রানের বেশি করতে পারেনি। জবাব দিতে নেমে দলের ৮৩ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে কুমিল্লা। বিপদ তখন ঘাড়ে ভর করে। দলের ৯৭ রানে গিয়ে ভরসা হয়ে ওঠা তামিম ইকবাল (৩৫) যখন রান আউট হন, তখন খাদের কিনারায় পড়ে যায় কুমিল্লা। সেখান থেকে কুমিল্লাকে টেনে তোলেন আফ্রিদি। শেষ মুহূর্তে ২৫ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৩৯ রানের ইনিংস খেলেই কুমিল্লাকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ফুরিয়ে গেছেন আফ্রিদি, যারা এমনটি ভেবেছিলেন, তাদের ভাবনা যে ভুল; তা প্রমাণ করলেন আফ্রিদি। স্বমহিমায় ফিরেছেন তিনি। নিজেকে মেলে ধরেন। তার ব্যাটিং ঝড়ে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯.৫ ওভারে ১৩০ রান করে জিতে কুমিল্লা। লীগে শুভসূচনা করে। প্রথম ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রংপুরকে যেন খুঁজেই পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় ম্যাচেই দলটি ঘুরে দাঁড়ায়। প্রথম ম্যাচে যেখানে ৯৮ রান করেছিল রংপুর, দ্বিতীয় ম্যাচে বিশাল স্কোর গড়ে। কখনোই ব্যাটিংয়ে বিপদে পড়েনি দলটি। ওপেনার রুশোতো ৮ চার ও ২ ছক্কা মেরে ঝড় তুলেন। ৬৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পরত রংপুর আর কোন উইকেটই হারায়নি। রুশো ও বোপারা মিলেই শেষ ১০ ওভার খেলেন। দুইজন মিলে চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১০৪ রানের জুটিও গড়েন। রুশোর মারমুখী ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বোপারাও নিজের ব্যাটিং নৈপুণ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। ২৯ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ৪০ রান করেন বোপারা। এই দুইজনের অসাধারণ নৈপুণ্যে রংপুরও মজবুত ভিত গড়েন। এই রানের জবাব দিতে নেমে খুলনা ব্যাটসম্যানরাও ঝলক দেখান। দুই ওপেনার পল স্টারলিং ও জুনায়েদ সিদ্দিকী মিলেইতো ম্যাচ জেতানোর আশা জাগিয়ে ফেলেন। দুইজন মিলে ৯০ রান পর্যন্ত এগিয়ে যান। এমন মুহূর্তে জুনায়েদকে (৩০ বলে ৩৩ রান) আটকান হাওয়েল। ৮ রান যোগ হতে নাজমুল হোসেন শান্তকে বোল্ড করে দেন শফিউল ইসলাম। তবুও ভয় থাকে। স্টারলিং যে উইকেটে থাকেন। শেষপর্যন্ত দলের ১০৮ রান হতেই স্টারলিংকে (৪৬ বলে ৬১) সাজঘরে ফেরান মাশরাফি বিন মর্তুজা। ত্রাতা হয়ে আবির্ভুত হন মাশরাফি। যেখানে ৯০ রানে কোন উইকেট হারায়নি খুলনা, সেখানে ১৮ রানের মধ্যে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেটের পতন হয়। রংপুর শিবিরে যেন স্বস্তি ফিরে আসে। এ স্বস্তি অবশ্য বেশিক্ষণ থাকে না। খুলনার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। স্টারলিং আউট হওয়ার পর ৪০ বলে ৬২ রান লাগত। সেখান থেকে রিয়াদের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে ১৮ বলে জিততে ৩৫ রান দরকার থাকে। ১৮তম ওভারে গিয়ে ফরহাদ রেজা দুর্দান্ত বোলিং করেন। ৫ রান দেন। রিয়াদকেও (১৭ বলে ২৪ রান) আউট করে দেন। আরিফুল হকের সঙ্গে রিয়াদের জুটিও ৩২ রানের বেশি এগিয়ে যেতে পারেনি। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মাশরাফি অসাধারণ ক্যাচ ধরেন। এই ওভারেই খুলনার জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়। ১২ বলে তখন জিততে ৩০ রান লাগে। খুলনার ব্যাটসম্যানরা মহাচাপে পড়ে যান। এর প্রভাবও দেখা যায়। ১৪০ রানে গিয়ে রিয়াদের পর আরিফুলও সাজঘরে ফেরেন। ১৯তম ওভারে শফিউল ১০ রান দেন। ৬ বলে জিততে ২০ রান লাগে। ফরহাদ রেজা বল হাতে নেন। ওভারটিতে ১১ রান হয়। অমি ১২ রানে ও ব্রেথওয়েট ৬ রানে অপরাজিত থাকেন। ৮ রানে জিতে রংপুর। ‘এমপি’ হওয়ার পর প্রথম জয় পায় মাশরাফি। রংপুরও প্রথম জয় তুলে নেয়।
×