ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবার পূর্ব প্রস্তুতির জন্য সংখ্যালঘুরা নিরাপদ

রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণে সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণে সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ এবারের নির্বাচনে সহিংসতার কবলে পড়তে হয়নি সংখ্যালঘুসহ সাধারণ ভোটারকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের সচেতনতামূলক পূর্ব প্রস্তুতির কারণে এ রকম পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই। সর্বোপরি রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়টি তো রয়েছেই। বিশিষ্টজনসহ রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য, এতে সন্তুষ্টির কিছু নেই। যে কোন সময় দেশে বিশৃঙ্খলা ঘটাতে পারে সুবিধাবাদী উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠী। তাই হামলার বিষয়ে সারাদেশে সতর্ক নজরদারি অব্যাহত রাখার পরামর্শ তাদের। এদিকে নির্বাচনের পরে নোয়াখালী, ফরিদপুরসহ কয়েকটি স্থানে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বস্তরে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি উঠেছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকেই। উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়েই গত রবিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। শঙ্কা ভুলে সেই উৎসবে শামিল হয়েছিলেন ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সর্বস্তরের মানুষ। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী এবার নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮০ ভাগ, যা বিগত কয়েক বছরের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। এতে নিরঙ্কুশ জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীসহ অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষের ওপর কোন প্রকার সহিংস ঘটনা ছাড়াই নির্বাচন হওয়ায় সন্তুষ্ট সবাই। বিশিষ্টজনসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেনÑ সরকার, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতা থাকলে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, সহিংসতা ছাড়াও যে নির্বাচন সম্ভব, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই দৃষ্টান্তই স্থাপন হয়েছে। এ জন্য নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসনসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানান তারা। ’১৪ সালের নির্বাচন ঘিরে দেশের বিভিন্নস্থানে সহিংস ঘটনা বিশ^বাসী দেখেছে। এবারের নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার শঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছিল না। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর নোয়াখালীর সুবর্ণ চরে নারী ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউ রেহাই পাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আমি এ বিষয়ে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার মনোভাব জানি। অলরেডি পুলিশের আইজির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ডিআইজি সম্ভবত স্পটে গেছেন। সেনাবাহিনীর ওই অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসাররাও বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখছেন। প্রশাসনও তৎপর। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি বলতে পারি সরকার এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে। এখানে অপরাধী যেই হোক শাস্তি তাকে পেতেই হবে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচনকালীন সাম্প্রদায়িক সহিংসতার খবর তাৎক্ষণিক জানাতে ‘মনিটরিং সেল’ গঠন করে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ। মনিটরিং সেলের সমন্বয়ক কাজল দেবনাথ জানান, এ পর্যন্ত দেশের কোথাও সংখ্যালঘু নির্যাতনের বড় খবর তাদের কাছে আসেনি। আগে যে দু’তিনটি ঘটনা ঘটেছে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী জাফরুল্লাহ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সন চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সোমবার রাতে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। এতে কিছু সংখ্যালঘু পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, ’৯০ সালের পর যত নির্বাচন হয়েছে ধারাবাহিকভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা হয়েছে। তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম ছিল ২০০৮ সালের নির্বাচন। অবশ্য ’১৮ সালের নির্বাচন অধিকতর ব্যতিক্রম। এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত, সরকার ও প্রশাসন চাইলে এসব সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব। খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচন মানেই সংখ্যালঘুদের কাছে ‘আতঙ্ক’। ’১৮ সালের নির্বাচনে তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে সংখ্যালঘুরা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়েছে। অতীতে নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিন সংখ্যালঘুদের ওপর যে সহিংসতার ধারা আমরা দেখে এসেছি এবারের নির্বাচনে সে দৃশ্য এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি। বিক্ষিপ্ত কয়টি ঘটনা ঘটেছে। তবে বড় কোন সহিংস ঘটনা ঘটেনি।
×