ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

শুরু হয়েছে শীতবস্ত্র কেনাকাটা ॥ ভোর রাতে কুয়াশা পড়ছে

ডিসেম্বরের শেষার্ধে মৃদু বা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮

ডিসেম্বরের শেষার্ধে মৃদু বা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ

নিখিল মানখিন ॥ কাগজে কলমে এখন হেমন্তকাল। দিনক্ষণের বিবেচনায় শীতকালে প্রবেশের এখনও প্রায় দশ দিন বাকি। তবে দেশে শীতের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত রাজধানীতেও অনুভূত হচ্ছে হালকা শীত। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামে শীতের তীব্রতা যেন একটু বেশি। রাতের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় দেশের সর্বত্র ভোরের দিকে হালকা কুয়াশা পড়ছে। গ্রামাঞ্চলের নদীর কিনারায়, বিস্তীর্ণ বিল ও বনের ধারে কুয়াশার মাত্রা বেড়েই চলেছে। রাজধানীর নামীদামী শপিংমল, মার্কেট ও ফুটপাথগুলোয় শীতবস্ত্র বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহে দেশের সর্বোচ্চ ও নিম্ন তাপমাত্রা অনেক হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে দেশের অধিকাংশ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, ডিসেম্বর শেষার্ধে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দু’টি মৃদু অথবা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলে ইতোমধ্যে মাঝারি ধরনের শীত অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত পড়ছে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা। আগামী তিনদিনে দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অনেক হ্রাস পাবে। এ মাসে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের তেমন সম্ভাবনা নেই। আবহাওয়া অধিদফতর মতে, ডিসেম্বর শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি অথবা ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা অথবা মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। তবে সারাদেশে একটানা দুই থেকে তিনদিন ঘন অথবা মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। ডিসেম্বরে স্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে। এ মাসে রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে পারে। দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে। এদিকে, বিকেল গড়াতে না গড়াতেই রাজধানীর পাড়া-মহল্লা ও ফুটপাথে শীতের পিঠার পসরা সাজিয়ে বসছেন দোকানিরা। বেলা গড়ালেই মলিন আবছা অন্ধকার ঘনিয়ে আসে এখন। খুব তাড়াতাড়ি নেমে আসে সন্ধ্যা। আকাশে জমে ওঠে হালকা কুয়াশার স্তর। গা শিরশির করা হিমেল স্পর্শ বুলিয়ে দেয় মৃদু হাওয়া। এসবই জানিয়ে দিচ্ছে শীতের উপস্থিতি। অগ্রহায়ণের ২১ দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে আজ বুধবার। দেশের প্রান্তিক এলাকাগুলোয়, বিশেষত উত্তরাঞ্চলে এখন বেশ শীত। বরাবরই রাজধানীতে শীত আসে একটু দেরিতে। তবে এবার সন্ধ্যার পর হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে। এই হালকা শীতে এখনও গরম কাপড়চোপড় দেখা যাচ্ছে না নগরবাসীর গায়ে। কোট-জাম্পার-চাদর পরতে শুরু করেছে, তবে লেপ-কম্বলের জন্য আরও অন্তত সপ্তাহ দুয়েক অপেক্ষায় থাকতে হবে। সাধারণত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ঢাকার শীত লোকজনকে লেপ মুড়ি দিতে বাধ্য করার মতো শক্তিমান হয়ে ওঠে না। আবার ফেব্রুয়ারি শুরু হতে না হতেই হাওয়া বদলের রেশ। দাপুটে হোক বা দুর্বল, রাজধানীতে শীত নিয়ে রকমারি আয়োজনের কোন ঘাটতি থাকে না। হেমন্তের শুরু থেকেই পাড়া-মহল্লা, বাজার, অফিস এলাকার ফুটপাথে বসে গেছে পিঠা তৈরির দোকান। বিকেল থেকে ভাপা, চিতই, তেলের পিঠা বিক্রি হচ্ছে দেদার। কাঁচাবাজারে শিম, মুলা, কপি, বরবটি, টমেটোসহ শীতের সবজিবাজারে এসেছে শীত নামার আগেই। খেজুরের রস দুর্লভ, তবে চলে এসেছে নতুন পাটালি। রসনাবিলাসীরা শীতের স্বাদ পাচ্ছে পুরোপুরি। সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও পড়েছে শীতের সাড়া। নানা ধরনের আয়োজনে উৎসবমুখর হয়ে উঠছে ঢাকার মঞ্চ-মিলনায়তনগুলো। অগ্রহায়ণের পাকা ফসল কৃষিনির্ভর আমাদের জনজীবনে নিয়ে আসে সচ্ছলতা। শীতকাল তাই আমাদের দেশে আনন্দময়, উৎসবমুখর হয়ে আছে আবহমানকাল থেকে। আবহাওয়াবিদরা জানান, ধীরে ধীরে শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে। তবে এবার শীতের তীব্রতা কেমন হতে পারে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। হিমালয় অঞ্চল থেকে আগত শীতল বায়ু উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ বায়ু সর্বপ্রথম উত্তরাঞ্চল দিয়ে ঢোকে বলে উত্তরে সবার আগে শীতের তীব্রতা দেখা দেয় এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দেশে মূলত ডিসেম্বরে শীত বেশি অনুভূত হয়। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের আমেজ থাকে। এর আগে অক্টোবর ও নবেম্বরে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে বলে শীত অনুভূত হয়। মৌসুম পরিবর্তনের সময় সাগর অস্থিতিশীল থাকে। আর এ সময় সাগরে বিভিন্ন লঘুচাপ ও নি¤œচাপ সৃষ্টি হতে পারে। বছরের এ সময়ের নি¤œচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তবে দেশে বিরাজ করছে ঠা-া ও গরমের মিশ্র আবহাওয়া। বর্ষা বিদায়ের পর এবং শীত আগমনের আগে প্রতিবছর দেশে এমন আবহাওয়া বিরাজ করে। এমন আবহাওয়ায় রাজধানীতে সর্দি-কাশির জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। নগরীর অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এমন মৌসুমি জ্বরে আক্রান্তরা ভিড় জমাচ্ছেন। কারও কারও শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়ায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের মৌসুমি জ্বর নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। প্রতি বছরই এমন সময় সর্দি-কাশি জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ জ্বরের চিকিৎসা লাগে না। এ জ্বরে আক্রান্ত হলে মাথাব্যথা হতে পারে। তিনদিন পর্যন্ত এন্টিবায়োটিক খাওয়া ঠিক হবে না। প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীর গা হালকা ঠা-া পানি দিয়ে দিনে কয়েকবার মুছে দিতে হবে। তিনদিন পরও জ্বর না কমলে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। রোগীকে স্বাভাবিক খাবার দেয়া অব্যাহত রাখতে হবে। ছোঁয়াচে হওয়ায় এ ধরনের জ্বর থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
×