ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

যশোর জেনারেল হাসপাতাল

এক ইনকিউবেটর ও তিন ফটোথেরাপি দিয়ে চলছে শিশুর চিকিৎসা

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮

এক ইনকিউবেটর ও তিন ফটোথেরাপি দিয়ে চলছে শিশুর চিকিৎসা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোর জেনারেল হাসপাতালের শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি চিকিৎসা সামগ্রী ও মেশিনারিজের সংখ্যা। যে কারণে এ ওয়ার্ডে শিশুদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, শীতের শুরুতে ঠা-াজনিত শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু ব্যবস্থাপত্র দিলেও চিকিৎসা সামগ্রী ও মেশিনারিজের অভাবে উন্নত চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের রেজিস্টার খাতা অনুযায়ী, গত রবিবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডে নিউমনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ ঠা-াজনিত রোগ নিয়ে ১০৯ শিশু ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে ওয়ার্ডে ৬৫ শিশু রোগী অবস্থান করছেন। এর মধ্যে ২২ শিশু রয়েছে নিউনেটাল ব্লকে। ফলে নিউনেটাল ব্লকে পাঁচটি বেবি টলিতে চাপাচাপি করে ৪/৫ জন করে শিশু রাখতে হচ্ছে। অপরদিকে, সাধারণ বেডে জায়গা না থাকায় অনেক শিশুকে ঠা-ার মধ্যে ওয়ার্ডে ফ্লোরে রাখতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। এদিকে হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে যশোর জেনারেল হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলে সে সময় শিশু রোগীদের জন্য পাঁচটি ইনকিউবেটর মেশিন, ছয়টি ফটোথেরাপি মেশিন ও বিভিন্ন সময় কয়েকটি সাকার মেশিন, সেলাইন ঝুলানোর স্টান্ড এবং দুটি অক্সিজেন সিলিন্ডার বরাদ্দ দেয়া হয়। নবজাতকের জন্য ২০১১ সালের জুলাইয়ে ওয়ার্ডের মধ্যে স্থাপন করা হয় নিউনেটাল ব্লক। তখন এসব মেশিনারিজ ওই ব্লকে স্থানান্তর করে একটি বিশেষ রুম গড়ে তোলা হয় শিশুদের জন্য। এই রুম গরম ও ঠাণ্ডা করার জন্য ওয়ার্মার মেশিনও স্থাপন করা হয়। দীর্ঘ তিন বছর এই বিভাগ থেকে শিশুরা উন্নত চিকিৎসা পেলেও মেশিনগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে নিউনেটাল ব্লকটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে শিশু রোগীর জন্য একটি নেবুলাইজার মেশিন, একটি ইনকিউবেটর, তিনটি ফটোথেরাপি মেশিন, একটি সাকার মেশিন, স্যালাইন ঝোলানোর ৪টি স্টান্ড এবং দুটি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। যা রোগীর সংখ্যার তুলনায় অনেক কম। ওয়ার্ডে কর্তব্যরত সেবিকা রাজিয়া সুলতানা জানান, যে পরিমাণ শিশু ভর্তি হয় সে তুলনায় চিকিৎসা সামগ্রী ও মেশিনারিজের সংখ্যা ওয়ার্ডে নেই। দেখা যায় এ সকল মেশিন রোগীরা ব্যবহারের সময় আরও ২/৩টি রোগী ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছে। তাদের জন্য জরুরী ভিত্তিতে মেশিনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু তাৎক্ষণিক ওই সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। নিউনেটাল ব্লকের চিকিৎসাধীন বসুন্দিয়া সিঙ্গিয়া গ্রামের বাসিন্দা বৃষ্টি জানিয়েছেন, তার দুই দিনের শিশুকে শিশু ওয়ার্ডে শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু ভর্তির পর থেকে নেবুলাইজার দিতে গিয়ে সঠিকভাবে দেয়া যাচ্ছে না। যখনই দেয়া হচ্ছে পাঁচ মিনিট পরে আর একজন শিশুকে নেবুলাইজার দেয়ার জন্য স্বজনরা আসছেন। অনেক সময় চিকিৎসক শিশুকে ইনকিউবেটরের মধ্যে রাখতে বলেছেন। কিন্তু একটি মেশিন হওয়ার কারণে এক ঘণ্টার বেশি রাখতে পারছেন না তিনি। নবজাতকের মা আঞ্জুমান আরা, রজিনা, ইসমত আরাও এসব সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এ ব্যাপারে মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান জানান, বর্তমানে শিশু ওয়ার্ডে উন্নত চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসা সামগ্রী ও মেশিনারিজের সংখ্যা কম থাকায় সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। আগামীতে শীত বৃদ্ধি পেলে ওয়ার্ডে শিশু রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। তখন ইচ্ছা না থাকলেও মেশিনারিজ সাপোর্টের জন্য রোগীদের রেফার করতে হবে। এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ লিটু জানিয়েছেন, শিশু ওয়ার্ডে মেশিনারিজ সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে জানানো হয়েছে। এমনকি শিশু ওয়ার্ডের একটি চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য সচিবের হাতেও দেয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই চিকিৎসাসামগ্রী ও মেশিনারিজ সমস্যা সমাধান হবে।
×