ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

গান আর স্মৃতিচারণে আইয়ুব বাচ্চুকে ভালবাসা

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮

  গান আর স্মৃতিচারণে আইয়ুব বাচ্চুকে ভালবাসা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পর্দায় দৃশ্যমান হচ্ছে দেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের নানা স্মরণীয় মুহূর্ত। আর সব ছবিতেই কিংবদন্তি ব্যান্ড সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর প্রাণবন্ত উপস্থিতি। কখনও তিনি গাইছেন, কখনও গিটারে সুর তুলছেন আবার কখনও কখনওবা অবতীর্ণ হয়েছেন সংগঠকের ভূমিকায়। পাশাপাশি সঙ্গীত ভুবনে তার প্রতিষ্ঠা এবং নিজের ও দল এলআরবির বিভিন্ন সময়ের এ্যালবামগুলো ঘুরেফিরে পর্দাজুড়ে। নেপথ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে সদ্য প্রয়াত এই রকস্টারের শ্রোতানন্দিত গানের সুরÑ হাসতে দেখো গাইতে দেখো/অনেক কথায় মুখর আমায় দেখো/দেখো না কেউ হাসির শেষে নীরবতা ...। ব্যান্ড সঙ্গীতের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন বামবা নির্মিত তথ্যচিত্রে এভাবেই বর্ণিলভাবে হাজির হলেন আইয়ুব বাচ্চু। বামবার আয়োজনে রবিবার স্মরণ করা হলো ভক্তদের কাছে এবি নামে পরিচিত আইয়ুব বাচ্চুকে। গাওয়া হলো তার পরিবেশিত শ্রোতার কাছে তুমুল জনপ্রিয় ১৫টি গান। গানগুলো গাইলেন বামবার অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন ব্যান্ড দলের শিল্পীরা। সেই স্মৃতিচারণে উঠে এলো সঙ্গীতের প্রতি এবির নিমগ্নতার কথা, ব্যান্ড সঙ্গীতে তার অবদানসহ ভালবাসার কথা। হেমন্ত সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে যৌথভাবে ‘ফেয়ারওয়েল ট্রিবিউট আইয়ুব বাচ্চু’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমি ও বামবা। কোরান তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এর পর শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে পালন করা হয় ১ মিনিটের নীরবতা। সঙ্গীত পরিবেশনা শুরুর আগে এবির বর্ণাঢ্য সঙ্গীতজীবন এবং তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বামবার সভাপতি হামিন আহমেদ, কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম, ব্যান্ড সঙ্গীত শিল্পী শাফিন আহমেদ, বামবার সহসভাপতি ফুয়াদ নাসের বাবু, মানাম আহমেদ ও বাপ্পা মজুমদার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বামবার সাবেক সভাপতি মাকসুদ। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন আইয়ুব বাচ্চু। ব্যান্ড সঙ্গীতে সৃষ্টি করেছেন নতুন ধারা। শুধু গান নয়, গিটারের সুরেও মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন শ্রোতাকে। সঙ্গীত নিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর অনেক স্বপ্ন ছিল। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তার চলে যাওয়াতে আমাদের ব্যান্ড সঙ্গীতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো। মাকসুদ বলেন, বামবা আর আইয়ুব বাচ্চুর স্বপ্ন, কোন পৃথক স্বপ্ন ছিল না। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নেয়াই আমাদের লক্ষ্য। বামবার প্রতিষ্ঠার ৩২ বছরের মধ্যে এই প্রথম তার কোন সদস্যকে হারালাম আমরা। তবে এ জন্য আমরা শোক করব না, আইয়ুব বাচ্চুর বর্ণিল জীবনটাকে উদ্্যাপন করব। বামবার অল স্টাররা ভালবাসা জানাব তার প্রতি। এছাড়া দেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের ইতিহাসের এসব ব্যান্ডের শিল্পীরা মিলে গাইছেন একজন শিল্পীর গান। হামিন আহমেদ বলেন, তিন দশক আগে বাচ্চুর সঙ্গে আমার পরিচয়। সঙ্গীতে আমাদের যাত্রাটা ছিল দীর্ঘদিনের। শুধু গানের টানে চিটাগাং থেকে একটি ছেলে চলে এলো ঢাকায়। হোটেলে থেকে শুরু করল সঙ্গীত জীবনের সংগ্রাম। এক সময় প্রতিষ্ঠিত করল নিজেকে। তার চিন্তাভাবনার সবটুকু জুড়েই শুধু সঙ্গীত। ১৯৮৭ সালের দিকে আমরা যখন এক সঙ্গে গান করি তখন দেশের ব্যান্ড সঙ্গীতে গিটারটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কিন্তু আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গীতায়োজনে গিটার ছিল অপরিহার্য অংশ। তাই গানের মতো তার গিটারের জাদুতেও মুগ্ধ হয়েছে শ্রোতা। ফুয়াদ নাসের বাবু বলেন, তার মধ্যে কোন রকমের হিংসা ছিল না। আমার সঙ্গে তার অনেক মান-অভিমান থাকলেও আমার কোন কাজ ভাল হলে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে সে আমার প্রশংসা করত। তার মতো বন্ধুবৎসল মানুষ খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর। কথা ও স্মৃতিচারণ পর্ব শেষে শুরু হয় সঙ্গীত পরিবেশনা। মিলনায়তনজুড়ে ভেসে বেড়ায় বিভিন্ন ব্যান্ড দলের শিল্পীদের কণ্ঠে গীত আইয়ুব বাচ্চু ও তার ব্যান্ড দল এলআরবির শ্রোতানন্দিত ১৫টি গানের সুর। ফয়সাল গেয়ে শোনান ‘এখন অনেক রাত’। শাফিন আহমেদ গেয়ে শোনান ‘আসলে কেউ সুখী নয়’। মাকসুদের কণ্ঠে গীত হয় ‘ময়না’। বাপ্পা মজুমদার শুনিয়েছেন ‘এই রূপালি গিটার’। বামবার সব শিল্পী মিলে গেয়েছেন ‘চলো বদলে যাই’। এছাড়া বিভিন্ন শিল্পী ও ব্যান্ডের কণ্ঠে পরিবেশিত অন্য গানগুলোর শিরোনাম ছিল ‘রাতের তারার মতো’, ‘চাঁদ মামা’, ‘ফেরারি মন’, ‘গতকাল রাতে’, ‘সুখেরই পৃথিবী’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘দিশেহারা’, ‘হাসতে দেখো’, ‘বাংলাদেশ’, ‘নীল বেদনা’ ও ‘ঘুমন্ত শহরে’।
×