ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মনোনয়নে জঙ্গী খুনী রাজাকার

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

 মনোনয়নে জঙ্গী খুনী রাজাকার

সামনে সংসদ নির্বাচন। দেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করবে। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাই দেশের আইন প্রণেতা হবেন। তাই আইন অমান্যকারী বা আইন ভঙ্গকারী কোন অপরাধী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না- এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো একটি দল এমন সব প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে তাতে করে ওই দলটি সম্পর্কে মানুষের পূর্বেকার ধারণাটিই বদ্ধমূল হয়ে উঠেছে। মানুষ এখন নিশ্চিত হচ্ছে যে, ওই দল অর্থাৎ বিএনপি জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষক; তারা স্বাধীনতা বিরোধীদের দোসর এবং আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশের মানুষকে আহত-নিহত করার মানসিকতাসম্পন্ন। প্রশ্ন হচ্ছে এদের হাতে গণতন্ত্র কিভাবে নিরাপদ থাকবে, আবার দেশ ও দেশের মানুষ কী উপায়ে ভাল থাকবে? স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত নেতাদের মন্ত্রী করে তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের অপমান করেছিল বিএনপি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার এসে একাত্তরে মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ সংঘটনকারী দালালদের স্বচ্ছ বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে জাতির গ্লানিমোচন করেছিল। পরবর্তীকালে হাইকোর্টের রায়ের আলোকে স্বাধীনতাবিরোধী দলটির নিবন্ধন বাতিলের মাধ্যমে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশনে। ফলে তাদের আর জাতীয় নির্বাচনে দাঁড়াবার সুযোগই ছিল না। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে সেই জামায়াত নেতাদের হাতে বিএনপি এখন নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষ তুলে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে নির্বাচনে তাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সমকালে দেশের সমৃদ্ধির জন্যে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ানোর অপচেষ্টা চালায় জঙ্গীগোষ্ঠী। হলি আর্টিজানে বিদেশী নাগরিকদের হত্যার মধ্য দিয়ে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টেরও অপতৎপরতা শুরু হয়। পর্যবেক্ষক মহল বারবার বলে আসছিল যে, বিএনপিই জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষক। জঙ্গীদের পেছনে অর্থলগ্নির অভিযোগে বিচারের মুখে থাকা ব্যারিস্টার সাকিলা ফারজানাকে মনোনয়ন দেয়ার মাধ্যমে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হলো জাতির সামনে। সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা দেশবাসী ভুলবে কী করে! কী ভীষণ অস্থির নৈরাজ্যকর বিপজ্জনক দিন গেছে জাতির জীবনে। দলীয় কর্মীদের কাছে ‘দেশনেত্রী’ অভিধা পাওয়া খালেদা জিয়ার হুকুমে হরতাল-অবরোধের নামে দেশের সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারার নাশকতা চলে টানা তিন মাস। গোটা দেশ হয়ে ওঠে সন্ত্রাসের জনপদ। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা শুধু মানুষ পুড়িয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তাদের সহিংসতা ও নাশকতায় দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধনও ঘটে বিপুল পরিমাণে। আমরা আশা প্রকাশ করেছিলাম বিএনপির শুভবুদ্ধির উদয় হবে। সহিংসতা, ষড়যন্ত্র, নির্বাচন ভন্ডুলের অপচেষ্টাসহ গণবিরোধী ও নেতিবাচক পথ পরিহার করে সুস্থ রাজনীতির ধারায় তারা ফিরে আসবে। কিন্তু তাদের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড থেকে এমন ধারণাই মেলে যে তারা সেই পুরনো পথেই হাঁটছে। কথায় বলে কয়লা ধুলেও ময়লা যায় না। একাত্তরের রাজাকার, সমকালের আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষ হত্যাকারী এবং জঙ্গীদের সহচর ও পৃষ্ঠপোষককে আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন দানের ভেতর দিয়ে বিএনপি ষোলোকলা পূর্ণ করল। এর বিপরীতে আশার কথা এই যে, দেশের তরুণ প্রজন্ম, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেনি, তারা আগের চাইতে অনেক বেশি সচেতন। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সঠিকভাবেই লালন করছে এবং স্বাধীনতাবিরোধী চক্রকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে চট্টগ্রাম-১ আসনে বিএনপি মনোনীত রাজাকার প্রার্থীর সন্তানের সাহসী বক্তব্য। সন্তান তার বাবাকে ভোট না দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে এলাকার ভোটারদের প্রতি। তার বক্তব্য হলো বিএনপি-জামায়াত জোটের মতো জঙ্গী ও মানুষ পোড়ানো চক্রকে কিছুতেই ভোট দেয়া যায় না। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার অর্জনকে যে অপশক্তি ম্লান করে দিতে চায় তাদের ব্যাপারে তরুণ প্রজন্ম তথা তরুণ ভোটাররা যে সতর্ক ও সচেতন রয়েছেন সেটিই আজ বড় স্বস্তি ও আশার কথা।
×