ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সমস্যায় জর্জরিত সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৬ নভেম্বর ২০১৮

 সমস্যায় জর্জরিত সাতক্ষীরা  শিশু হাসপাতাল

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ সকাল ১০টার সময়ও মনে হচ্ছে হাসপাতাল চত্বরটি অন্ধাকারে ঘেরা। গাছের ছায়ায় আলো ঢুকতে পারে না। সন্ধ্যার পর হাসপাতাল এলাকাটি পরিণত হয় অন্ধকার এলাকায়। রাতে লাইট জ¦লে না। নেই কোন গেট। অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র হয় সব শ্রেণীর মানুষের জন্য। সকাল পৌনে দশটায়ও কোন ডাক্তারের দেখা নেই। আউটডোরে শিশুদের নিয়ে রোগীরা বসে আছে। এই চিত্র জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ এম আর খান প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের। হাসপাতালটি এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। সম্পূর্ণ বেসরকারীভাবে এবং নিজস্ব অর্থায়নে চলছে হাসপাতালটি। হাসপাতালে বর্তমানে শয্যা সংখ্যা রয়েছে ৪০। ভিআইপি কেবিন ৪টি। সাধারণ কেবিন রয়েছে ৬টি। বেডসহ সকল সেবা নিতে হয় টাকার মাধ্যমে। সাতক্ষীরার জনগণের কল্যাণে ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য ১৯৮৬ সালে এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হলেও দীর্ঘ ৩২ বছরেও এটি সরকারীকরণ হয়নি। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ আফম রুহুল হকের সময় এখানে কিছু সরকারী অনুদান মেলে । বর্তমানে ভবনের অনেক অংশই জরজীর্ণ। একজন কনসালট্যান্ট ও দুইজন মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে ইনডোর ও আউটডোরের শত শত শিশুর চিকিৎসা সেবা চলে। দীর্ঘদিনের দাবি থাকা সত্ত্বেও এখানে কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের ব্যবস্থা হয়নি। গরমের সময় রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকসহ স্টাফদের। ১৯৮৬ সালে রসুলপুরে এক একর ঊনআশি শতক জমির ওপর শিশু হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন ডাঃ এম আর খান। ডাঃ এম আর খান ও তার ভাই সফিখান এই হাসপাতালের জন্য জমি দান করেন। হাসপাতাল পরিচালনার জন্য তৈরি করা হয় গঠনতন্ত্র। সমাজসেবা অধিদফতর থেকে এটি সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল হিসেবে নিবন্ধন করা হয়। নিবন্ধন নং সাত-২৪/৮৬। পদাধিকারবলে জেলা প্রশাসক পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে ডাঃ এমআর খান হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাতা হলেও হাসপাতালের সাইনবোর্ডে এমআর খানের নাম না থাকায় দাবি ওঠে নাম পরিবর্তন করে এমআর খান সাতক্ষীরা শিশু হসপাতাল নামকরণের। ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর কার্যকরি কমিটির সভায় এই নাম পরিবর্তনের বিষয়টি অনুমোদন দেয়া হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর কমিটির একজন সদস্য এমআর খান শিশু হাসপাতাল নামের সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন হাসপাতালের সামনে প্রধান সড়কের পাশে। কিছুদিনের মধ্যে একটি গাড়ির ধাক্কায় সাইনবোর্ডটি নষ্ট হয়ে যায়। এর পরে পুনরায় এমআরখান শিশু হাসপাতাল নামের সাইনবোর্ড লেখা নিয়ে দেখা দেয় বিড়ম্বনা । গঠনতন্ত্র সংশোধন আর রেজিস্ট্রেশনে নামের পরিবর্তন ছাড়া হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করা যাবে না এমন সমস্যায় এমআর খানের নামকরণের বিষয়টি ঝুলে যায়। ইতোমধ্যে গত ৪ জুলাই গঠন করা হয় নতুন আহ্বায়ক কমিটি। জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে গঠন করা ৯ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি এখন হাসপাতাল পরিচালনা করছে। কমিটির কয়েকটি সভায় এই নাম পরিবর্তনের বিষয়টি আলোচিত হলেও বার্ষিক সাধারণ সভা ছাড়া গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করা সম্ভব নয় এবং রেজিস্ট্রেশনে নাম পরিবর্তন করা যাবে না এমন সিদ্ধান্তের পর ঝুলে যায় হাসপাতালের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি। হাসপাতালের সদস্য সংখ্যা ৩ শ’৩৮ জন। এদের সকলকে নিয়েই সাধারণ সভায় গঠনতন্ত্র ও নাম পরিবর্তনের বিষয়টি অনুমোদন নিতে হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়ায় জাতীয় নির্বাচনের পরেই এজিএম-এর মাধ্যমে এই নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হতে পারে হাসপাতালের দায়িত্বশীল সূত্র এমনটি জানিয়েছে।
×