ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ডাকাত দলের সর্দার ঢাকায় দুটি বাড়ির মালিক

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২১ নভেম্বর ২০১৮

 ডাকাত দলের সর্দার ঢাকায় দুটি বাড়ির মালিক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারতীয় সিনেমা ‘বস’ দেখে একই কায়দায় পুলিশ কর্মকর্তা সেজে কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক হওয়া একটি ডাকাত চক্রের প্রধানসহ আট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারকৃতরা প্রথমে মোটা অঙ্কের টাকা বহনকারী ব্যক্তিকে টার্গেট করে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গাড়িতে তুলে। এরপর তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেয়। টাকা দিতে রাজি না হলে হত্যার চেষ্টা করে। ঢাকায় এমন আরও সাতটি চক্র কাজ করছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মঙ্গলবার পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার ধানমন্ডির নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন। তিনি জানান, গত ২৫ অক্টোবর মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান (২৮) ও তার বন্ধু পলাশ (৩০) বেলা তিনটার দিকে রাজধানীর পল্টন থেকে খিলক্ষেতের বাসায় যাওয়ার জন্য সুপ্রভাত বাসে ওঠেন। বাসটি নর্দ্দা যাওয়ার পর চার জন ডিবির জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় রাস্তায় মোটরসাইকেল রেখে ব্যারিকেড দেয়। বাসটি থামলে সঙ্গে সঙ্গে তারা বাসে ওঠেন। বাসের ভেতরে দুইজন পুলিশ সদস্য পোশাক পরিহিত অবস্থায় বসেছিলেন। তাদের ধমক দিয়ে ভুয়া পুলিশ কর্মকর্তারা বলে, ডিউটি বাদ দিয়ে কোথায় যাচ্ছ? এমন ধমকে পুলিশ সদস্যরা স্যার স্যার বলেন। এতে করে ডাকাতদের কাজটি আরও সহজ হয়ে যায়। এরপর ডাকাতরা টার্গেটকৃত মোস্তাফিজ ও তার বন্ধু পলাশ ইয়াবা ব্যবসায়ী ও ইয়াবাসেবী বলে গাড়ি থেকে নামিয়ে নেয়। তাদের হাতে ওয়্যারলেস সেট ছিল। পলাশকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে তার পকেটে থাকা ১৫ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। আর মোস্তাফিজের পকেটে থাকা ৪২ হাজার টাকা, দুইটি মোবাইল ফোন ও টাকাসহ প্রায় দেড় লাখ টাকার জিনিসপত্র নিয়ে নেয়। পলাশকে পরে ছেড়ে দেয়। আর মোস্তাফিজকে গাড়িতে তুলে। তাকে নিয়ে গুলশান, বাড্ডা, হাতিরঝিল এলাকায় ঘুরতে থাকে। বিকেল পৌনে চারটার দিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন বিএসটিআই মোড়ের ফাঁকা জায়গায় তারা দাঁড়ায়। মোস্তাফিজের কাছে থাকা ব্যাগটি নেয়ার চেষ্টা করে। তার ব্যাগে ১৩ লাখ টাকা ছিল। ব্যাগ দিতে রাজি না হলে টিম প্রধান তাকে হত্যা করতে নির্দেশ দেয়। এমন নির্দেশের পর একজন ছুরি বের করে তার গলায় ধরে। এ সময় চিৎকারে আশপাশের মানুষ ডাকাতদের ধাওয়া করে। সবাই পালিয়ে গেলেও ছুরি ধরা সেই ডাকাত জনতার হাতে ধরা পড়ে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে পুলিশ সেজে ডাকাতির এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা। [গত ১৯ নবেম্বর ঢাকার সূত্রাপুরের ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর পুলিশ পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম, জুয়েল মিঞা, হুমায়ূন কবির, এসআই ফরিদ ফোর্সসহ অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের প্রধান সহকারী পুলিশ কমিশনার পরিচয়দানকারী একেএম রানা (৩৮) ও তার সহযোগী পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী মোঃ দেলোয়ার হোসেন (৫০), মোঃ সোহাগ খন্দকার (৩১), মোঃ জাবেদ আহমেদ ওরফে বাবু (৩৭), মোঃ বুলবুল আহমেদ (৩২), মোঃ নাজমুল হোসেন (২৪), মোঃ আসাদুজ্জামান (৩৫) ও মোঃ হারুন ওরফে হিরাকে (৩২) গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে চারটি মোটরসাইকেল, ৩টি ওয়ারলেস সেট, একজোড়া হ্যান্ডকাফ, দুইটি খেলনা পিস্তল ও দুইটি ধারালো ছুরি উদ্ধার হয়। পিবিআই প্রধান জানান, ডাকাত দলের নিজস্ব সোর্স আছে। সোর্সদের লুণ্ঠিত টাকার শতকরা ৪০ শতাংশ দিত গ্রেফতারকৃতরা। ডাকাত দলের সদস্য মোঃ হারুন ওরফে হিরা ৪ মামলায় ১৪ বছর জেল খেটেছে। মোঃ জাবেদ আহমেদ ওরফে বাবু ঢাকার বংশাল থানার ৫টি মাদক মামলার আসামি। দলের নেতা রানা ভারতীয় সিনেমা ‘বস’ দেখে ভুয়া পুলিশ কর্মকর্তা সেজে দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই ডাকাতি করে আসছিল। পুরনো ঢাকায় দুইটি বাড়ির মালিক রানা। ঢাকায় এমন আরও সাতটি চক্র আছে যারা পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। চক্রগুলো হ্যান্ডকাফ ও ওয়্যারলেস সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করে বলে তথ্য দিয়েছে গ্রেফতারকৃতরা। সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের এডিশনাল ডিআইজি মোঃ সায়েদুর রহমান, এসপি আহসান হাবিব পলাশ, আসাদুজ্জামান আজাদ, আবুল কালাম আজাদ, বশির আহমেদ ও মিনা মাহমুদাসহ উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×