ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৬ নভেম্বর ২০১৮

অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন

বাংলাদেশের ফুটবল অঙ্গনে বিশেষ করে তরুণদের জন্য বোধকরি সুবাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার নেপালের কাঠমাণ্ডু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শারীরিক গঠনে অগ্রণী প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ট্রাইব্রেকারে ৩-২ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে দেশের কিশোর ফুটবল দল। মূলত এটি ছিল অনুর্ধ-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। এটি বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা। ২০১৫ সালে টুর্নামেন্টটি প্রথমবার অনুর্ধ-১৬ বছর বয়সীদের নিয়ে মাঠে গড়িয়েছিল। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী আসরে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ কিশোর দল। পরে এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন (এএফসি) অনুর্ধ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের সঙ্গে মিল রেখে ২০১৭ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতাকে নামিয়ে আনে অনুর্ধ-১৫ বয়সসীমায়। সে বিবেচনায় এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় শিরোপা। আরও যা শ্লাঘার বিষয় তা হলো, দেশের কিশোর ফুটবল দল নেপালে শুধু শিরোপাই জেতেনি, তারা ফেয়ার প্লে এ্যাওয়ার্ড অর্জনেও সক্ষম হয়েছে। সর্বোচ্চ গোলদাতার (চারটি গোল) পুরস্কারও পেয়েছে বাংলাদেশের কিশোর ফুটবলার নিহাদ জামান উচ্ছ্বাস। উল্লেখ্য, দলটি সেমিফাইনালে ভারতকেও রুখে দেয় টাইব্রেকারে। দুটো খেলাতেই অবশ্য টাইব্রেকারে বাংলাদেশের পক্ষে জয়ের নায়ক বদলি গোলরক্ষক মেহেদী হাসান। গোটা দলটির টিম স্পিরিট, দক্ষতা ও ক্রীড়ানৈপুণ্য ছিল বিস্ময়কর। এর জন্য দলটি দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে অকুণ্ঠ অভিনন্দন ও প্রশংসা পেতেই পারে। নেপালের স্টেডিয়ামেও এর প্রতিফলন ঘটেছে। জাতীয় পতাকায় গর্বিত ও শোভিত কিশোর ফুটবল দল এবং তাদের সমর্থকদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস-স্ফূর্তি ছিল লক্ষ্য করার মতো। দারুণ ছন্দে থাকা কিশোররা প্রতি খেলায় শুরু থেকেই দর্শকদের উপহার দিয়েছে আক্রমণাত্মক ফুটবল। এর আগে বাংলাদেশের কিশোর বয়সী নারী ফুটবল দলও বিদেশের মাটিতে তাদের অসাধারণ ফুটবল নৈপুণ্য প্রদর্শনে সক্ষম হয়েছে। একাধিক শিরোপাও জিতেছে। তবে অপর পিঠে খানিক বেদনা এবং অপূর্ণতাও আছে বৈকি। ২০০৩ সাল থেকে সাফ ফুটবল এক দুঃস্বপ্ন হয়ে আছে সিনিয়র দলের জন্য। গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সাফ ফুটবলে ঘরের মাঠেই বাংলাদেশ বিদায় নিয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকে। বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ টুর্নামেন্টেও আশানুরূপ ফল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশের সিনিয়র ফুটবল দল। জাতীয় দলের সেই প্রায় ধারাবাহিক ব্যর্থতা ও দুঃখ কিছুটা হলেও ভুলিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে সাফ অনুর্ধ-১৫ কিশোর দলটি। এর পাশাপাশি নারী ফুটবল দলের সাফল্য তো আছেই। অপেক্ষাকৃত তরুণ এ কিশোরদের হাত ধরেই হয়তো শুরু হবে ফুটবলের দিনবদল। সাফ অনুর্ধ-১৫ ফুটবল দলের কোচ পারভেজ নেপাল থেকে জানিয়েছেন, তারা এই শিরোপা বাংলাদেশের ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে চান। দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে, বর্তমান সরকার দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির সঙ্গে খেলাধুলা ও সংস্কৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ব্যয় বরাদ্দ করতেও কুণ্ঠিত হচ্ছে না। ইতোমধ্যে রাজধানী কেন্দ্রিক খেলাধুলা ও টুর্নামেন্টগুলো ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে বিভাগীয় ও জেলা শহরে। এর সর্বশেষ উদাহরণ সিলেটে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-জিম্বাবুইয়ে প্রথম ক্রিকেট টেস্ট। সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় ৫০টি মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম রাজধানীর বাইরে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া এবং প্রয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান। তৃণমূল পর্যায়ে থেকে যাতে ফুটবল, ক্রিকেট, এ্যাথলেটসহ খেলোয়াড়রা উঠে আসতে পারে সেজন্য নিরন্তর উৎসাহ দান, নিয়মিত টুর্নামেন্ট ও খেলাধুলার আয়োজন করা। গত কয়েক বছর ধরে ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি ও সুখ্যাতি অর্জন করলেও মূলত ফুটবল বাঙালীর প্রাণের খেলা। আর তাই ফুটবলটা শুরু করতে হবে একেবারে গোড়া থেকে।
×