ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২ নভেম্বর ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ ব্যতিক্রমী একটি প্রদর্শনীর কথা দিয়ে শুরু করা যাক। রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। পাঁচ দিনব্যাপী আয়োজনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় বৃহস্পতিবার। এদিন সেখানে গিয়ে, একদমই কথার কথা নয়, চোখ ছানাভরা! ভাস্কর্য গ্যালারির চার দেয়ালের মাঝেই বিশাল সমুদ্রকে দৃশ্যমান করেছে ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি বাংলাদেশ। এখানে সমুদ্র বলতে, গভীর সমুদ্র। বঙ্গোপসাগরের তলদেশ। অগণিত প্রাণ। জীব বৈচিত্র্য। এসব উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে থাকা প্রাণের সঙ্গে সহাবস্থানের আহ্বান জানাচ্ছে ‘ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি বাংলাদেশ।’ তবে কঠিন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বা সমুদ্র বিজ্ঞান নয়। আলোকচিত্র, প্রাণী দেহের মডেল, সংরক্ষণ করা কঙ্কাল ইত্যাদি কথা বলছে। সঙ্গত কারণেই দারুণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে প্রদর্শনী। নীল রঙের কাপড় দিয়ে এক রকম মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে দেয়াল। দেখে সমুদ্র বলেই মনে হয়। উপরের দিকে তাকালে চোখে পড়ে ডলফিন, তিমি, হাঙ্গরের মতো বিশালাকার প্রাণী। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, কচ্ছপসহ চেনা-অচেনা প্রাণীদের দেখা মেলে। মডেলগুলো যেমন মূল প্রাণীর আদলে গড়া হয়েছে, তেমনি দেয়া হয়েছে প্রকৃত আকার। আর এমনভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে যে, তলদেশে দাঁড়িয়ে সমুদ্র দেখার অনুভূতি হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া অতিথিরা, সাধারণ দর্শনার্থীরা তাই লম্বা সময় নিয়ে ঘুরে দেখেন। তবে সবচেয়ে বেশি কৌতূহলী মনে হয়েছে ছোট ছেলে মেয়েদের। কেউ কেউ তো গ্যালারিতে প্রবেশ করেই বাবা মা’র হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিচ্ছে। তারপর নিজের মতো করে দেখা। ডলফিনের দিকে আঙুল তুলে জানতে চাইছে, এটা কী? তিমির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা : এত বড় লেজ দিয়ে কী করে ও? একটা মাছের নাম করাত মাছ। কাঠ কাটার করাতের মতো লম্বা দাঁত। এ কারণেই করাত মাছ নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু করাত কী? জানতে চাইছিল এক খুদে। এভাবে দারুণ সময় কাটছে তাদের। বড়রাও অভিভূত। সমুদ্রের তলদেশের খবর সাধারণত জানার সুযোগ হয় না। প্রদর্শনী সে সুযোগ করে দিয়েছে। কৌতূহলীদের নানা জিজ্ঞাসার জবাব দিতে আশপাশেই আছেন কর্মীরা। তাদের একজন মেরিন প্রোটেকটেড এরিয়া প্রোগ্রামের ম্যানেজার মানজুরা খান। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলছিলেন, গভীর সমুদ্রে ৪৫ দিন কাটিয়ে এসেছেন তারা। এ সময় ছেলে মেয়েদের বড় একটি দল সামুদ্রিক প্রাণীদের নানা তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করে। চলে বহুবিধ গবেষণা। এসবের কিছু প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রদর্শনীর খুঁটিনাটি ঘুরে দেখান আরেক কর্মী আশিক জাহান গালিব। তিনি বলেন, সমুদ্রের বিচিত্র প্রাণীজগত সম্পর্কে এখানে একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ছবিটা কেমন, তুলে ধরা হচ্ছে। আর মূল বলাটিÑ বিচিত্র এসব প্রাণীদের বাঁচতে দিতে হবে। দুর্লভ অনেক প্রজাতি নিঃশেষ হওয়ার পথে। এদের রক্ষা করতে হবে। ‘সুস্থ সাগর, সুস্থ জনগণ’ শীর্ষক আয়োজন চলবে সোমবার পর্যন্ত। এবার জটিল প্রসঙ্গ। হ্যাঁ, রাজনীতি এখন অনেক জটিল। সমীকরণ মেলানো যায় না। এরপরও চেষ্টা করা চাই। চেষ্টার অংশ হিসেবেই বৃহস্পতিবার বহুল প্রতীক্ষিত সংলাপ অনুষ্ঠিত হলো। সরকার পক্ষে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ২৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। অন্য পক্ষটি কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্টের হয়ে বিএনপি গণফোরাম ও জাসদের নেতারা গণভবনে উপস্থিত হয়েছিলেন। তারও আগে থেকে দেশজুড়ে আলোচনা। শহর ঢাকায়ও তা-ই। সবাই সংলাপ নিয়ে মেতেছিলেন। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে অবাধ নিরপেক্ষ করার লক্ষ্য নিয়েই সংলাপের আয়োজন করা হয়। কিন্তু কতটা সফল হবে? শুনবে তো কেউ কারও কথা? নাকি ‘বিচার মানি তাল গাছ আমার?’ এমন নানা দিক নিয়ে সন্ধ্যা থেকেই আলোচনা শুরু হয়ে যায় ঢাকার অলিতে গলিতে। আর তারপর দুই পক্ষ আলাদা আলাদাভাবে সংলাপ সম্পর্কে জানায়। এবং তাতে স্পষ্ট হয় যে, সংলাপের সবে সূচনা হলো। আরও বসা হতে পারে। হোক। সংলাপের মাধ্যমেই আসবে সমাধান। আসুক। দিন শেষে শান্তিপ্রিয় মানুষের এটুকুনই চাওয়া। পরিবহন ধর্মঘটের কথাও উল্লেখ করতে হবে। ধর্মঘট তো নয় নৈরাজ্য। নৈরাজ্য বলতে এতদিন যা বোঝাতো তা-ও নয়, এর বেশি। নিজেদের জাত চেনাতে যেন উঠে পড়ে লেগেছিলেন পরিবহন শ্রমিকরা। ঢাকার রাস্তায় নেমে মাস্তানির পুরোটা দেখিয়েছেন। তাদের উশৃঙ্খল অভব্য আচরণ সবাইকে হতবাক করে দিয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে যারা ব্যক্তিগত গাড়িয়ে নিয়ে বের হয়েছিলেন তাদের হেনস্থা করা হয়েছে চরমভাবে। কারও মুখ কালি দিয়ে লেপে দেয়া হয়েছে। কাউকে কান ধরে ওঠবস করতে বাধ্য করা হয়েছে। ধর্মঘট চলাকালীন সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও শনিরআখড়ায় এ ধরনের একাধিক ঘটনা ঘটে। পরিহন শ্রমিকদের আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি যাত্রীরাও। এমনকি স্কুলের ছাত্রীদের সাদা ইউনিফর্মে মবিল ছুড়ে মারা হয়। সব দেখে যারপরনাই ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। দোষীদের শাস্তির দাবিতে এখনও জোর প্রতিবাদ চলছে। স্বপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে এসেছে আদালতও। এখন দেখার বিষয়, কতটা এদের থামানো যায়। কতটা ফেরানো যায় আইনে।
×