ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় ১৪ দলের মহাসমাবেশে নাসিম

এবার ফাউল করলে জনগণ বিএনপিকে লালকার্ড দেখাবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৪ অক্টোবর ২০১৮

এবার ফাউল করলে জনগণ বিএনপিকে লালকার্ড দেখাবে

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, আগামী নির্বাচনে না এলে ভবিষ্যতে বাটি চালান দিয়েও বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিএনপি একবার ফাউল করেছে, এবার ফাউল করবেন না। খেলা হবে নির্বাচনী মাঠে। খেলার মাঠে আসুন। এবার ফাউল করলে জনগণ আপনাদের (বিএনপি) লাল কার্ড দেখাবে। তিনি আরও বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। আমেরিকায়, ব্রিটেনে, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন কবরে চলে গেছে। তিনি শনিবার বিকেলে খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে ১৪ দল আয়োজিত মহাসমাবেশে এসব কথা বলেন। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে ১৪ দল খুলনার সমন্বয়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজানের পরিচালনায় মহাসমাবেশ মোহাম্মদ নাসিম আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যখন সফল হয় তখন চক্রান্ত শুরু হয়। নির্বাচন হবে। কোন হুমকি-ধমকি দিয়ে কাজ হবে না। আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুসারে। তিনি বলেন, নির্বাচনকে বানচাল করতে বিএনপি ভাড়াটে নেতাদের মাঠে নামিয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের জবাবে নাসিম বলেন, বিডিআর হত্যাকা-ের বিচার শেখ হাসিনার সরকার করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, ২১ আগস্ট বোমা হামলার বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেখ হাসিনার সরকারই করেছে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার করেননি। এমনকি তার স্বামী জিয়াউর রহমান হত্যার বিচারও তিনি করেননি। বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যাকারীদের দোসর হিসেবে আখ্যা দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসিম। মোহাম্মদ নাসিম খুলনাবাসীর উদ্দেশে বলেন, খুলনা বঙ্গবন্ধু স্মৃতিবিজড়িত স্থান। শেখ নাসেরের স্মৃতিবিজড়িত স্থান। সামনের নির্বাচন ’৭০ সালের নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ। ’৭০ সালের নির্বাচনের পূর্বে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তোমরা আমাকে একটি ভোট দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। তিনি কথা রেখেছিলেন। শেখ হাসিনার স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বাস্তবায়নের পথে। পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন হলে খুলনা তথা দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন হবে। মোহাম্মদ নাসিম বক্তব্যের শুরুতে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেককে নির্বাচিত করায় খুলনাবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক এসএম মোস্তফা রশিদী সুজার কথা স্মরণ করে বলেন, তিনি বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে বর্বরোচিত নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। যে কারণে অকালে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ জন্য বিএনপি সরকার দায়ী। খুলনাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে নাসিম বলেন, আপনারা বিগত সিটি নির্বাচনে যেভাবে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে তালুকদার আব্দুল খালেককে মেয়র নির্বাচিত করেছেন। ঠিক সেভাবেই একাদশ সংসদ নির্বাচনেও খুলনা প্রতিটি আসনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনে সহায়তা করবেন। তিনি বলেন, সরকার চালাতে গেলে ভুল হতে পারে। তবে আগামী নির্বাচনে ভুল করলে হবে না। ভুলের জন্য বিএনপি-জামায়াতসহ খুনী যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায় এলে দেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে, জঙ্গীর দেশে পরিণত হবে। নেতাকর্মীসহ সকলকে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যভাবে পদ্মা সেতু, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও নৌকার পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানান। মহাসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের সঙ্গে স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতিরোধ করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক মতাদর্শে বিশ্বাসী। শেখ হাসিনা শ্রমিক বান্ধব সরকার প্রধান। দেশকে শিল্প সমৃদ্ধ করে প্রতিষ্ঠা করতে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে দুটি ধরা স্পষ্ট। একটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। অন্যটি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। যার নেতৃত্বে খালেদা জিয়া। সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ড. কামাল, বি চৌধুরী। জাসদ (আম্বিয়া) সভাপতি নুরুল আম্বিয়া জনগণের উদ্দেশে বলেন, ১৪ দলের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখেন। যে ধারায় ১৪ দল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশ এক সময় উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। বাংলাদেশকে এক সময় তলাবিহীন রাষ্ট্র বলা হতো। সেই বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ওযার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, খালেদা জিয়া দেশকে জঙ্গী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ভাড়াটে নেতাদের একত্রিত করেছে। বিএনপি স্বাধীনতা বিরোধীদের মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়ে মীর জাফরের ভূমিকা রেখেছে। স্বাধীনতাবিরোধী, জঙ্গীবাদের দোসরদের নিয়ে যারা ঐক্য করেছে তারা মীর জাফরের দল। শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজাকারদের বিচার করেছেন। আগামীতে মীর জাফরদের বিচার করবেন। তিনি আগামী নির্বাচনে পুনরায় শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতায় আনার জন্য ১৪ দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান। সমাবেশে বিশেষ আতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাত হোসেন, জাসদের কার্যকরী সভাপতি রবিউল আলম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, গণতন্ত্রী পার্টির ডাঃ শাহাদাৎ হোসেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এস এম কামাল হোসেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ সভাপতি ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, ন্যাপের কেন্দ্রীয় নেতা ইসমাইল হোসেন প্রমুখ। এ ছাড়া স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে আওয়ামী লীগের এ্যাডভোকেট সুজিত কুমার অধিকারী, জাতীয় পার্টি-জেপির শফিকুল হামিদ চন্দন, ন্যাপের ফজলুর রহমান, সাম্যবাদী দলের এফএম ইকবাল প্রমুখ। খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে মহাসমাবেশ শুরুর আগে থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির মধ্যে পৌনে ৪টার দিকে সমাবেশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। এই দুযোর্গপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও মহানগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা, ওয়ার্ড ও থানা থেকে অসংখ্য মিছিল সহকারে নেতাকর্মীরা মহাসমাবেশে যোগ দেয়। একপর্যায়ে শহীদ হাদিস পার্ক ছাপিয়ে নেতা-কর্মী, সমর্থক ও শুভাকাক্সক্ষীরা পার্শ্ববর্তী রাস্তায় অবস্থান নিয়ে ১৪ দলের নেতাদের বক্তব্য শোনেন।
×