ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সম্ভাবনার কাঁকড়া শিল্প

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ৪ অক্টোবর ২০১৮

সম্ভাবনার কাঁকড়া শিল্প

বাংলাদেশের অপ্রচলিত জলজ সম্পদের মধ্যে কাঁকড়া উল্লেখযোগ্য একটি রফতানি পণ্য। দেশজ মৎস্য সম্পদের মধ্যে রফতানি বাণিজ্যে চিংড়ির পরেই কাঁকড়ার অবস্থান। এ দুটোই খাদ্য হিসেবে যথেষ্ট পরিমাণ সুস্বাদু। দেশে খাদ্য হিসেবে কাঁকড়ার প্রচলন তেমন না থাকলেও বিদেশে এর চাহিদা ব্যাপক। বাংলাদেশের মিঠাপানির চার প্রজাতি ও লোনাপানির ১২ প্রজাতির কাঁকড়া মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন বাজারে রফতানি হয়। গত অর্থবছরেও কাঁকড়া রফতানি করে বাংলাদেশ ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে। উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই শীলা কাঁকড়া পাওয়া যায়। স্বাদে অতুলনীয় ও পুষ্টিমানে ভরপুর কাঁকড়ার আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এর আহরণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। ওজনে শীলা কাঁকড়া দুই কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকলেও বিদেশী বাজারে দুই শ’ থেকে পাঁচ শ’ গ্রাম ওজনের পরিপক্ব কাঁকড়ার চাহিদা ও বাজারমূল্য বেশি। মূলত এদেশে আশির দশকে উপকূলীয় অঞ্চলে শীলা কাঁকড়ার চাষ ও মোটাতাজাকরণ শুরু হয়। চাষ ও মোটাতাজার শতভাগ কাঁকড়া প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহরণের ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বাড়ায় কাঁকড়া চাষের ব্যাপকতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘের, পুকুর ও খাঁচায় কাঁকড়ার চাষ ও মোটাতাজাকরণ উপকূলীয় এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে নরম খোলসের কাঁকড়ার চাষও করছেন। অধিক মুনাফা লাভের আশায় এর সঙ্গে জড়িতরা নির্বিচারে মা কাঁকড়ার পাশাপাশি অপরিপক্ব ছোট কাঁকড়া পাল্লা দিয়ে আহরণ করছেন। এমনিতেই বৈশ্বিক তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলীয় বিশাল অঞ্চলে কৃষিপণ্যের উৎপাদন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। একই সঙ্গে গলদা ও চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের কাঁকড়া সম্পদের প্রাপ্যতা ও জীববৈচিত্র্য ক্রমান্বয়ে হুমকির মুখে পড়ছে। এ অবস্থায় কাঁকড়া চাষকে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলভাবে বিকশিত করার জন্য কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন জরুরী। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট কৃত্রিম উপায়ে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবন করেছে। আর এই পোনা উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে সংস্থাটি লোনাপানি কেন্দ্রে আধুনিক মানের কাঁকড়া হ্যাচারি এক কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে খুলনায় পাইকগাছায় নির্মাণ করেছে। এটি নির্মিত হওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলে কাঁকড়া শিল্পের জন্য সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। বর্তমানে ‘লার্ভি’ বেঁচে থাকার হার যেখানে এক দশমিক পাঁচ, এই হ্যাচারির মাধ্যমে তা ৫ থেকে ৮ শতাংশে উন্নীত করা হবে। বাণিজ্যিকভাবে শীলা কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন কৌশল সম্প্রসারণ করা সম্ভব হলে কাঁকড়া চাষে পোনা প্রাপ্যতা সহজলভ্য হবে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক নির্ভরশীলতা কমে আসবে। দেশের নির্ধারিত এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা প্রকল্প রয়েছে। তারাও কাঁকড়া বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছে। হ্যাচারিটি চালু হলে গুণগত মান বজায় রেখে কাঁকড়া উৎপাদন সম্ভব হবে ব্যাপকভাবে। এই খাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ছাড়াও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরী।
×