ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওবায়দুল কাদের

নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবি অযৌক্তিক

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১ অক্টোবর ২০১৮

 নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবি অযৌক্তিক

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি ও তাদের সহযোগীদের ‘নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার’ দাবিকে অযৌক্তিক ও অসাংবিধানিক উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি বা এর সহযোগী ঐক্য প্রক্রিয়া বা ঐক্য ফ্রন্ট যে দাবিই করুক না কেন, সে অনুযায়ী সরকার গঠন সংবিধানসম্মত হবে না। তারা যে দাবি করছে সেটা করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তফসিল ঘোষণার আর এক মাস বাকি আছে। এই সময়ে তো সংবিধান পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। ঐক্য প্রক্রিয়া কিংবা যুক্তফ্রন্ট যাই-ই বলুন আমার বিশ্বাস সবাই আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। রবিবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তিনি বলেন, নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হয়তো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। সেদিক দিয়ে হিসেবে সময় এক মাসের চাইতে দুই-একদিন বেশি। এসময় বিএনপি ও তাদের সহযোগীদের নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবি অযৌক্তিক। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় নির্বাচনকালীন সরকারের কোন কাজ থাকবে না। তারা শুধু রুটিন মাফিক কাজ করবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। সেখানে সরকারের কোন হাত নেই। তখন সরকারের ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে। বিএনপির দরকার হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, আর নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষই আছে। সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশ তো অশান্ত নয়। তবে বিএনপি ও তার সহযোগীরা অশান্তির উস্কানি দিচ্ছে কেন? দেশে কী এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে দেশে এখন বিশেষ সরকারের প্রয়োজন পড়েছে? অক্টোবরের মাঝামাঝি অথবা শেষ সপ্তাহে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, অক্টোবরেই হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার। বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তবে তাদেরকে নির্বাচনে আনতে বিশেষ কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এটা কি আমার বাড়ির মেজবান যে আমি তাদের (বিএনপি) দাওয়াত দিয়ে আনব? এটা কি দাওয়াত করে নিয়ে আসার কোন বিষয়? নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা তো বিএনপির গণতান্ত্রিক অধিকার। সেটিকে তারা দয়ার দান ভাবছে কেন?’ সোহরাওয়ার্দীতে বিএনপির সমাবেশের অনুমতি দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমাবেশ করার জন্য না কি অনুমতি দেই না। এবার তো অনুমতি দিলাম, জনসভা করুক। লাগলে মঞ্চ তৈরি করে দিব, মাইক লাগিয়ে দিব, যত খুশি কথা বলুক। বিএনপির শাসনামলে অনুমতি আমাদেরকেও নিতে হয়েছে। এখন তো অনুমতি দেই দিনে, আমরা অনুমতি পেতাম রাত ১১টার পর। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আন্দোলন বা রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা দেখছেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের ওবায়দুল কাদের বলেন, মওদুদ সাহেব এক মাসের মধ্যে (সরকার পতন) বলছেন না, উনি ভেবেছিলেন বিশাল একটা সাগরের উত্তাল উর্মিমালা চলে আসবে রাজপথে মওদুদ সাহেবদের ক্ষমতায় বসানোর জন্য। সেই পরিবর্তন এক মাসে হবে না। বরং এই এক মাসে দেখবেন কতজন এসে নির্বাচনে অংশ নেয়। এই ঐক্য প্রক্রিয়া, এই যুক্তফ্রন্ট- আমার তো বিশ্বাস তারা সবাই নির্বাচনে আসবে। যে যেটাই বলুন, আমি কাউকে আক্রমণ করছি না। সে পথ খোলা আছে। যুক্তফ্রন্ট, ঐক্য প্রক্রিয়া কি নির্বাচনে আসবে না মনে করেন? বিএনপি না এলে তারা আসবে না? সেটা মনে করার কোন কারণ নেই। খোঁজ-খবর আমাদেরও আছে। রাজনীতির মাঠ আবার উত্তপ্ত হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, মাঠ উত্তপ্ত হবে কেন? আমরা তো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী দেই নি। আমরা দিয়েছি নিরীহ কর্মসূচী। আমাদের কর্মসূচী হছে ভোট চেয়ে লিফলেট বিতরণ। বিএনপি না এলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন যদি বিশ্ববাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য না হতো তাহলে এদেশে আইপিইউ (ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন) এবং সিপিএ’র (কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশন) বর্ণাঢ্য কনফারেন্স হলো কী করে? বিশ্বের এত এত স্পীকার, এত এত ডেপুটি স্পীকার এদেশে এসেছিল। তারা কি কোনও প্রশ্ন তুলেছিল যে এই দেশের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না কিংবা আমি এখানে কনফারেন্সে অংশ নেব না। এমন কিছু কি ঘটেছিল? এমন কিছু কি শুনেছেন? তবে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বীর কোন অভাব হবে না। নির্বাচনের আগে দলগুলোর বিভিন্ন দাবির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, দাবিনামা তো আসবেই। বিরোধী দল যা আদায় করা যায় সেটা নিয়ে দাবি করবেই। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন অসহিষ্ণুতা নেই। আমরা সরকারে আছি, আমাদের সহিষ্ণুতা দেখাতে হবে। এখন যে আন্দোলনের ছবি, সেটা থাকবে না। ওই ছবিটা হবে ইলেকশনে অংশগ্রহণের, উৎসবমুখর পরিবেশের যে দৃশ্যপট সেটাই দৃশ্যমান হবে। যুক্তফ্রন্ট আগামী নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে কি না-সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তো স্বাগত জানাব, আসুক না। ফ্যাক্টর হবে কিনা সেটা জনগণ ঠিক করবে।
×