ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানে বিপত্তি কেন

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১ অক্টোবর ২০১৮

বিমানে বিপত্তি কেন

বাংলাদেশ বিমানের অনিয়ম-অব্যবস্থা-ঘুষ-দুর্নীতি-অদক্ষতা নিয়ে এমনিতেই অভিযোগের অন্ত নেই। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বাংলাদেশ বিমান পরিচালনায় বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত চৌকস ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়েও তেমন সুফল মেলেনি। এমনকি বিদেশী পেশাদার প্রধান নির্বাহী নিয়োগেও আদৌ কোন ইতিবাচক উন্নতি হয়নি বিমানের। সংস্থাটির শক্তিশালী ইউনিয়ন ও অসাধু চক্র নিয়েও সময় সময় অভিযোগ উঠেছে বিস্তর। কথায় কথায় বিমানের চাকা বন্ধ করে দেয়ার হুমকিও আছে। সর্বোপরি আছে বছরওয়ারি ভিত্তিতে অপরিমেয় লোকসানের বোঝা। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে আপাতত বাংলাদেশ বিমানের সমালোচনার অন্যতম ইস্যু হয়ে উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর একাধিক ফ্লাইট নিয়ে নানাবিধ বিপত্তি, যা নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত ঝুঁঁকিপূর্ণ, স্পর্শকাতরও বটে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নানা কারণে নিষিদ্ধ ঘোষিত বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠীসহ প্রতিপক্ষের হামলার অন্যতম টার্গেট। অতীতে বেশ কয়েকবার তার ওপর গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠীর পরিকল্পিত হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার পেছনে এমনকি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ পর্যন্ত রয়েছে। দুঃখজনক হলো, বাংলাদেশ বিমানও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। রাষ্ট্রীয় কার্যোপলক্ষে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যতবারই বাইরে গেছেন প্রায় ততবারই প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতিসহ কোন না কোন অঘটন ধরা পড়েছে। সর্বশেষ জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদানের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটে এক নারী কেবিন ক্রুর ডোপ টেস্টে সর্বনাশা মাদক ধরা পড়ে। আরও যা অবাক ব্যাপার তা হলো, এই ঘটনা ধামাচাপা দেয়ারও চেষ্টা করা হয়। তদুপরি এবার বিদেশযাত্রার প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি কেনা ড্রিমলাইনার আকাশবীণায় যাত্রার আগ্রহ প্রকাশ করলেও তাকে জানানো হয়, এটি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। যেটি মূলত মিথ্যাচার বৈ কিছু নয়। প্রকৃতপক্ষে বিমান কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত ড্রিমলাইনারের ডকুমেন্টেশন প্রস্তুতসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করেনি। বছর দুয়েক আগে বুদাপেস্ট যাওয়ার সময় রাশিয়ার সন্নিকটে বিমানের ফ্লাইটে মারাত্মক যান্ত্রিক ত্রæটি দেখা দিলে সেটি জরুরী অবতরণে বাধ্য হয়। দেশে-বিদেশে তোলপাড় করা এই ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৌশলীসহ কয়েকজনকে গ্রেফতারসহ শাস্তি দেয়ার সুপারিশ করা হলেও বাস্তবে তেমন কিছু করা হয়নি। জঙ্গী সন্ত্রাসী ও জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বিমানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং পাইলটকে গ্রাউন্ডেড করা হলেও সেটি থমকে আছে সেখানেই। প্রশ্ন হলো, প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটেই কেন বারবার এ রকম অনিয়ম-অঘটন অপতৎপরতা, অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার ঘটনা ঘটবে? এর কি আদৌ কোন প্রতিকার নেই? সত্য বটে, প্রশাসনের স্তরে স্তরে স্বাধীনতাবিরোধী দুষ্টচক্র তথা জামায়াত-বিএনপি-জঙ্গী ইত্যাদি ঘাপটিমেরে আছে। বিমানও এর ব্যতিক্রম নয়। এদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে অবিলম্বে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর জীবন ও নিরাপত্তা নিয়ে কোন হেলাফেলা কাম্য নয়। উল্লেখ্য, বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও সুযোগ-সুবিধা সংবলিত নতুন বোয়িং, যেটি সর্বশেষ সংযুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ বিমানের বহরে। ৫ সেপ্টেম্বর ড্রিমলাইনার তথা আকাশবীণার প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুরে উড়ে যায় প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর। শ্রæতিমধুর নামটিও তারই দেয়া। প্রাথমিকভাবে ঢাকা-সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ায় যাত্রী পরিবহন করছে আকাশবীণা। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, অপেক্ষাকৃত সুদূর গন্তব্যে ড্রিমলাইনারের মাধ্যমে যাতায়াত সুগম ও সাশ্রয়ী হবে। সে অবস্থায় বাংলাদেশ বিমানের উচিত হবে নতুন করে ঢাকা-লন্ডন ফ্লাইটের পাশাপাশি ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর সর্বাত্মক চেষ্টা করা। আকাশবীণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিমানে উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়াল পনেরোটিতে। বিমানের লাভ-লোকসান নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। এর অবসান হওয়া দরকার অনতিবিলম্বে। এর পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরী ও অত্যাবশ্যক।
×