ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রয়োজন হেভিওয়েট নেতার

ছোট দলের ওপর ভর করে বিএনপি কি দাঁড়াতে পারবে?

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ছোট দলের ওপর ভর করে বিএনপি কি দাঁড়াতে পারবে?

হাসান নাসির ॥ নাজুক সময় পার করছে বিএনপি। দলটির ভোট আছে। কিন্তু হেভিওয়েট নেতা নেই। অপরদিকে ড. কামাল হোসেন এবং ডাঃ বি চৌধুরীরা বড় নেতা। কিন্তু তাদের সঙ্গে জনগণ নেই। আন্দোলন গড়তে বিএনপির নেতার প্রয়োজন। আর ড. কামালদের দরকার জনসমর্থন। উদ্ভট এই সমীকরণে বিএনপি মেনে নিল এমন নেতাদের, যারা তাদের দলের কেউ নন। দলটি এখন ঘুরে দাঁড়াতে চায় ছোট দলের বড় নেতাদের ঘাড়ে ভর দিয়ে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে দ-িত বাকপটু বিএনপি নেতা সাকা চৌধুরী একবার বলেছিলেন, ‘আগে কুকুর লেজ নাড়াত। এখন লেজ কুকুরকে নাড়ায়।’ বিএনপির অবস্থা এখন তার চেয়েও খারাপ। এখন লেজ এবং কুকুরের মধ্যে কে যে কাকে নাড়ায়, সেটা বোঝাও মুশকিল। তার চেয়ে বড় কথা, যে লেজটি এখন কুকুরকে নাড়াতে চায়, সেই লেজটি কিন্তু বিএনপির একান্ত নিজের লেজ নয়। দলটিকে এখন অন্যত্র সবল লেজের সন্ধান করতে হচ্ছে। বাংলাদেশে ভোট প্রধানত দুভাগে বিভক্ত। এক. আওয়ামী লীগ। দুই. আওয়ামী লীগের বিরোধী। আওয়ামী বিরোধী দলগুলোকে জড়ো করেই বিএনপির রাজনৈতিক জোট, যাতে রয়েছে স্বাধীনতা বিরোধীরাও। বিএনপি নিজকে দাবি করে স্বাধীনতার ঘোষকের দল। তাহলে সঙ্গে জামায়াত কেন? সাবলীল জবাব, এটা তো নির্বাচনী জোট, ২০ দল আদর্শিক জোট নয়। কিন্তু আদর্শিক জোট না হলে একসঙ্গে সরকার গঠন হয় কী করে? সুতরাং মোটা দাগেই বোঝা যায়, বিএনপি নিজেও আদর্শিক দল নয়। বিএনপির উদ্দেশ্য খুবই পরিষ্কার। তা হলো, যে কোন মূল্যে আওয়ামী লীগ সরকার হটানো। কেউ অস্বীকার করে না যে, এ দেশে আওয়ামী লীগের পর বিএনপিই সবচেয়ে বড় দল। আওয়ামী লীগ হটলে তাদেরই রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু ড. কামাল এবং বি চৌধুরীর লাভ কী? তবে কি তারাও যে কোন কৌশলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে চান? তবে তো এটাও আদর্শিক জোট বা আদর্শিক আন্দোলন নয়। এমন আদর্শহীন রাজনীতিই চলছে বাংলাদেশে। নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নার সমীকরণটা বেশ ক্লিয়ার। এই নেতা নৌকা প্রতীকে দুবার নির্বাচন করেও জিততে পারেননি। অন্তত নৌকা মার্কায় তার জেতার সম্ভাবনা কম। কারণ, তার আসন বগুড়ায়, যা বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এমপি হওয়ার জন্য বিএনপির সমর্থন পেলেই বরঞ্চ মান্নার সুবিধে। মান্নাও একজন বড় নেতা। তবে জিততে হলে তার প্রয়োজন বিএনপির জনগণ। ডাঃ বি. চৌধুরী এবং আ. স. ম. আবদুর রবদের হিসেবটাও তেমনই। দীর্ঘ রাজনৈতিক গতিপথ বলছে, তারাও এন্টি আওয়ামী লীগ। নিঃসন্দেহে বড় নেতা। কিন্তু তাদেরও জেতার জন্য দরকার আওয়ামীবিরোধী ভোট, যা রয়েছে বিএনপির সঙ্গে। ছোট দলের বড় নেতাদের ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ। কিন্তু ভোট নেই। অপরদিকে বিরাট ভোট ব্যাংক নিয়ে বিএনপির গদিতে বসবার প্রবল ইচ্ছে। কিন্তু নেতৃত্ব নেই। একদিকে নেতৃত্বের অভাব, আরেক দিকে জনসমর্থনের অভাব। ফলত দুইয়ের সমন্বয়ে উদ্ভট একটি জোট। এমন জোট শেষ অবধি অটুট থাকবার কথা নয়। অন্তত হিসাব তা বলে না। বিএনপি এতটা সঙ্কটে ইতোপূর্বে আর পড়েনি। দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান বিদেশে। শীঘ্রই তার দেশে ফেরার সম্ভাবনাও নেই। কোন দলে পরিবারতন্ত্র থাকলে সেই দলে অন্য নেতারা গৌণ হয়ে পড়েন। মূল নেতার অনুপস্থিতে বাকি নেতাদের মধ্যে একে অন্যকে টেক্কা দেয়ার প্রবণতাও থাকে। বিএনপি নেতৃত্বের মধ্যেও পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাসের সঙ্কট থাকা খুবই স্বাভাবিক। ধরেই নেয়া যায় যে, দলটি ভাল নেই। বিএনপি অনেক বড় দল হলেও দলটির অবস্থা এখন ডিরেল্ড হয়ে যাওয়া একটি ট্রেনের মতোই। দশম জতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার মাসুল দিতে হচ্ছে কড়ায় গ-ায়। প্রায় একযুগ ক্ষমতার বাইরে। বিএনপি যদি মাত্র ৪০ আসন নিয়েও জাতীয় সংসদে বিরোধী দল হিসেবে থাকত, তাহলে এ অবস্থা হতো না। বেগম খালেদা জিয়াকেও জেলে যেতে হয় না। বর্তমানে দলটি যে অবস্থায় পতিত সেখান থেকে রাতারাতি উত্তরণ ঘটবে, তেমন আশা বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও করেন না।
×