ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলার ঐতিহ্য ইলিশ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাংলার ঐতিহ্য ইলিশ

ইলিশ সমুদ্রের মাছ। সমুদ্রে সে বড় হয়। প্রাকৃতিক নিয়মে ডিম ছাড়তে সে নদীর মিষ্টি পানিতে প্রবেশ করে। ডিম, ডিম থেকে উৎপন্ন বাচ্চা লবণ সহ্য করতে পারে না। তাই মা-ইলিশ ডিম ছাড়ে মিষ্টি পানির নদীতে। সঙ্গে বাবারাও থাকে। তাদের নিঃসৃত শুক্রাণু সমৃদ্ধ শুক্ররস ডিমকে নিষিক্ত করে বাচ্চার জন্ম দেয়। বাঙালী মাত্রই ইলিশপ্রিয়। স্বাদে, ঘ্রাণে অতুলনীয় বাংলাদেশের ইলিশের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। শুধুই কি খ্যাতি, ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছে বাংলাদেশের ইলিশ। উন্মোচন হয়েছে ইলিশ মাছের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে প্রতিবছর ৫ লাখ টন ইলিশ আহরিত হয়। এর ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশই আহরিত হয় বাংলাদেশে। দেশে মোট মৎস্য উৎপাদনে এককভাবে ইলিশের অবদানই প্রায় ১১ শতাংশ। জিডিপিতে এর হিস্যা ১ শতাংশের সমপরিমাণ। শীঘ্রই বাণিজ্যিকভাবে ইলিশ রফতানি করতে চায় সরকার। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে উদ্বোধন হলো ৩ দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক ইলিশ, পর্যটন ও উন্নয়ন উৎসব ২০১৮।’ অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, বিশ্বজুড়ে পৌঁছে গেছে ইলিশের স্বাদ। ইউরোপীয় ও আমেরিকানদের কাছে এখন পছন্দের শীর্ষে মাছটি। তাই শীঘ্রই বাণিজ্যিকভাবে সরকার ইলিশ রফতানি করবে। সরকার তথা মৎস্য অধিদফতরের নেয়া নানামুখী পদক্ষেপের ফলেই ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। তবে পাশাপাশি সংশ্লিষ্টরা এও বলছেন, এটি এখনও কাক্সিক্ষত উৎপাদন নয়। তা না হওয়ার প্রধান কারণ কারেন্ট ও বেহুন্দি জাল দিয়ে জাটকা আহরণ পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারা। এ অবস্থায় ‘জাটকা ইলিশ ধরব না, দেশের ক্ষতি করব না’ প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রতিবছর পালিত হয় ইলিশ রক্ষা সপ্তাহ। এর জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেছে ৯০০ কোটি টাকার প্রকল্প। এর মাধ্যমে সারাদেশে বিশেষ করে ইলিশ আহরণের স্থানগুলোতে সরেজমিন অভিযান চালিয়ে এসব জাল পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। তাতে আগামীতে ইলিশ উৎপাদন আরও বাড়বে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। মা ইলিশ রক্ষায় প্রতিবছর ইলিশ প্রজনন মৌসুমে নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। সে অনুযায়ী আগামী ৭ অক্টোবর থেকে আবারও শুরু হচ্ছে সরকারী নিষেধাজ্ঞা। কয়েক বছর ধরেই দেশে ইলিশের উৎপাদন ৩ থেকে ৪ লাখ টনের মধ্যে ওঠানামা করছে। এর মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ৩ লাখ ৮৫ হাজার টন। তবে ইলিশের গড় উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ৩ লাখ টনের মতো। এই হিসাবে প্রচলিত বাজার মূল্যে প্রতি কেজির গড় দাম ৬৫০ টাকা ধরা হলে সাড়ে ৩ লাখ টন ইলিশের সার্বিক বাজার মূল্য দাঁড়ায় ২২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। মাছ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশ-এর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ইলিশ পাওয়া যায় বিশ্বের এমন ১১টি দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই ইলিশের উৎপাদন ক্রমাগত বাড়ছে। বাকি ১০টিতেই ইলিশের উৎপাদন কমছে। বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। ওয়ার্ল্ড ফিশ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে উৎপাদিত মোট ইলিশের ৬৫ শতাংশই বাংলাদেশের। বাদ বাকি ১৫ শতাংশ ভারত ও ১০ শতাংশ মিয়ানমার এবং বাকি ১০ শতাংশ আটলান্টিক, প্রশান্ত ও আরব সাগর তীরবর্তী দেশগুলোয় উৎপন্ন হয়। ফলে আমরা ইলিশ রফতানির উদ্যোগ নিতেই পারি। বাঙালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম একটি অপরিহার্য উপাদান হলো ইলিশ। এর প্রযতœ ও সুরক্ষার দায়িত্ব সকলের।
×