ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খেয়ালি ঋতুর কথা

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 খেয়ালি ঋতুর কথা

বাঙালীদের আলাদা গর্বই রয়েছে তার দেশের ঋতুবৈচিত্র্যের কারণে। বলতে আনন্দে বুক ভরে যায়- বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ছয়টি ঋতুর সৌন্দর্য এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্য অনুভব করা সম্ভব বলেই এই ভূ-অঞ্চলের মানুষের সৌভাগ্যে বিদেশীরা ঈর্ষান্বিত হয়। শরৎ-হেমন্তের মতো মনোরম দুটি ঋতুর পরশ থেকে প্রায় বঞ্চিত ইউরোপবাসী। এই দুটি ঋতু নিয়ে বাঙালীর আদিখ্যেতাও কম নয়। কত গান আর কবিতাই না রচিত হয়েছে এই ঋতু দুটি নিয়ে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই ঋতু দুটির কি কিছুটা চরিত্রচ্যুতি ঘটতে চলেছে! মানব মন ও দেহে কি তার বিরূপ প্রভাব পড়তে চলেছে? বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠের প্রথম পাতায়- ‘দুয়ারে হেমন্ত- তবু কমছে না গরম’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি আমাদের ভাবনাকেই যেন ভাষা দিয়েছে। সেখানে কাব্যিক ঢঙে বলা হয়েছে- ‘শরত যাই যাই করছে। ছাতিম তলায় এখনও ম-ম গন্ধ। জানান দিচ্ছে দুয়ারে হেমন্ত। তবুও গরম কমছে না। দুপুরের দাবদাহে মনে হয় এখনও গ্রীষ্মকাল।’ রাজধানী ঢাকায় সূর্য নিভে যাওয়ার পরও উত্তাপ যেন ম্রিয়মান হচ্ছে না। ঢাকার বাইরের অবস্থাও ভিন্ন নয়। ঢাকায় পঁয়ত্রিশ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে তাপমাত্রা কিছুতেই নামবে না তিরিশের নিচে- এই যেন তার পণ। শেষ রাতে গরম কিছুটা কমে স্বল্প সময়ের জন্য। তবে তা গায়ে চাদর বা কাঁথা দেয়ার মতো নয় মোটেই। যেটা কিনা শরতের শেষের স্বাভাবিক নিয়ম। সাধারণত শরতের মধ্যরাতে শিশির পড়ে। এবারও শিশির রয়েছে। তবে এই শিশিরের অবস্থা এমন যে মনে হয় এই আছে এই নেই। অবশ্য দেশের সর্ব উত্তরে পঞ্চগড়ে সন্ধ্যা রাতের পর শিশির ঝরার পালা শুরু হয়েছে। তবে এটি ব্যতিক্রম সারা দেশের বিবেচনায়। ধারণা করা হয়েছিল হিমালয় পাদদেশীয় এই অঞ্চলে শীঘ্রই হিমালয় থেকে হিমবায়ু নামবে। তা আর বইছে না। বলা হচ্ছে শীতল বায়ু এবার দেরিতে বইবে। তার অর্থ শীতও দেরিতে এসে দ্রুত চলে যাবে। গত মৌসুমেও তাই হয়েছিল। শীতের সময়কাল ছিল কম। এবার হয়তো শীত আরও কম সময় থাকবে। হেমন্ত এসে পড়ল বলে, আর অবধারিতভাবেই মানুষের মনে উঁকি দেবে নবান্নের ছবি। যদিও এবার হেমন্তের মধ্যভাগে নবান্নের পালায় সূর্যের তাপ কতটা থাকবে তা নিয়ে কৃষককুল চিন্তিত। প্রকৃতির আচরণ দিন দিন বদলে যাচ্ছে। প্রকৃতিতে আবহাওয়ার খামখেয়ালি আচরণ মোটামুটি স্পষ্ট। ক্রমেই বৈচিত্র্যহীন হয়ে পড়ছে ষড়ঋতু। গ্রীষ্মকাল ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। বর্ষাকাল তার সময় থেকে সরে যাচ্ছে। যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা, তখন হচ্ছে না। আষাঢ় মাস বৃষ্টিহীন থাকলেও ভাদ্র-আশ্বিনে গিয়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। শরৎ আসছে দেরি করে। শরতের আগের সেই বৈশিষ্ট্যের দেখা মিলছে না। শরৎ এলেও কাশফুল-শিউলি ফুল তেমন চোখে পড়ে না। হেমন্ত হারিয়ে যাচ্ছে। বসন্তও হারিয়ে যাচ্ছে। আর শীতকালের ব্যাপ্তি কমে আসছে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ‘হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে,/ হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে/ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো- ‘দীপালিকায় জ্বালাও আলো,/জ্বালাও আলো, আপন আলো, সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে।’ কবির লেখায় হেমন্তর রূপশোভা ধরা পড়েছে সুন্দরভাবে। আমাদের প্রত্যাশা, ঘুচে যাক ঋতুর খামখেয়ালিপনা। হেমন্ত আসুক তার চিরচেনা রূপ নিয়ে, আর গ্রীষ্মতাড়িত এই নিরুত্তাপ সময়কে তুড়ি মেরে উড়িয়ে নবান্নের মতো নব আনন্দে জেগে উঠুক মানুষের মন, জীবনযাপন।
×