বিডিনিউজ ॥ অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে পদ্মার বহুরূপী ভাঙ্গনে বাংলাদেশের ২৫৬ বর্গমাইল ভূমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ২০১৮ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) আর্থ অবজারভেটরির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক দশক ধরে আঁকাবাঁকা ও মুচড়ানো পথে পদ্মা বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। প্রতিটি আঁকাবাঁকা গতি ও মোড় বড় বন্যা বা কাছাকাছি বাঁধ খুলে দেয়ার মতো কোন ঘটনার কথা বলে।
আর এসব ঘটনা নদী তীরের তীব্র ভাঙ্গনের সঙ্গে সঙ্গে ঘরবাড়ি, জমাজমি এমনকি মানুষকে ভাসমান করে দেয়। এভাবে প্রতিবছর ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ১৯৬৭ সাল থেকে ৬৬ হাজার হেক্টর বা ২৫৬ বর্গমাইলের বেশি (প্রায় শিকাগোর সমান) এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ১৯৮৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে নাসার স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিগুলোতে পদ্মার গঠন, আকৃতি ও অবস্থানের পরিবর্তন দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইটের ছবিতে পদ্মা নদীর প্রস্থ, গভীরতা, গঠন ও আকারের পার্থক্য থেকে ভাঙ্গনের পরিমাপ করেন। নাসার ল্যান্ডস্যাট স্যাটেলাইট থেকে ধারণকৃত ছবিগুলো শুষ্ক মৌসুমে জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি মাসে তোলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত তিন দশক ধরে পদ্মা নদী তুলনামূলকভাবে সংকীর্ণ, সোজাসুজি অবস্থান থকে আঁকাবাঁকা হয়ে চুলের গুচ্ছের মতো বিভক্ত ধারায় গতিপথ পরিবর্তন করেছে। সম্প্রতি আবার সোজা পথে প্রবাহিত হয়েছে।
স্যাটেলাইটের ছবিতে দেখা যায়, পদ্মার বহুরূপী গতির কারণে সবচেয়ে লক্ষণীয় পরিবর্তন হয়েছে হরিরামপুর উপজেলার অঞ্চলের নিকটবর্তী এলাকাগুলোতে। এই এলাকায় নদীর তীরে ভাঙ্গনের কারণে পদ্মা ব্যাপক প্রশস্ত হয়েছে। ছবি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন যে, ১৮৬০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই এলাকায় পদ্মার বাম তীর ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ১২ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থান করছে। এর ফলে সেখানে আঁকবাঁকা বাঁক তৈরি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাধারণভাবে নদীর বাঁকের বাইরের দিকটায় সবচেয়ে বড় ভাঙ্গন হয়েছে। যেখানে কতগুলো প্রক্রিয়া ভ‚মিক্ষয়কে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। এগুলো হলো- নদীর প্রবাহে পরিবর্তন, জমাট মাটির নিচের দিকে ধাবিত হওয়া এবং নদী ও ভ‚মির সঙ্গমস্থলে গাছপালা ধুয়ে নিয়ে যাওয়া। পদ্মার মধ্যবর্তী অংশে তুলমনামূলক কম ভাঙ্গন হয়েছে। বন্যার প্রবাহের তীব্রতা ও তীরের ধরনের সঙ্গে ভাঙ্গনের হারের পরিবর্তন দেখা যায়। ১৯৯৮ সালে ভারতে ফারাক্কা বাঁধ উদ্বোধনের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বন্যা এসব তীর ভাসিয়ে নিয়ে যায়। পদ্মার রয়েছে বিস্তৃত বালিভ‚মি, যা সহজেই ক্ষয়যোগ্য। ১৯৯৮-৯৯ সাল থেকে ভাঙ্গনের হার প্রতিবছর ১২ বর্গমাইলে পৌঁছে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। আরও নিম্নগামী প্রবাহ ও বক্রগতির চর জানাজাতের কাছে জায়গা-জমি ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকে নদীর রেখাচিত্র তীব্রভাবে বেঁকে যায়। বক্ররেখাটি ১৯৯২ সাল থেকে বিকশিত হতে শুরু করে, ২০০২ সালে পতন শুরু হয় এবং এরপর থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: