ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদিতে লাখ লাখ বাংলাদেশী কর্মী বেকার

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সৌদিতে লাখ লাখ বাংলাদেশী কর্মী বেকার

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদিতে ১২ ধরনের কাজ থেকে বাংলাদেশী কর্মীদের নিষিদ্ধ করার এক সপ্তাহের মধ্যে দেশটিতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। যদি কোন কর্মীকে ওই ১২ ধরনের কাজে দেখতে পাচ্ছে- তাহলে তাদের সেখান থেকে তুলে নেয়া হচ্ছে। এখন আর দেশটিতে লুকিয়ে কাজ করতেও পারছেন না লাখ লাখ বাংলাদেশী কর্মী। তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। হাজার হাজার কর্মী দেশটিতে নিম্নমানের কাজ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু এত বিপুলসংখ্যক কর্মী ছোট কাজও পাচ্ছেন না। তারা জমানো অর্থ খরচ করে জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় বহু কর্মী ‘আউট পাস’ সংগ্রহও করে রেখেছেন। তারা সেখানে কাজ না পেলে দেশে ফিরে আসবেন। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য চিঠি পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ ওই চিঠির এখন পর্যন্ত কোন জবাব দেয়নি। সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরবে প্রবাসী কর্মীদের কাজের ক্ষেত্র ছোট করে দেয়ায় দেশটিতে লাখ লাখ বাংলাদেশী কর্মী বেকার হয়ে পড়েছেন। দেশটিতে প্রবাসী কর্মীদের ১২ ধরনের কাজের ওপর নিষেধজ্ঞা জারি করেছে সৌদি সরকার। সম্প্রতি সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয় এই নিষেধজ্ঞা বাস্তবায়ন করেছে। সৌদি নাগরিকদের কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতেই প্রবাসী কর্মীদের ১২ ধরনের কাজ থেকে বিরত রাখা হচ্ছে। ব্যবসা বাণিজ্য ও দোকানপাট থেকে তাদের চাকরি চলে গেছে। ইতোমধ্যে সৌদিতে ব্যবসা বাণিজ্য থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের অনেক সংকুচিত করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশী কর্মীরা মনে করছেন, তাদের অনেককেই কাজ হারিয়েছে। বর্তমানে হাজার হাজার কর্মী ১২ ধরনের কাজের বাইরে নতুন করে কাজ খুঁজছেন। দেশটিতে ১২ ধরনের কাজের বাইরে যেসব কাজ রয়েছে তা ‘অডজব’। অডজবে দক্ষ কর্মীরা যেতে চাইছে না। তারা যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ না পেলে তাদের দেশে ফেরা ছাড়া আর কিছু করার নেই। ইতোমধ্যে সৌদিতে ব্যবসা বাণিজ্য থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের অনেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। বাংলাদেশী কর্মীরা মনে করছেন, তাদের অনেককেই কাজ হারাতে হতে পারেন। বর্তমানে হাজার হাজার কর্মী ১২ ধরনের কাজের বাইরে নতুন করে কাজ খুঁজছেন। সৌদি থেকে কয়েকজন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী টেলিফোনে জানিয়েছেন, তারা আগে ছোট ছোট ব্যবসা করে ভালই ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে সৌদি কর্তৃপক্ষ ১২ ধরনের কাজ থেকে বাংলাদেশী কর্মীদের সরিয়ে নিয়েছে। ওই সব জায়গায় সৌদি নাগরিকরা কাজ করবেন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এমন অবস্থায় হাজার হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে শূন্য হাতে দেশে ফিরতে হবে। যারা দোকানে চাকরি করতেন তাদেরও চাকরি চলে গেছে। দেশটিতে বৈধ অবৈধ প্রায় ২৬ লাখ বাংলাদেশী কাজ করছেন। কর্মীদের অবৈধ না করলেও এ সব কাজ থেকে তাদের সরিয়ে সৌদিদের বসানো শুরু হয়েছে। ১২ ধরনের কাজ এখন সৌদিরাই করবে। যে ১২ ধরনের কাজ বাংলাদেশীদের জন্য বন্ধ করা হয়েছে তা হলো, নারী-পুরুষ, শিশুদের রেডিমেট সব কাপড়ের দোকান, ক্রোকারিজ সামগ্রীর দোকান, গাড়ির শোরুম, গাড়ির পার্টসের দোকান, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির দোকান, হাসপাতাল, যন্ত্রপাতির দোকান, চকোলেট বা মিষ্টান্নের দোকান, গৃহ নির্মাণ সামগ্রীর দোকান, চশমার দোকান, ঘড়ির দোকান, কার্পেট পাপোষের ও ফার্নিচারের দোকানে লাখ লাখ বাংলাদেশীর চাকরি চলে গেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলেছে, সৌদি আরব গত কয়েক বছর ধরেই তাদের বাজেট ঘাটতিতে চলছে। বিদেশী কর্মীদের কয়েক ধরেনের কাজ থেকে সরিয়ে তাদের নাগরিকদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। বেকার সমস্য দূর করার জন্যই তারা মূলত এমন উদ্যোগ নিয়েছে। এতে বাংলাদেশের শ্রম বাজারে কোন প্রভাব পড়বে না। কারণ দেশটিতে নানা ধরনের কাজ রয়েছে। ওই সব কাজে বাংলাদেশ থেকে তাদের বিপুল সংখ্যক কর্মী প্রতি বছরই নিতে হবে। উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৬৫ দেশে বাংলাদেশী কর্মী পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে সর্বাধিক পরিমাণ কর্মী গেছে। এসব দেশ থেকেই সর্বাধিক পরিমাণ রেমিটেন্স আসছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশে নারী কর্মী প্রেরণ করা হচ্ছে। সৌদি আরবেই সর্বাধিক পরিমাণ নারী কর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন। তবে গৃহকর্মী ও গার্মেন্টস কর্মীর বাইরেও সেলসম্যান, কেয়ার গিভার, বেবি সিটারসহ অন্যান্য পেশাতেও নারী কর্মীরা আগ্রহ নিয়েই কাজ করছেন।
×