ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার আইনজীবী ও বিএনপি নেতাদের দিনভর দৌড়ঝাঁপ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 খালেদার আইনজীবী ও বিএনপি নেতাদের দিনভর দৌড়ঝাঁপ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছে বিএনপি। এ জন্য তাঁর সুচিকিৎসার দাবিতে দিনভর দলীয় নেতা ও আইনজীবীরা দৌড়ঝাঁপ করেছেন। বিএনপি নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড অথবা এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকারী হাসপাতালেই চিকিৎসা নিতে হবে খালেদা জিয়াকে। এদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সঙ্গে তার খাস কামরায় দেখা করে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা জানিয়ে একটি আবেদন করেন। এছাড়া বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন তাঁর আইনজীবীরা। কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন গুরুতর অসুস্থ জানিয়ে তাঁকে রাজধানীর ইউনাইটেড অথবা এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। রবিবার বিকেলে বিএনপির সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করে এ দাবি জানান। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের জানিয়েছেন, জেল কোড অনুযায়ী সরকারী হাসপাতালেই চিকিৎসা নিতে হবে খালেদা জিয়াকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছি। তিনি আমাদের কথা শুনেছেন। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি সরকারের সিদ্ধান্ত পরে জানাবেন বলে জানিয়েছেন। তারা আবারও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর পছন্দের হাসপাতালে সুচিকিৎসা দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের কথা দিয়েছেন, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন। আপনাদের নেত্রীর পছন্দের হাসপাতাল কোনটি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের নেত্রীর পছন্দের হাসপাতাল ইউনাইটেড। এ বৈঠকে অন্য কোন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ অন্য কোন ইস্যু নিয়ে আসিনি। আজ শুধু বিএনপি চেয়ারপার্সনের চিকিৎসার বিষয়ে দাবি জানাতে এসেছি। ফখরুল বলেন, কারাগারে খালেদা জিয়ার কোন চিকিৎসা হচ্ছে না। তাই আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন তার স্বাস্থ্য নিয়ে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে সাজানো মামলায় শাস্তি দিয়ে কারাগারে বেআইনীভাবে আটক রেখে হত্যা করার হীনপ্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। আমরা অবিলম্বে তার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি। বিএনপি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ফখরুল সাহেবের নেতৃত্বে বিএনপির সাত সদস্যের একটা টিম আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তাদের বক্তব্যে বলেছেন তাদের নেত্রী কারাবন্দী খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস রোগে আক্রান্ত। এজন্য তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। তারা আগের মতোই তাদের নেত্রীর পছন্দের হাসপাতাল হিসেবে ইউনাইটেড হাসপাতালের নাম বলেছেন। তবে এবার তারা ইউনাইটেড ছাড়াও এ্যাপোলো হাসপাতালের নামও বলেছেন। তবে আমরা তাদের জানিয়েছি, এ ব্যাপারে জেল কোড অনুযায়ী যা যা করা সম্ভব তা করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেল কোড অনুযায়ী সরকারী হাসপাতালেই চিকিৎসা নিতে হবে খালেদা জিয়াকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের সরকারী হাসপাতালেই উন্নত চিকিৎসা হয়। একজন রোগীর চিকিৎসা দিতে যে ধরনের সুবিধাগুলো দরকার তার সবই সরকারী হাসপাতালে আছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে যে দাবি জানানো হয়েছে তার প্রয়োজনীয়তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর অসুস্থতা গুরুতর কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, কারাগারে খালেদা জিয়ার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে। সচিব ও আইজি প্রিজনকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানাবেন তাকে আসলে কোন হাসপাতালে ভর্তি করানো দরকার, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি চিকিৎসকরা বলেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সরকারী হাসপাতালে নেই তাহলে বিকল্প চিন্তা করা হবে। বিকেল ৩টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠক চলে প্রায় এক ঘণ্টা। এ সময় মির্জা ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খান। বিশেষায়িত হাসপাতালে খালেদার চিকিৎসা চেয়ে রিট ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। এতে খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা দেয়ার জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, কারা মহাপরিদর্শক, ঢাকা জেলা প্রশাসক ও জেলা সিভিল সার্জনসহ ৬ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। রবিবার খালেদা জিয়ার পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট করা হয় বলে জানান আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, রিট আবেদনে কারা কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিচারের জন্য বিশেষ আদালত স্থাপন সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বকশীবাজার এলাকার সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা ও পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠ এলাকাটি জনাকীর্ণ থাকে। সে জন্য নিরাপত্তার কারণে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষকে বিশেষ জজ আদালত-৫ হিসেবে ঘোষণা করা হলো। খালেদার অসুস্থতার কথা জানিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে আইনজীবীদের আবেদন ॥ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচার কাজ পরিচালনার জন্য হঠাৎ করে আইন বহির্ভূতভাবে আদালত স্থানান্তর করা হয়েছে অভিযোগ করে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। রবিবার প্রধান বিচারপতির সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সঙ্গে তার খাস কামরায় দেখা করে এই হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। এসময় আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভাল না উল্লেখ করে লিখিত আবেদনে বলেছেন, তিনি গুরুতর অসুস্থ, তিনি হাঁটতে পারেন না। যা সরকারও স্বীকার করেছে। তবুও সরকার তার যথাযথ চিকিৎসার বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়নি। প্রধান বিচারপতিকে আইনজীবীরা আরও জানান, পরিত্যক্ত কারাগারে কোন বিচার কাজ চলতে পারে না। যদি চলে- তা হবে অবৈধ। দেশের কারাগারের তালিকা থেকে পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটি এখনও বাদ দেয়া হয়নি- সে কারণে সুপ্রীমকোর্টের অনুমতি ছাড়া পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে আদালত স্থাপন অবৈধ ও আইন বহির্ভূত। আবেদনে প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে আরও বলা হয়েছে, আমরা আপনার কাছে অনুরোধ করছি, যারা বিচারিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে এবং যে বিচারিক কর্মকর্তা তার বিচারিক সীমালঙ্ঘন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্ট বাংলদেশ (হাইকোর্ট বিভাগ) ১৯৭৩ বিধি অনুযায়ী তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার সাক্ষাত শেষে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের কাছে বলেন, হঠাৎ করে রাতের বেলা নিয়ম ও আইন বহির্ভূতভাবে জেলখানার একটি কক্ষকে অস্থায়ী আদালত বানানো হয়েছে। যাতে আইন অনুযায়ী সুপ্রীমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে নেয়ার বিধান থাকলেও সেটি করা হয়নি। বিষয়টি আমারা প্রধান বিচারপতিকে জানিয়েছি। তিনি ধৈর্যের সঙ্গে বিষয়টি শুনেছেন। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। দুপুর ১টা ২০ মিনিট থেকে ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাতকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এজে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, মীর নাছির, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল প্রমুখ। উনারা আইন জানেন না- আইনমন্ত্রী ॥ ‘আইন বহির্ভূতভাবে কারা অভ্যন্তরে আদালত স্থাপন করা হয়েছে’- খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, উনারা যদি এরকম কথা বলে থাকেন তাহলে আমি বলব, উনারা আইন জানেন না। রবিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সঙ্গে সুপ্রীমকোর্টে তার খাস কামরায় সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। বেলা সোয়া ২টা থেকে ৩টা ১০ মিনিট পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদের সঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের আরও বলেন, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ঈদের পর সৌজন্য সাক্ষাত করতে এসেছিলাম। পারিবারিক নানা কারণে ঈদের পর দেখা করতে পারিনি। তার বক্তব্যের একপর্যায়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাত করে বেআইনীভাবে কারাগারে আদালত স্থাপন করা হয়েছে বলে এই বিষয়ে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কোন আলোচনা হয়েছে কি? জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে আমি জানি না। আমি যে বিষয়ে জানি না সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করব না। এ বিষয়ে অবগত হওয়ার পরে আমি নিশ্চয়ই মন্তব্য করব। সুপ্রীমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শ না করে কারাগারে আদালত স্থাপন করায় আইনের লঙ্ঘন হয়েছে বলে দাবি করছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা- এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমি মনে করি যে, উনারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা) যদি এরকম কথা বলে থাকেন তাহলে আমি বলব, উনারা আইন জানেন না। খালেদা জিয়ার কিছু হলে দায় সরকারকে নিতে হবে- ড. মোশাররফ ॥ কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে মন্তব্য করে অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। রবিবার দুপুরে মহিলাদলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ দাবি জানান। তিনি বলেন, সুচিকিৎসার অভাবে খালেদা জিয়ার কিছু হলে এর দায় সরকারকে নিতে হবে। ড. মোশাররফ বলেন, মুক্ত খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবে। সেই নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। আর সেই নির্বাচন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে হবে। তিনি বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে, আমাদেরকে আদালতের কাঠগড়ায় রেখে এবং বিএনপি ও ২০ দলকে বাইরে রেখে নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ এ সরকারকে এমন নির্বাচন করতে দেবে না। সারাদেশে নতুন করে গণগ্রেফতার শুরু হয়েছে অভিযোগ করে ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমাদের কোন আন্দোলন কর্মসূচী নেই এবং রাজপথে কোন কর্মী নাই। তারপরও এখন কেন গণগ্রেফতার চলছে? তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তাকে সুচিকিৎসা দিতে আমাদের সুযোগ দেয়া হোক। তাকে আমরা বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা করাব। সরকারকে উদ্দেশ্য করে ড. মোশাররফ বলেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা করে সুস্থ করে তার বিচার করুন। এতে আমাদের কোন আপত্তি নাই। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আমরা আদায় করব। যতই ষড়যন্ত্র সরকার পার পাবে না। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন মদলের সভাপআফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সিযুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরীন খান প্রমুখ। খালেদার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে আজ বিএনপির মানববন্ধন ॥ খালেদার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে আজ সোমবার বিএনপির মানববন্ধন। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। রিজভী জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিসার দাবি এবং কারাগারে বিচারের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক ঘণ্টা মানববন্ধনের অনুমতি পেয়েছি। মানববন্ধনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের এ কর্মসূচী সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। কারাগারে জিয়ার জীবন হুমকির মুখে- রিজভী ॥ কারাগারে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জীবন হুমকির মুখে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রবিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে কোন চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে বলেন, অবিলম্বে ইউনাইটেড বা অন্য কোন বেসরকারী বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে সরকারের টালবাহানার পরিণতি ভাল হবে না। খালেদা জিয়াকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, শনিবারও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও কারা কর্তৃপক্ষ একই সুরে বলেছেন খালেদা জিয়া ততটা অসুস্থ নন। তারা বলেছেন খালেদা জিয়া আগে যেসব রোগে ভুগতেন এখন সেসব রোগেই ভুগছেন। তারা খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে তাচ্ছিল্য করে তার জীবনকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, যা চরম অমানবিকতারই এক নিষ্ঠুর বহির্প্রকাশ। রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক, মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসক এবং সবশেষে আইনজীবীরা তাঁকে বাঁচানোর জন্য অবিলম্বে ইউনাইটেড হাসপাতাল অথবা বেসরকারী কোন বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু এখনও সরকার ও কারা কর্র্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বিএনপির মুখপাত্র রিজভী বলেন, খালেদা জিয়া কিছু খেতে পারছেন না। তিনি অভুক্ত থেকেছেন দিনের পর দিন। বিনা চিকিৎসায় ভোগানোর জন্য তাকে কারাবন্দী রেখেছে সরকার। ‘কারাবন্দী খালেদা জিয়ার ভাগ্য আদালতের ওপর নির্ভরশীল নয়, তা নির্ভর করে শেখ হাসিনার ওপর’। রিজভী অভিযোগ করেন এ সরকার গণবিচ্ছিন্ন হতে হতে জনগণের কাছ থেকে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে তাই একমাত্র পুলিশই আওয়ামী লীগ সরকারের লোকাল গার্ডিয়ানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের শাসনভার একচেটিয়াভাবে ধরে রাখার জন্য ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই এ সরকার গুম, হত্যা, বিনা বিচারে আটক ও ক্রসফায়ার চালিয়ে যাচ্ছে। রিজভী বলেন, এ সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়েই দেশের নিয়ন্ত্রণ মজবুত রাখতে চাচ্ছেন। দেশজুড়ে চলছে এখন গায়েবী মামলার ছড়াছড়ি। মৃত ব্যক্তিকেও এখন ককটেল ছুড়ে মারতে দেখছে পুলিশ। তিনি বলেন, এ বছর পবিত্র হজ পালনের জন্য কদমতলী থানা বিএনপি নেতা আসলাম মোল্লা, ফারুক হোসেন ও আব্দুল হাই মক্কা নগরীতে অবস্থান করলেও রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করতে সম্প্রতি তাদেরও মামলার আসামি করা হয়েছে। কোরবানির ঈদের পর থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে এক লাখের ওপর মামলা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরে আরা সাফা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।
×