ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তারা কি যোগ্য বিরোধিতাকারী!

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 তারা কি যোগ্য বিরোধিতাকারী!

অল্প কিছুদিন হলো প্রায় নামসর্বস্ব কয়েকটি রাজনৈতিক দল, যে দলগুলোর নেতৃবৃন্দ একদা অন্য রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলেন- তারা নানাভাবে তাদের উপস্থিতি জানান দেয়ার চেষ্টা করছেন। এরা মাঝে মধ্যে কোন কোন অনুষ্ঠানে ব্যক্তি শূন্য চেয়ারের সামনে বাগাড়ম্বরের চেষ্টা করেন। কিন্তু দৃশ্য মাধ্যমের ব্যাপক প্রসারের কারণে এ সকল অনুষ্ঠানের গোমর ফাঁস হতে বেশি সময়ের দরকার হয় না। এদের সকলের পরিচয় যদি একবাক্যে বিন্যাসের চেষ্টা করা হয় তাহলে তা খুব কঠিন মনে হবে না। কারণ, সকলের চরিত্রের কাঠামো প্রায় একই, শুধু বয়সের ভিন্নতা ব্যতীত। একজন বয়স্ক ডাক্তার সাহেবের সঙ্গে অন্য আরেকজন ডক্টর সাহেব মিলিয়ে যে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছেন এবং অনন্য সাধারণ ইশতেহার ঘোষণা করেছেন তাতে সরকারী দল অর্থাৎ আওয়ামী লীগের বিরোধিতা ছাড়া আর কিছুই নেই। কায়দা করে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে প্রকারান্তরে প্রধানমন্ত্রীর বিরোধিতা করেছেন। তাদের সকল এজেন্ডার লক্ষ্যস্থল যেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত সরকারের গৃহীত ও পরিকল্পিত সিদ্ধান্তসমূহের বিরোধিতা করা। কিন্তু তারাও জানেন যে, এতে কোন লাভ হবে না। আর্জেস গ্রেনেড আর গুলির সামনে যিনি বেঁচে এসেছেন তিনি বাংলার জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির কা-ারি, তিনি জননেত্রী। তাঁর ভালোবাসার টানে দোলে বাংলার কোটি প্রাণ। তাঁর স্বপ্নপূরণের সঙ্গে বাঙালীর স্বপ্ন জড়িত। কিন্তু, যাঁরা বিরোধিতা করতে এসেছেন তাঁদের কি আছে? আমরা সাধারণত নেতার প্রতি জনগণের ভালবাসা বা জনগণের প্রতি নেতার দায়বোধ, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা কিংবা জনতার প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যারোমিটার দেখে নেতার যোগ্যতা বিবেচনা করে থাকি। এ সকল বিষয় বিবেচনায় যুক্তফ্রন্টের নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের তৃতীয় সারির নেতৃত্বের চেয়েও নিচে। আরও সহজ করে বললে ‘আদার বনে শিয়ালই বাঘ’ আর কি? কারণ, যে সকল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সংসদীয় রাজনীতিতে নির্বাচন করে জামানত পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হয়েছে তাদের আর কোন কথাই বলা উচিত না। কিন্তু তাদের সেই বোধ নেই। তারা স্বাভাবিক বোধগম্যতা হারিয়েছেন ক্ষমতার মসনদের লোভে। একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান দুই নেতা এতিমের অর্থ চুরির দায়ে অভিযুক্ত সেই দলের সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে। কিন্তু একবারও কি ভেবেছেন যেÑ কার বিরুদ্ধে কথা বলছেন? একজন তো (হয়তো!) ভাবছেন, ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জাতির পিতার কন্যাদের পক্ষে না দাঁড়িয়ে যেমন সমূহ বিপদের দিক ধাবিত করেছিলেন আবারও তেমনি করতে পারবেন। কিন্তু মনে রাখবেন, ইতহাস কথা বলে। এখন দুর্দান্ত গতির গণমাধ্যমের কারণে বিষয়টি আরও সহজ। বর্তমানের যে বাংলাদেশ তার জনগণ খুব ভাল করেই জানে যে, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ আর শেখ হাসিনা মানেই উন্নতি ও প্রগতি। কী আছে তাদের ওই প্যান্ডোরার বাক্সেÑ যা দিয়ে জনগণের মনে বিরোধিতার বীজ বুনতে চান। নাকি কাউকে কথা দিয়েছেন যে, যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের ক্ষতি করার। তাদের মনে রাখা উচিত , আত্মীয়-স্বজন ও টাকা-পয়সা দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সফল হননি। দেশের মানুষ সকলেই সচেতন, কোন এককালে একজন আইন ভাল বুঝত বলে এখন আর কেউ বুঝবে না এমন তো নয়। কিংবা চিকিৎসাশাস্ত্রের লেখাপড়া দিয়ে রাজনীতির চিকিৎসা করবেন তা-ও হয় না। একটি রাজনৈতিক দল মনোনীত রাষ্ট্রপতি হয়ে যখন নিজের ছেলেকেই রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি তখন আর কাকে প্রতিষ্ঠার চেয়ারে বসাবেন। একদা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন আর পরবর্তীতে রাজাকারের পাশের চেয়ারে বসে হেসেছেন- সে দৃশ্য জাতির প্রত্যক্ষ। তাঁদের কাজ হলো শেখ হাসিনার বিরোধিতা করা। তাঁরা আওয়ামী লীগ ছাড়া আগেও যে সরকার ছিল তাদেরও যে কিছু সমালোচনার ছিল তা মনে করতে পারেন না। অবশ্য বয়স বেশি হলে স্মৃতি তো বিগড়াবেই। কার বিরোধিতা এবং কেন করছেন তা কি তারা জানেন? এই বিরোধিতার ফল কারা ভোগ করবেন তা কি তারা জানেন? তারা প্রকারান্তরে যুক্তফ্রন্টের ইশতেহারের মাধ্যমে এতিমের টাকা চোর, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মদদ দাতার মুক্তি চেয়েছেন। ধিক তাদের চাতুর্যের। তাদের ভেবে দেখা উচিত, কার এবং কিসের বিরোধিতা আপনারা করছেন? তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, আসুন ধান্দাবাজ বিরোধিতাকারী হিসেবে নিজেকে তুলে না ধরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিত্রিত একজন নিন্দুক হই। আর তাতেই হোক দেশ ও জাতির মঙ্গল-কল্যাণ। লেখক : শিক্ষাবিদ
×