ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গৃহায়ন প্রকল্পে চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

গৃহায়ন প্রকল্পে চাঁদাবাজি

বর্তমান সরকার সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে যে যুগান্তকারী প্রকল্প গ্রহণ করেছে তাতে হতদরিদ্রের প্রতিদিনের জীবনযাত্রা যুগোপযোগী করা এবং আবশ্যিক প্রয়োজন মেটাতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখছে। মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসার মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়গুলো বিবেচনায় এনে জনগণের দ্বারে পৌঁছে দিতে সরকারী মহৎ উদ্যোগগুলো আজ নজরকাড়ার মতো। দৈনন্দিন প্রয়োজন খাদ্য প্রতিটি মানুষের সবচাইতে বড় চাহিদা। সিংহভাগ জনগোষ্ঠীকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে সরকার সে গুরুদায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় বাসস্থান মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় বিশিষ্ট উপাদান। মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের সন্ধানে দেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠী আশ্বাস আর প্রত্যাশায় দিনযাপন করছে। সরকারের সচেতন দৃষ্টি সেখানেও নিবদ্ধ রয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে আশ্রয়ণের উদ্যোগ নিয়ে সরকার জনগণের অন্যতম মৌলিক দাবির প্রতি বিশেষ সমর্থন জানাচ্ছে। গ্রামে-গঞ্জে বিভিন্ন হতদরিদ্র স্থানে এই ধরনের আশ্রয়ণ প্রকল্প সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে এখন জনগণের দরজায় অপেক্ষমাণ। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী চক্র কর্তৃপক্ষের এই বৃহৎ ও মহৎ কর্মযজ্ঞকে অর্থ আদায়ের এক সংকীর্ণ ও অসৎ উদ্দেশ্যে পরিণত করে সংশ্লিষ্টদের হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক ধরনের হীন চক্রান্তকারী গোষ্ঠী নিজেদের অর্থলিপ্সাকে অবদমন করতে না পেরে জনগণের কাছ থেকে টাকা আদায়ের যে কোন ফন্দি-ফিকিরে লিপ্ত হতে দ্বিধা করে না। ফলে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত মহতী পরিকল্পনাগুলো যেমন আলোর মুখ দেখতে বিলম্ব করে, পাশাপাশি যাদের উদ্দেশে এই মহাকর্মযোগ তাদেরও বঞ্চনার শিকার হতে সময় লাগে না। গৃহায়ন প্রকল্পে সরকার টাকা বরাদ্দ করলেও আসলে ঘর তৈরি করে দেয়া হয়। নগদ টাকা হাতে আসে না। কিন্তু নিরক্ষর হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী অজ্ঞানতার কারণে নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর কোন ধারণা ব্যতিরেকে সুযোগ সন্ধানী ও অর্থলিপ্সু মানুষের খপ্পরে পড়ে। তেমনই একটি অভিযোগ উঠে এসেছে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে গৃহনির্মাণকে কেন্দ্র করে। ৩টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০০টি পরিবারের পক্ষে নালিশ জানানো হয় সরকারী কিছু প্রতিনিধি নগদ টাকা প্রদানের কথা বলে তাদের প্রতিজনের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা আত্মসাত করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে ১ লাখ দেয়া হবে, তবে তার জন্য কয়েক হাজার টাকা খরচ করতে হবে। এভাবে অনেক পরিবারের কাছ থেকে নগদ অর্থ নেয়া হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে সংশ্লিষ্টরা প্রত্যক্ষ করে টাকার কোন হদিস না মিললেও কিছু মানুষের আঙিনায় গৃহ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে জানা যায় সরকারের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় গৃহনির্মাণের কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়। যার জমি আছে অথচ ঘর নেই তার জন্যই এই ধরনের উদ্যোগ। এখানে টাকা দেয়া কিংবা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। অনেক মানুষের নতুন ঘরের চাইতে বেশি প্রয়োজন পড়ে নগদ টাকার। মানুষ তো আর খোলা আকাশের নিচে নেই। সবারই যে কোনভাবে একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়ে যায়। সুতরাং টাকা হাতে পেলে পুরনো বাড়ি মেরামত করে বাকি অর্থ নিয়ে অন্য কিছু সামলানো সম্ভব হয়। আর সেই কারণে কোন কিছু না ভেবে টাকা পাওয়ার আকাক্সক্ষায় প্রভাবশালীদের খপ্পরে পড়তে দেরি হয় না এসব সহজ-সরল মানুষের। পুঠিয়া উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের জন্য ৩০৪টি গৃহনির্মাণের টাকা বরাদ্দ করেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ঘরের জন্য প্রদত্ত এই টাকার বিনিময়ে দুস্থ জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসনও অবহিত হয়েছে। এই ব্যাপারে তারা যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলেছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কতখানি ফলপ্রসূ হবে কিংবা আদৌ অভিযুক্তরা শনাক্ত হবে কিনা তা এখন দেখার বিষয়। বঞ্চনার শিকার যারা আসলে তারা কি তাদের টাকা ফেরত পাবেÑ এই প্রশ্নের জবাব কতখানি যৌক্তিক তা সময়ই বলে দেবে।
×