ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা

নদীমাতৃক একটি দেশে নদী শাসন ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনাকে কেন্দ্র করে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রয়োজন অস্বীকার করার নয়। আর টেকসই ও যথার্থ উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার গুরুত্ব রয়েছে। রবিবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের সুখবর দিয়েছেন দেশবাসীকে। গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘জোট-মহাজোট ও নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে কী চমক থাকছে’, এমন প্রশ্নের উত্তর দানকালে এই পরিকল্পনার বিষয়টি উঠে আসে। আগামী ১০০ বছরের জন্য ডেল্টা প্ল্যান বা ব-দ্বীপ পরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নদী ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং ভূমি উদ্ধার এই তিন বিষয় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় তৈরি এ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে গঠন করা হবে ডেল্টা তহবিল। এই তহবিলের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে বাংলাদেশ সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, পরিবেশ ও জলবায়ু সম্পর্কিত তহবিল বিশেষ করে গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) এবং সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বকে (পিপিপি) বিবেচনা করা হয়েছে। পানিসম্পদ, ভূমি, কৃষি, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ভূ-প্রতিবেশ খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে। সমন্বিত উন্নয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়নের সম্ভাব্য বাধা চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রধানত পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীবাহিত পলিমাটি দ্বারা গঠিত বৃহৎ ব-দ্বীপ। এই ব-দ্বীপ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। নদীশাসিত এ দেশের ভূমিরূপ, ভৌগোলিক অবস্থান, পানিসম্পদ, ভূপ্রতিবেশ প্রভৃতি অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। নদী ও তার প্লাবনভূমি এদেশের শতকরা ৮০ ভাগ এলাকার মানুষের জীবন, জীবিকা ও অর্থনীতির নিয়ামক শক্তি। তবে বাংলাদেশের জন্য পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ বটে। কারণ একদিকে বর্ষাকালে প্রচুর পানি ও পলি নদীগুলো দিয়ে বঙ্গোপসাগরে ধাবিত হয় এবং অসংখ্য চরের সৃষ্টি করে। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যায় না। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন : খরা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, নদীভাঙন আমাদের নিত্যসঙ্গী। এর সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতো রয়েছেই। বরং এটিই ভবিষ্যতের জন্য কঠিন এক বাস্তবতা হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পানি ব্যবস্থাপনা, খাদ্য নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করার চ্যালেঞ্জ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এজন্যই কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, মৎস্য, শিল্প, বনায়ন, পানি ব্যবস্থাপনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, স্যানিটেশনসহ সকল খাতকে বিবেচনায় রেখে সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ একান্ত জরুরী। এ পরিকল্পনায় অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে দেশের উন্নয়ন প্রাধিকারগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ পরিকল্পনা তৈরি করাই হবে সমীচীন। যে কোন দীর্ঘমেয়াদী মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সুশাসন এবং সহায়ক কার্যকরী প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ এ বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের প্রতিনিধিত্ব এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। তাই আশা করা যায় দারিদ্র্য দূর করার মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া তথা উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে এই ব-দ্বীপ পরিকল্পনাটি অদূর ভবিষ্যতে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সমর্থ হবে।
×