ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক নিরাপত্তায় স্কাউটস

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সড়ক নিরাপত্তায় স্কাউটস

‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীদের সফল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের বিষয়টিকে প্রাধিকার দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে সড়ক নিরাপত্তা উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছে ২০ দফা নির্দেশনা। ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং তিন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনজন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন এসব বিষয় নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য। এবার সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতায় নামানো হচ্ছে প্রায় ১৭ লাখ স্কাউটস ও গাইডস সদস্যকে। গোটা সেপ্টেম্বর মাস চলবে এই কার্যক্রম। এতে যুক্ত করা হচ্ছে শিক্ষকসমাজ এবং অভিভাবকদেরও। তাদের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোসহ বাস্তবায়ন করা হবে ২৪টি কার্যক্রম। এর জন্য ইতোমধ্যে ট্রাফিক বিভাগের সরবরাহকৃত ‘গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইন’ এবং স্কাউটস সদস্যদের প্রণীত ‘নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে আমাদের দায়িত্ব’ শীর্ষক লিফলেটও প্রস্তুত করা হয়েছে, যা দেশব্যাপী মানুষের দ্বারে দ্বারে বিতরণ করা হবে। মালটিমিডিয়ার মাধ্যমে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের শেখানো হবে ট্রাফিকের নিয়মকানুন। উল্লেখ্য, ট্রাফিক সপ্তাহ চলাকালীন রাজধানীতে রাস্তায় সর্বসাধারণকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রমে এক হাজার ৭৫০ জন রোভার স্কাউটস সদস্য অংশগ্রহণ করে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই আরও ব্যাপকভাবে ট্রাফিক নিরাপত্তা ও সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক অবহিতকরণ কার্যক্রমের সম্প্রসারণ। সার্বিক বিবেচনায় বলতেই হয় যে, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়াতে এটি একটি অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। অবশ্য নিরাপত্তার খাতিরে দেশের মহাসড়কগুলোতে স্কাউটস ও গাইড সদস্যদের মোতায়েন করা সমীচীন হবে না। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষই ট্রাফিক আইন মানে নাÑ এক সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত ডিএমপি কমিশনারের এই বক্তব্যটি সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সেই সঙ্গে তিনি হতাশাও ব্যক্ত করেছেন এই বলে যে, সেক্ষেত্রে ৯০ শতাংশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য অসম্ভব কাজ। সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সহায়তাকারী হিসেবে নামানো হয়েছিল স্কাউটস ও গাইড সদস্যদের। তাদের পক্ষ থেকেও পথচারী বা যানবাহন চালকÑ প্রায় সবারই আইনকানুন না মানার প্রবল প্রবণতার কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, বেপরোয়া বাসের চাপায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানী ও আশপাশের লাখো শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে এসে বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে। সর্বস্তরের মানুষ এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এই আন্দোলনের সারবত্তা ও যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে তাতে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায়। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্যক উপলদ্ধি করে মন্ত্রিসভায় জরুরী বৈঠক ডেকে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর অনুমোদন দেন। তবে দুঃখজনক হলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, পরিস্থিতির উন্নতি তো দূরের কথা ন্যূনতম শৃঙ্খলা নেই কোথাও। বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে রীতিমতো হতাশা প্রকাশ করে ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, ঈদ-উল-আজহার পর ট্রাফিক পুলিশের অভিযান আরও জোরালো ও বেগবান করা হবে। নেয়া হবে ট্রাফিক ব্যবস্থা যথাযথ ও টেকসই করার, যাতে পরিবহন খাতসহ শৃঙ্খলা ফিরে আসে সড়ক-মহাসড়গুলোতে। এর পাশাপাশি দূর করতে হবে দীর্ঘদিন থেকে পরিবহন খাতে বিরাজমান অরাজকতা ও নৈরাজ্য। স্কাউটসের মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
×