ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ৮ কর্মকর্তাকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৯ আগস্ট ২০১৮

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ৮ কর্মকর্তাকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে দুর্নীতির মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশনের (পেট্রোবাংলা) ৮ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার সকালে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের উপ-পরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সামছুল আলম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তারা হলেন- পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) আবু তাহের মোঃ নুরুজ্জামান চৌধুরী, উপ-মহাব্যবস্থাপক এ কে এম খালেদুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপক (মেইনটেনেন্স এ্যান্ড অপারেশন) মোরশেদুজ্জামান, উপ-ব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট) হাবিবুর রহমান, উপ-ব্যবস্থাপক (মাইন ডেভেলপমেন্ট) জাহেদুর রহমান, উপ-ব্যবস্থাপক (ভেন্টিলেশন ম্যানেজমেন্ট) সত্যেন্দ্র নাথ বর্মণ, ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) সৈয়দ ইমাম হাসান এবং উপ-মহাব্যবস্থাপক (মাইন প্ল্যানিং অপারেশন) জোবায়ের আলী। এই আটজনের সবাই বড় পুকুরিয়ার কয়লা চুরির মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। এর আগেও গত ১৬ আগস্ট পেট্রোবাংলার সাত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা হলেন উপ-মহাব্যবস্থাপক (মেইনটেন্যান্স এ্যান্ড কন্ট্রাক্ট ম্যানেজমেন্ট) মোঃ নাজমুল হক, ব্যবস্থাপক (কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্ট) মোঃ শোয়েবুর রহমান, ব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট) মোঃ সাইদ মাসুদ, উপ-ব্যবস্থাপক (মেইনটেন্যান্স এ্যান্ড অপারেশন) মোঃ মাহাবুব হোসেন, সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট) মোঃ মনিরুজ্জামান; সহকারী ব্যবস্থাপক (কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্ট) মোঃ মাহাবুব রশিদ ও ব্যবস্থাপক (স্টোর) মোঃ দিদারুল কবির। গত ১৩ আগস্ট পেট্রোবাংলার ৩২ জনকে তলব করে চিঠি দেয় দুদক। তাদের মধ্যে দুই দফায় ১৫ জন দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হলেন। বাকিদের আজ বুধবার এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার তলব করা আছে। কয়লা দুর্নীতির ঘটনায় গত ২৪ জুলাই দিনাজপুরের পার্বতীপুর মডেল থানায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ১৯ জনকে আসামি করে দুর্নীতি দমন আইনে মামলা করেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান। পরে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান দুদকের উপ-পরিচালক মোঃ সামছুল আলম। এর আগে চলতি বছরের জুলাইয়ে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলন করে রাখা ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েব হয়ে যায়। বর্তমান বাজার মূল্যে এই কয়লার দাম ২২৭ কোটি টাকার ওপরে। মামলার এজাহারে বলা হয়, খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদ, কোম্পানি সচিব ও মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আবুল কাশেম প্রধানিয়া, মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নূর-উজ-জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) একেএম খালেদুল ইসলামসহ খনির ব্যবস্থাপনায় জড়িত অপর আসামিরা ওই কয়লা চুরির ঘটনায় জড়িত। অন্য যাদের আসামি করা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই ব্যবস্থাপক, উপ-ব্যবস্থাপক ও সহকারী ব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তা। কয়লা উধাওয়ের ঘটনায় গত ২৩ জুলাই তদন্ত কমিটি গঠন করে দুদক। কমিটিকে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার কথা বলা হয়েছে। তাপবিদ্যুত কেন্দ্র ফের বন্ধ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা পার্বতীপুর থেকে জানান, বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মে.ও তাপবিদ্যুত কেন্দ্র ২০ আগস্ট চালু হয়েছিল। চালুর ৯ দিনের মাথায় মঙ্গলবার যেকোন মুহূর্তে বন্ধ হবে বলে কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে। সূত্র মতে, উত্তর জনপদের সাধারণ মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ উদযাপনের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সাময়িকভাবে এই পাওয়ার প্লান্টটি চালু করা হয়। প্লান্টের প্রধান প্রকৌশলী আ. হাকিম সরকার মঙ্গলবার দুপুরে জানান, পাশর্^বর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ভূ-গর্ভের টানেল থেকে সংগৃহীত ৬ হাজার মে. টন কয়লা দিয়ে ২ নম্বর ইউনিটটি এতদিন ধরে চালানো হয়। কয়লা শেষ হওয়ায় আর চালানো যাচ্ছে না। দিনের ১২ ঘণ্টার মধ্যে যেকোন সময় পাওয়ার প্লান্টের চুল্লি নিভে যাবে। এত দিন প্রতিদিন গড়ে উৎপাদিত ৫০ থেকে ৬০ মে.ও বিদ্যুত জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত করা হয়। তিনি দাবি করেন, এতে সামগ্রিকভাবে এলাকায় বিদ্যুতের ভোল্টেজের উন্নতি হয়েছিল। জানা গেছে পাওয়ার প্লান্টের তিনটির মধ্যে শেষ মুহূর্তে তিন নম্বর ইউনিটটি চালু ছিল। এতে গড়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ছিল ১৫০ মে.ও। এই ইউনিটটি কয়লার অভাবে চলতি সালের ২২ জুন বন্ধ হয়ে যায়। আশঙ্কা করা হয়েছিল এই পাওয়ার প্লান্টটি বন্ধ হয়ে গেলে উত্তর জনপদ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। চরম ভোগান্তি দেখা দিবে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে। তবে বাস্তবে তা হয়নি। কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয়ায় লোডশেডিং কিছুটা হলেও বিদ্যুতের বড় ধরনের বিপর্যয় চোখে পড়েনি। উত্তর জনপদ দিব্যি চলেছে জাতীয় গ্রীডের সরবরাহকৃত বিদ্যুত দিয়ে।
×