ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বিনোদনের সেরা স্পট নির্মল বাতাসে নৌকা ভ্রমণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৮ আগস্ট ২০১৮

বিনোদনের সেরা স্পট নির্মল বাতাসে নৌকা ভ্রমণ

মামুন-অর-রশিদ ॥ আষাঢ়-শ্রাবণ পেরিয়ে ভাদ্রে এসে যৌবনে ফিরেছে পদ্মা নদী। শরতের প্রকৃতিতে এখনো কাশ ফুলের দেখা না মিললেও দেখা মিলেছে ঢেউয়ের। ফুলে ফেঁপে উঠে এখন আসল চেহারায় দেখা দিয়েছে পদ্মা। রাজশাহীর পদ্মায় কতদিন আগে ঢেউয়ের নাচন ছিল তা প্রায় ভুলতেই বসেছিল নদীপারের মানুষ। তবে এবার স্বরূপে ফিরে এসেছে এ নদী। এ যেন যৌবনা প্রমত্তা পদ্মা। শরতের শুভ্র মেঘ আর সূর্যের লুকোচুরিতে স্রোতস্বিনী পদ্মা এবার দেখা দিয়েছে নিজস্ব রূপে। দীর্ঘদিন পর পদ্মার বুকে এখন পালতোলা আর ইঞ্জিন চালিত নৌকার চলাচলে মুগ্ধ করা দৃশ্য চোখে পড়ে। যেন প্রাণ পেয়েছে দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকা পদ্মাপারের জেলে আর মাঝিরা। আষাঢ়-শ্রাবণে কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত না হলেও উজান থেকে ধেয়ে আসা স্রোত আর ঢেউ যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে কবি নজরুলের সেই বিখ্যাত গানের সুর, পদ্মার ঢেউ রে...। কবির সেই গানে কণ্ঠ মিলিয়ে এখন পুলকিত পদ্মা পারের মানুষ। পদ্মা নদী দীর্ঘদিন পর আসল চেহারায় ফিরে আসায় একদিকে যেমন মানুষ পুলকিত নিগাঢ় নিস্বর্গের রূপে অন্যদিকে ঠিক তেমনই হাহাকার সর্বনাশী রূপে। পানি বৃদ্ধির কারণে যেমন এ কূলে (শহর অংশে) ফিরে এসেছে চির যৌবনার উচ্ছ্বাস, ঠিক তেমনই সর্বনাশী রূপ নেয়ায় হাহাকার নেমে এসেছে ওপারে (চরাঞ্চলে)। একই পদ্মা দুই রূপে। একদিকে উচ্ছ্বাস, অপরদিকে নদী ভাঙ্গা মানুষের মধ্যে দীর্ঘশ্বাস। রাজশাহীর পদ্মায় এপারের মানুষের মধ্যে নিস্বর্গ রূপে নেচে উঠেছে মন। সকাল দুপুর সন্ধ্যায় পদ্মার রূপ দেখতে মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন নদীপারের বোলনপুর ঘাট থেকে পঞ্চবটি পর্যন্ত ১০ কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে। টাইলসের কারুকাজ করা নদী পাড় ঘিরে এখন বেড়েছে মানুষের আনাগোনা। পদ্মা পারের বাসিন্দারা জানান, এবার শরতে এসে পদ্মা অনেকটাই আসল চেহারায় ফিরেছে। নৌকা চলছে স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, মাঝিরা চরম ব্যস্ত যাত্রী পারাপার নিয়ে। জেলেরাও মাছ ধরে জীবিকার উৎস খুঁজে পেয়েছে। নদীর স্রোতের কলকলানি শব্দ মনেও দোলা দিয়েছে। পদ্মাপাড়ে গিয়ে দেখা যায় সর্বত্র কোলাহল। পদ্মার যৌবনা রূপ দেখতে সব বয়সী মানুষের জটলা। কেউ কেউ নৌকা ভ্রমণে যাচ্ছেন পরিবার পরিজন, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ¯্রােতস্বি^নী পদ্মার রূপ দেখতে। ছলাৎ ছলাৎ শব্দে নৌকা চলছে যেন পাল্লা দিয়ে। মাঝিরাও আনন্দিত পদ্মায় পানি পেয়ে। স্থানীয়রা জানান, বছর ঘুরে আবারও যৌবনা হয়ে উঠেছে মরা পদ্মা। চঞ্চলা আর দূরন্ত হয়ে ছুটে চলছে উথাল-পাথাল ঢেউ। দিনে নদীর টলমল পানির মাঝে ছোট ছোট ঢেউ। তার ওপর নেচে বেড়াচ্ছে সূর্যের আলো। রাতের জোছনায় থৈ থৈ নদীর চারপাশ- বহুদিন পর ফিরে এসেছে উত্তাল রূপে পদ্মানদী। নদীর কূল ঘেঁষে গড়ে ওঠা উত্তরের শহর রাজশাহীর সব সৌন্দর্য যেন সেখানেই। বছরের অধিকাংশ সময়ই বুকে বালুচর নিয়ে জেগে থাকে পদ্মা। বছরে একবার হলেও প্রাণ ফিরে পায় এক সময়ের যৌবনা এই নদী। এখন পদ্মা দেখা দিয়েছে যৌবনা হয়ে। নদীতে পানির প্রবাহ বাড়ায় মাঝিদের ব্যস্ততাও বেড়ে গেছে। এখন ভরা বর্ষায় পদ্মায় নৌকা ভাসছে। সকাল থেকে বিকেল বিনোদন প্রেমীরা ভিড় করছেন নদীর ঘাটে। দল বেঁধে ঘণ্টা চুক্তিতে নৌভ্রমণে বেরিয়ে পড়ছেন। এরইমধ্যে শরতের হাওয়ায় দুলছে পদ্মার ঢেউ। নগরীর বড়কুঠি ঘাটে বেড়াতে আসা রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষাথী সুমাইয়া আক্তার, গোলাম ফারুকী, রাজশাহী কলেজের ছাত্রী সারমি, সামশুন্নাহার বলেন, কেবল এ সময়টাতেই পদ্মায় পানি থাকে। অন্য সময় চর। তবে চরে বেড়ানোর চেয়ে নৌকা ভ্রমণের আনন্দ বেশি। তাই নির্মল বাতাসে নদীর বুকে নৌকায় বেড়ানোর জন্য তারা মাঝে মাঝেই দলবেঁধে আসেন পদ্মায়। রুহুল আমিন নামে মাঝবয়সী এক মাঝি বলেন, নৌকার ভাড়া পেয়ে তার মতো মৌসুমি মাঝিরা এখন খুশি। সকাল আর বিকেল এই দুই সময়ে বেশি ভাড়া পাওয়া যায়। কেউ ঘণ্টা চুক্তিতে আবার কেউ জনপ্রতি ভাড়া দিয়ে নৌভ্রমণ করেন। এখানে কোন ভাড়া নির্দিষ্ট নেই। যার কাছে যেমন পাওয়া যায়। তবে সাধারণত দেড় থেকে ২শ’ টাকা ঘণ্টার চুক্তি পেলেই তারা খুশি। এর কম-বেশিও হয় বলেন তিনি। মহানগরীর পদ্মাতীরবর্তী ফুদকিপাড়া এলাকার আমিনুল সরকার জানান, কেবল বর্ষায় মৌসুমি জেলেরা পদ্মায় মাছ ধরেন। কিন্তু বর্ষা মৌসুমের প্রথম দিকে পানি না থাকায় তারা হতাশ হন। এবার শ্রাবণের শেষে এসে নদীতে পানি আসায় তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। রাজশাহীর সবকিছুই যেন এখন পদ্মা নদী ঘিরে। গ্রীষ্ম, শীত, বর্ষা কিংবা শরত সব ঋতুতেই সব সময় পদ্মানদীকে ঘিরেই মানুষের আনাগোনা। গ্রীষ্মে শুকিয়ে কাঠ হওয়া পদ্মা আর বর্ষায় টইটম্বুর সব সময় মানুষকে কাছে টানে। নিয়ে যায় এর নৈস্বর্গিকতায়। কারণ পদ্মার পাড় ঘিরেই রাজশাহীবাসীর বিনোদনের সেরা ঠিকানা। সকাল নেই, দুপুর নেই, সব সময় পদ্মাকে ঘিরে নতুন প্রাণচাঞ্চল্যে মুখরিত পদ্মার পাড়। পদ্মার ধার ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াকওয়ে। উন্নতমানের এ সড়ক দিয়ে সহজেই বিনোদন পিপাসুরা হেঁটে হেঁটে পদ্মার অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে পারেন। রাজশাহীতে হাতেগোনা কয়েকটি বিনোদন স্পট থাকায় মানুষের পছন্দের তালিকায় সবার ওপরেই থাকে পদ্মার পাড়। ছোট-বড় সবার কাছে সমান পছন্দ এ পদ্মার পাড়। নদীর পাড়ে এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন ভ্রমণ পিপাসুরা আর তাদের মুগ্ধ করছে যৌবনা পদ্মা।
×