ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাফিক সপ্তাহ

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৭ আগস্ট ২০১৮

ট্রাফিক সপ্তাহ

অবশেষে টনক নড়েছে কর্তৃপক্ষের। স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর তারা সচেষ্ট হয়েছেন কার্যক্রম জোরালো করার জন্য। সড়ক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য দেশজুড়ে পালন করা হচ্ছে ট্রাফিক সপ্তাহ। গত রবিবার থেকে শুরু হয়েছে এই সপ্তাহ পালন। পুলিশ সদস্যরা স্কাউট-গার্ল গাইডসদের নিয়ে যানবাহনের বৈধতা, মেয়াদ, ফিটনেস, চালকের লাইসেন্স যাচাই-বাছাই করবেন। ট্রাফিক আইন মানার সংস্কৃতি এমনিতে নগরবাসীর কম। পথচারীরাও উপেক্ষা করেন। যানবাহনের ক্ষেত্রেও নিয়ম না মানার সংস্কৃতি প্রবল। তাছাড়া ট্রাফিক সিগন্যাল বাতিগুলো সচল না থাকায় বিড়ম্বনা বাড়ছে। যানজটের দুর্ভোগে ক্লান্ত যাত্রী। এমনিতে দেশের ট্রাফিক চলাচল পরিস্থিতি বেশ নাজুক। আইন নিয়ে চালকদের যেমন সচেতনতা নেই, তেমনি সেই আইন প্রয়োগে ট্রাফিক পুলিশেরও নেই যথাযথ অংশগ্রহণ। আইন সঠিকভাবে অনুসরণ না করার কারণে প্রায়শই নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাণ হারাচ্ছে যাত্রী, পথচারী। অপরিসর সড়ক-মহাসড়ক, সড়কের তুলনায় যানবাহনের অধিক সংখ্যাÑ এসব কারণে রাস্তাঘাটে চলাচল অনিরাপদ হয়ে উঠছে। অথচ ট্রাফিক আইন অমান্য করাই নিরাপত্তাহীনতা ও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। ধরা যাক গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার না করার জন্য সরকার ২০০৭ সালের ১২ জুলাই মোটরযান আইনের ১১৫(বি) ধারার সংশোধন করে নতুন আইনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। নিয়ম ভঙ্গকারীকে সর্বোচ্চ পাঁচশ’ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়। অন্যদিকে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৭ অনুযায়ী গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে এক মাসের কারাদ- ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু এই আইন কতটুকু জানেন চালকরা। সে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আর জানলেও কেউ তা মানে না। দেখা গেছে, সকল যানবাহনের চালকই ইচ্ছে মতো চলন্ত অবস্থায় যানবাহনে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন। যাত্রীদের আপত্তিও ধোপে টেকে না। কিন্তু গাড়ি চালনাকালে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী চালককে পুলিশ দ- দিয়েছে এমন শোনা যায় না। এদিকে দুর্ঘটনা ঠিকই ঘটছে। রাজধানীর লাল-সবুজ ট্রাফিক আলো অকারণেই জ্বলে কিংবা নেভে। যার কোন কার্যকারিতা নেই। যানবাহনের চাপ থাকলে ট্রাফিক পুলিশ হাত নির্দেশ করে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করেন। ট্রাফিক আইন কতটুকু অনুসৃত হচ্ছে, তা দিয়ে একটি জাতির চরিত্র পরিমাপ করা হয়ে থাকে। সে বিবেচনায় জাতি হিসেবে আমরা বিশৃঙ্খল ও স্বার্থপর, তা প্রমাণিত হচ্ছে। স্বাধীনতার আটচল্লিশ বছরেও একটি সুশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা যায়নি। ‘সাইন-সিম্বল’ ঠিকমতো স্থাপন করা যায়নি। জনমনে ট্রাফিক আইন মান্য করার প্রবণতা গড়ে ওঠেনি। ওভারব্রিজ থাকার পরও পথচারীরা তা ব্যবহার করে না। বরং রাস্তা পারাপারে ব্যস্ত সড়ক ব্যবহার করে। অব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছিল। তাদের বিষয়গুলো চিন্তা করে কর্তৃপক্ষ ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করতে যাচ্ছে। অতীতের মতো দায়সারাভাবে সপ্তাহ পালন নয়, এবার ট্রাফিক আইনকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্স ছাড়া ড্রাইভিং, নবায়ন না করা। হেলপার কর্তৃক ড্রাইভিং এবং ট্রাফিক আইনের কোন ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্টোপথে যাওয়া এবং প্রভাবশালীদের আইন না মানার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ট্রাফিক আইন মানার সংস্কৃতি যে চালু করা উচিত, তা কোমলমতি শিক্ষার্থীরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। বিশৃঙ্খলা নয়, শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে এই অব্যবস্থা থেকে উত্তরণ আজ জরুরী। একই সঙ্গে ফিরিয়ে আনতে হবে সড়কে শৃঙ্খলা। ট্রাফিক সপ্তাহ পালন সফল হবে- এই প্রত্যাশা।
×