ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোরবানির পশু

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২ আগস্ট ২০১৮

কোরবানির পশু

ভিনদেশী গবাদিপশুর মুখাপেক্ষী হয়ে আর থাকতে হবে না বাংলাদেশের। দেশী গরু-ছাগল দিয়েই এবার কোরবানি হবে। কোরবানি সামনে রেখে প্রতিবছর গুরু নিয়ে যে সঙ্কট তৈরি হয়ে থাকে, চলতি বছর আর সে আশঙ্কা থাকছে না। বরং চাহিদা অনুযায়ী গরুর যোগান থাকবে বাজারে। বলা যায়, গবাদি পশুর ক্ষেত্রে দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। যেমন স্বয়ংসম্পূর্ণ শাক-সবজি, হাঁস-মুরগি, চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যদির ক্ষেত্রে। প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি বা চোরাই পথে গরু আনার ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা পোহাতে হতো, ঘটত জীবননাশের ঘটনা, ঝুঁকির মুখে থাকতে হতো সেসব আজ ধূসর যেন। ভারত থেকে গুরু আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দেশী খামারিরা অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে গবাদিপশুর কোন সঙ্কটই আর নেই দেশী বাজারে। উৎপাদন হার বাড়তে থাকলে এক সময় বাংলাদেশ মাংস রফতানিকারক দেশে পরিণত হতে পারে। গত কয়েক বছর ধরে আমদানিনির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে প্রাণিসম্পদ খাতে নীতিগত সহায়তা প্রদান করে আসছে। খামারিরা গবাদি পশু উৎপাদনে সক্রিয় হয়ে উঠছে। পাচ্ছে ব্যাপক উৎসাহ, একই সঙ্গে গরু ও খাসির মাংসের ন্যায্যমূল্যও নিশ্চিত করা হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার উৎপাদন বাড়ায় কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। রফতানিতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা চামড়াখাতও ক্রমশ অগ্রসরমান। পশুপালনে সহজ শর্তে ঋণসহ নীতিগত সহায়তা পাওয়ায় এখানে উদ্যোক্তার সংখ্যাও বাড়ছে। দেশে ২৮ লাখ পরিবার সরাসরি গবাদি পালনের সঙ্গে জড়িত। পাশাপাশি ৬৫ হাজার গরুর খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এখন গরু উৎপাদন হচ্ছে। পাশাপাশি প্রান্তিক কৃষক পর্যায়েও অবাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিপুলসংখ্যক গরু ও ছাগল উৎপাদন হচ্ছে। ফলে এই খাতে বাড়ছে উৎপাদনের পরিমাণ। এতে করে ভারত, মিয়ানমার ও নেপাল থেকে গরু আমদানির প্রবণতা একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। চোরাই পথে গরু আনার প্রচেষ্টাও পরিলক্ষিত হয় না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে গরু আনতে গিয়ে অনেকেরই ঘটেছে প্রাণহানি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ২৩৯ লাখ ৩৫ হাজার গুরু উৎপাদন হয়েছে। আর সর্বশেষ গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ২৪০ লাখ ৩৫ হাজার গরু। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এক লাখ গরু বেশি উৎপাদন হয়েছে। এক লাখ গরু বেশি উৎপাদন হয়েছে। একইভাবে বেড়েছে ভেড়া, মহিষ ও ছাগলের উৎপাদন। গত বছর যে পরিমাণ পশু জবাই হয়েছিল এবার তার চেয়ে ১২ লাখ বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে। সুতরাং কোরবানিতে পশুর সঙ্কট না হওয়ারই কথা। আর পশু কেনাবেচার ক্ষেত্রে দামের উর্ধগতি ঘটবে না। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর অবশ্য আশ্বাস দিয়েছে যে, দেশে গবাদি পশুর কোন সঙ্কট নেই। বরং উৎপাদন বাড়ায় চামড়া শিল্পেও বইতে শুরু করেছে সুবাতাস। সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর ১৫৫ ট্যানারি কাঁচা চামড়া সংগ্রহে পুরোপুরি প্রস্তুত। সরকার এবারও কোরবানিতে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেবে। কোরবানির হাট ইজারা শুরু হয়েছে। তবে গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান পশুর দেহে প্রয়োগ ও পশুখাদ্যে ব্যবহার করার প্রবণতা এবার হ্রাস পেতে পারে। এই বিষয়গুলো আইনত দ-নীয় অপরাধ হলেও কোরবানিকে সামনে রেখে এই অপচেষ্টা চলে আসছে। সরকার এবার এ বিষয়ে সতর্ক থাকছে। দেশ গবাদি পশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠায় দেশের মানুষের আমিষের ঘাটতি পূরণ হবে। কোরবানির পশু নিয়ে কোন ধরনের অনিয়ম যাতে না হয় সেদিকে কর্তৃপক্ষ সতর্ক থাকবে বলে মনে হয়।
×