ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে বছরে কোটি মানুষ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৩০ জুলাই ২০১৮

 দেশে বছরে কোটি মানুষ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত

নিখিল মানখিন ॥ বিশ্বের প্রায় ৩৫ কোটি লোক হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রতিবছর হেপাটাইটিসজনিত রোগে বিশ্বের প্রায় ১৪ লাখ লোকের মৃত্যু হয়। আর বাংলাদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক কোটি এবং প্রতিবছর মারা যায় প্রায় ২০ হাজার রোগী। আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষই জানে না তারা ভাইরাসটিতে আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেপাটাইটিস লিভার প্রদাহজনিত রোগ। মা আক্রান্ত হলে শিশুর সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এছাড়া রক্ত পরিসঞ্চালন, যৌনক্রিয়া, সংক্রমিত সুচ বা রেজর ব্যবহারের মাধ্যমে এ ভাইরাসটি ছড়ায়। হেপাটাইটিস ভাইরাসজনিত রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ‘এ’ ও ‘বি’ ভাইরাসের কার্যকরী ভ্যাকসিন বাজারে পাওয়া যায়। এটি ‘ডি’ এর সংক্রমণেও ব্যবহার করা যায়। আর ‘ই’ ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি হলেও এখনও সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি। ‘সি’ ভাইরাসের কোন ভ্যাকসিন এখনও তৈরি করা যায়নি। ফোরাম ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল জানান, বাংলাদেশে সাধারণত, ‘এ, বি, সি ও ই’ ভাইরাস দ্বারা লিভার হেপাটাইটিস হয়ে থাকে। জন্ডিস দেখা দিলে এ রোগটি ধরা যায়, যদিও নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগীর রক্তে ভাইরাসের নির্দিষ্ট এন্টিজেন বা এন্ডিবডি উপস্থিত থাকা প্রয়োজন। হেপাটাইটিস জন্ডিস হিসেবে বা জন্ডিস ছাড়াও ধরা পড়তে পারে। হেপাটাইটিস বি দ্বারা আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগীর দেহে ভাইরাসটি বাহক হিসেবে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। কোন ধরনের উপসর্গ দেখা না গেলে এ সংক্রান্ত জটিলতা দেখা না দিলে রোগীরা সাধারণত চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হন না। এ সংক্রান্ত রোগের ব্যাপকতা নির্ভর করে জীবাণুটি কখন শরীরে প্রবেশ করেছিল এবং ব্যক্তিটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটুকু। তাই হেপাটাইটিস ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতন থাকা দরকার। তিনি আরও জানান, বিশ্বের প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত, যা মোট জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ। প্রতিবছর হেপাটাইটিসজনিত রোগে বিশ্বের প্রায় ১৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। আর বাংলাদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক কোটি এবং প্রতিবছর মারা যায় প্রায় ২০ হাজার রোগী। আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষই জানে না তারা হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত। সরকারী হাসপাতালে বিভিন্ন রোগে মৃত্যু হওয়ার মোট সংখ্যার বিবেচনায় লিভার জনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা রয়েছে তিন নম্বরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, প্রতিবছর হেপাটাইটিসজনিত রোগে বিশ্বের প্রায় ১৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই জানে না তারা ভাইরাসটিতে আক্রান্ত। এভাবে নিজের অজান্তেই আক্রান্ত ব্যক্তি ভাইরাসটি অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। আর শরীরে থাকা ভাইরাসটি যে কোন সময় সক্রিয় হয়ে আক্রান্তকারীকে মেরে ফেলতে পারে বা তাকে শারীরিকভাবে অক্ষম করে ফেলতে পারে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ, তা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী এ রোগটি সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত কম। এমনকি স্বাস্থ্য কৌশল প্রণয়নকারী দফতরগুলোও এ ব্যাপারে উদাসীন। লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের জন্য প্রধানত দায়ী হেপাটাইটিস। রোগটি বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার সামর্থ্য রাখে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তি ॥ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, পাঁচ ধরনের হেপাটাইটিস ভাইরাস (হেপাটাইটিস ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’ ও ‘ই’) দ্বারা আক্রান্ত হয়ে সারাবিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১৩.৪ লাখ মানুষ মারা যায়। সারাবিশ্বে প্রায় ৩২.৫ কোটি লোক হেপাটাইটিস এ আক্রান্ত, যার মধ্যে প্রায় ত্রিশ কোটি মানুষ তার রোগ সম্পর্কে অবগত নন। আমাদের দেশে প্রায় এক কোটি লোক হেপাটাইটিস-এ আক্রান্ত। আমাদের দেশে যত লোক আক্রন্ত হয়ে মারা যায় তার মধ্যে লিভার ক্যান্সারের স্থান তৃতীয়। অধিকাংশ লিভার ক্যান্সার এর জন্য দায়ী হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’। হেপাটাইটিস ‘বি’ ঐওঠ-এর চেয়ে দশ গুণ বেশি সংক্রামক। হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাসের সংক্রমণ দ্বারা প্রতিবছর বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ সংক্রমিত হয় যাদের অধিকাংশ সাধারণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী। অনিরাপদ খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ এবং অনুন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে হেপাটাইটিস ‘এ’ ও ‘ই’ ভাইরাস সংক্রমণ হয়। সাধারণত হেপাটাইটিস ‘এ’ ভাইরাস দ্বারা শিশুরা ও হেপাটাইটিস ‘ই’ ভাইরাস দ্বারা বয়স্করা অধিক হারে আক্রান্ত হয়। হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসের সংক্রমণজনিত স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী যকৃতের প্রদাহ, সিরোসিস, ক্যান্সার দ্বারা প্রতিবছর প্রায় এক কোটি লোক আক্রান্ত হয় এবং বিশ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করে। হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসের প্রতিরোধী টিকা প্রদান, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ও সুচের ব্যবহার বন্ধ, নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন, নিরাপদ যৌনভ্যাস ইত্যাদি দ্বারা ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব।
×