ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনা সভায় ড. মোশাররফ

বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরে অন্য জেলায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২৯ জুলাই ২০১৮

বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরে অন্য জেলায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি নেতাকর্মীদের তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী এলাকায় ধরে অন্য জেলায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ন্যাপ ভাসানী আয়োজিত ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এদিকে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন তিন সিটিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও পুলিশ মিলে একপেশে নির্বাচনের চেষ্টা করছে। মোশাররফ বলেন, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে খুলনা ও গাজীপুরের মডেল প্রয়োগ করা হচ্ছে। তিন সিটিতে ওয়ারেন্ট ছাড়া বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে আদালত ও ইসির নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গ্রেফতার চলছে। পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে অন্য জেলায় গ্রেফতার দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কখনও অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, তিন সিটি নির্বাচন কেন্দ্রে আমাদের কোন এজেন্ট যেতে পারবে না। গেলেও তাদের গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হবে। ড. মোশাররফ বলেন, তিন সিটিতে আমাদের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার করা হচ্ছে। অথচ পুলিশের এসপি ও কমিশনার রিপোর্ট দিচ্ছে যে কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। একইভাবে আমাদের এজেন্টদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ঘর ছাড়া করা হচ্ছে। খুলনা ও গাজীপুরে একই ঘটনা ঘটেছিল। তিন সিটির নির্বাচনেও তারা এ কাজটি করবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হলে কীভাবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেবে এমন প্রশ্ন তুলে মোশাররফ বলেন, নির্বাচনে যদি সরকারী দল ছাড়া আর কেউ অংশগ্রহণ না করে তাহলে তো আর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। আমরা মনে করি জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একদিন রাস্তায় নামবে। আমরাও জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে রাস্তায় নামব। মোশাররফ বলেন, সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর দুটি পথ আছে। এর একটি হলো গণআন্দোলন আর অন্যটি ভোটযুদ্ধ। ভোট যুদ্ধের আগে আমাদের আন্দোলন করতে হবে। গণআন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার, সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচন এবং সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি আদায়ে বাধ্য করা হবে। তিনি বলেন, যখন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয় তখন সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজন হয়। আমাদের সুশীল সমাজ, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সকলে চায় একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। কারণ খালেদা জিয়া ও ২০ দলের অংশগ্রহণ ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হতে পারে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি। সেটা ছিল বয়কটের নির্বাচন। সরকারের সমালোচনা করে মোশাররফ বলেন, লাখ লাখ টন কয়লা উধাও হয়ে গেল। এটা তো একটা ব্রিফকেসে করে নিয়ে যাওয়ার মতো কোন জিনিস না। প্রধানমন্ত্রী এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। তিনি ও প্রতিমন্ত্রী কেউ এ বিষয়ে কোন কথা বলছেন না। এর মানে হলো তাদের মধ্যে কোন চেইন অব কমান্ড নেই। আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ। তিন সিটিতে ইসি ও পুলিশ মিলে একপেশে নির্বাচনের চেষ্টা করছেÑ রিজভী ॥ তিন সিটিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও পুলিশ মিলে একপেশে নির্বাচনের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন তিনি এ অভিযোগ। রিজভী বলেন, তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন মহল চক্রান্তে মেতে আছে। তারা সাধারণ ভোটারদের অধিকার ফিরে পাওয়াকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। সেজন্য সরকার ভোট সন্ত্রাস ও ভোট কারচুপির নতুন নতুন মডেল আবিষ্কার করেছে। তিনি বলেন, তিন সিটিতে নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই নৌকা মার্কার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অসংখ্য অভিযোগ আসতে থাকে। পাশাপাশি বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট প্রার্থী এবং সমর্থক ও কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চরম পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। রিজভী বলেন, সরকার খুলনা ও গাজীপুরের মতোই তিন সিটি নির্বাচনে বিরোধী দলের ভোটার ও পোলিং এজেন্ট শূন্য করার অভিনব কৌশল নিয়েছে। সরকারের নির্দেশে তিন সিটি কর্পোরেশনে একপেশে নির্বাচনের ডিজাইনারের কাজ করে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন। নির্বাচন কমিশন যে সরকারের হাতের মুঠোয় সেই প্রমাণ নিজেরাই রেখে যাচ্ছে। রিজভী বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে আগ্রাসী আক্রমণ চালাচ্ছে। বিরোধী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের তালিকা ধরে গ্রেফতার অব্যাহত আছে। অবিরাম পুলিশি হয়রানিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের অসহায় পরিবার। তাদের নামে মামলা না থাকলেও পেন্ডিং মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। রিজভী বলেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় শুক্রবার রাতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছে। বাসায় গিয়ে তারা পরিবারের সদস্যদের বলেছে ২ আগস্টের আগে কাউকে যেন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় দেখা না যায়। গ্রেফতার না করার জন্য হাইকোর্টের নির্দেশ থাকলেও সেটিকে অমান্য করে পুলিশ লাগাতার গ্রেফতার করছে। ধানের শীষের প্রার্থীর উঠোন বৈঠক ও সভাও ভেঙ্গে দিচ্ছে পুলিশ। রিজভী বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গণগ্রেফতারের গতি থামছেই না। প্রায় ৯০ শতাংশ আওয়ামী লীগ সমর্থিত লোকদের পোলিং ও প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভোটের আগের রাতে নৌকায় সিল মেরে ব্যালট পেপার ভোটকেন্দ্রে লুকিয়ে রাখা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ধানের শীষের প্রার্থী। সিলেট সিটি নির্বাচনেও রাজশাহী ও বরিশালের মতোই চিত্র। ভোটারদের মধ্যে একটা থমথমে ভাব বিরাজ করছে। ফলে প্রশাসন ও ইসির ওপর ভরসা রাখতে পারছে না জনগণ। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার প্রমুখ।
×