ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী প্রচারে তিন সিটি

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৬ জুলাই ২০১৮

নির্বাচনী প্রচারে তিন সিটি

বরিশাল খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ “তিনজন মেয়র দেখছি; এরমধ্যে হিরণ ছাড়া মোগো কতা কেউ ভাবেনায়। সরোয়ার যহন মেয়র আছিলো তহন মোরা আছিলাম বস্তিতে, হিরণের সময় বস্তি ভাইঙ্গা মোগো কলোনি কইরা দেছে। এ্যাহনকোর মেয়র কামালরেতো চোহে-ই দেহিনায়। মার্কা দিয়া মোরা কি করমু। যে মোগো ভাইগ্যের উন্নতি করবো, হিরণের মতো হক্কলসময় যারে কাছে পামু হেরেই ভোট দিমু”। কথাগুলো বলছিলেন, বরিশাল নগরীর বাংলাবাজার রিফিউজি কলোনির বাসিন্দা বৃদ্ধ সেতারা বেগম। একথা শুধু সেতারা বেগমের একারই নয়; প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন, নগরীর পলাশপুর ও রসুলপুর কলোনিসহ ৩০টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ খেটে খাওয়া দিনমজুর থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটাররা। ৩০ জুলাই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে প্রথম নগরপিতার নির্বাচন করছেন প্রাচ্যের ভেনিসখ্যাত বরিশাল নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের ভোটাররা। প্রচারে শেষ সময়ে দম ফেলার ফুরসত নেই ছয়জন মেয়র, ৯৪ জন সাধারণ ও ৩৫ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর। এরই মধ্যে গত দু’দিন ধরে প্রার্থীদের প্রচারে অনেকটা বাঁধ সেধেছে কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনও মুষলধরের বৃষ্টি। নৌকার প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বৃষ্টির মধ্যেও নগরীর বাংলাবাজার এলাকার রিফিউজি কলোনিতে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। এবারই প্রথম কোন মেয়র প্রার্থীকে মুষলধরের বৃষ্টিতে ভিজে প্রচার চালাতে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন সাধারণ ভোটাররা। সাদিক আব্দুল্লাহর প্রচার ঘিরে সাধারণ ভোটাররাও যোগ্য নগরপিতা আখ্যা দিয়ে সাদিককে নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জাপার সমর্থন ॥ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে সমর্থন দিয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। বুধবার জাপার চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এই সমর্থন ঘোষণা করেন। বিএনপি প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত ॥ বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সারোয়ারের পক্ষে এক পথসভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্যই বিএনপি সিটি নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করেছে। বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মূল লক্ষ্য গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়া। উত্তেজনা ছড়াচ্ছে কাউন্সিলর প্রার্থীরা ॥ মেয়র প্রার্থীরা ভোটের মাঠ সংযত ও কৌশলী ভূমিকা পালন করলেও এবার আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত থেকে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থন দেয়ায় ওইসব প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়ার জন্য নগরীকে ক্রমশ উত্তপ্ত করে রেখেছে। অবশ্য তারা দলীয় মেয়র প্রার্থীর বদলে নিজেদের ভোটের জন্যই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। অধিকাংশ ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ॥ বরিশালের ১২৩ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১১২টিকেই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যা সাধারণভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পরিচিত। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের নগর বিশেষ শাখা (সিটিএসবি) এই তালিকা তৈরি করেছে। তালিকায় গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজশাহী মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। মাঠে প্রচারের সময় আর মাত্র দুদিন। তাই পেছনে ফেরার সময় নেই কারো। যে যার মতো ছুটছেন ভোটারের কাছে। তবে শেষ মুহূর্তের প্রচারে এসে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বাড়ছে প্রার্থীদের মধ্যে। একে অপরের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে কাদা ছোড়াছুড়ি। শুরু থেকেই অভিযোগের তীর বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের দিকে। তার তীরের টার্গেট আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন সবার বিরুদ্ধে সমান অভিযোগ বুলবুলের। সর্বশেষ বুধবার প্রচারে নেমেও নানা অভিযোগ করেন বুলবুল। তার অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে পুলিশের ভূমিকা পালন করছে। পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র উঁচিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মারধর করছে এবং পুলিশকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিচ্ছে। মঙ্গলবার নগরীর হেতমখাঁয় বিনা কারণে ছাত্রদলের নেতাদের মারধর করে বিএনপি অফিস ভেঙ্গে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বুলবুল। তিনি বলেন, পুলিশ তাদের কথামতো কাজ করেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে নির্বাচন কোনভাবেই ষুষ্ঠু ও অবাধ হবে না। নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে। তারা সম্পূর্ণ বারবি ডলে পরিণত হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যাচার, অপপ্রচার বলে মন্তব্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের। তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে বুলবুল শুরু থেকেই অপপ্রচার চালাচ্ছেন। মিথ্যা অভিযোগের ফাইল ভরছেন নির্বাচন কমিশনে। লিটন বলেন, নেতাকর্মীশূন্য ও জনসমর্থন হারিয়ে বুলবুল ভোটের মাঠে যা তা বলে বেড়াচ্ছেন। এদিকে প্রচারের শেষ সময়ে এসে রাজশাহী নগরীর উন্নয়ন ক্রেডিট নিয়েও চলছে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের মধ্যে টানাটানি। নৌকায় ভোট দিন, প্রত্যাশা পূরণ হবে, প্রতিশ্রুতি লিটনের ॥ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, দলমত নির্বিশেষে সবাই যে আশা বা প্রত্যাশা নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হলে সেই প্রত্যাশা পূরণে কাজ করব। কাক্সিক্ষত উন্নয়নের মাধ্যমে নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করা হবে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে বুলবুলের গণসংযোগ ॥ বুধবার নগরীর ১৩ ও ২০ নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেছেন বিএনপি প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। প্রচারে নেমে বুলবুল অভিযোগ করেন, রাজশাহীতে সরকারদলীয় প্রার্থীর নির্দেশে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও তাদের অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আত্মবিশ্বাসী লিটন, দ্বিধায় বুলবুল ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ করে এখন উজ্জীবিত নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দলীয় মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তবে এখনও দ্বিধায় আছেন নগর বিএনপি সভাপতি ও দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, গত নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছিল। তাই নগরীর অনেক উন্নয়ন কাজ করার পরও মানুষ আমাকে ভোট দেয়নি। এবার আমরা সেই অপপ্রচার প্রতিরোধে কাজ করছি। মানুষের কাছাকাছি গিয়ে তাদের সমস্যার কথা জানতে চেষ্টা করছি। সিলেট সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ সাড়া জাগানো ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ইশতেহারের ৩৩ দফায় উঠে এসেছে নগরীর সার্বিক উন্নয়নের চিত্র। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে কামরান নগরীবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আগামীদিনে নিজের অঙ্গীকার পূরণের সহযোগিতা চান। একই দিনে পৃথক অনুষ্ঠানে ইশতেহার ঘোষণা করেন অপর মেয়র প্রার্থী আবু জাফর। দিন ঘনিয়ে আসায় প্রচার নিয়ে বেসামাল অবস্থা। এক অপরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করছেন প্রার্থীরা। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় ১৬ প্রার্থীকে ৫০ হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নৌকার সমর্থনে প্রচারে অংশ নিতে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও সাম্যবাদী দলের সাধারণ দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ প্রচারে অংশগ্রহণ করেন। আরিফুল হক চৌধুরী ॥ ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, নগরীর উন্নয়নের জন্যই মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলাম। কিন্তু পাঁচটি বছরের তিনটি বছরই আমার থেকে কেড়ে নেয়া হলো। যার কারণে নগরীর সার্বিক উন্নয়ন পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি। তবুও যেটুকু সময় পেয়েছি নগরীর উন্নয়ন করেছি। আমি আমার কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছি, প্রবল ইচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলে ১৭ বছর নয়, দুই বছরেও মানুষের সেবায় পরিপূর্ণ নিয়োজিত রাখা সম্ভব। বুধবার সকাল দশটায় নগরীর আরামবাগের আমান উল্লাহ কনভেনশন সেন্টার হয়ে খরাদিপাড়া, মণিপুরীপাড়া, শিবগঞ্জের লামাপাড়া, গোলাপবাগ, সবুজবাগ, টিলাগড়ের শাপলাবাগ, রাজপাড়া, বোরহান উদ্দিন রোড এবং গোপাল টিলায় গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ ও জামায়াত প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ॥ সিসিক নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার নামে শোকজের চিঠি ইস্যু করা হয় বলে জানিয়েছেন সিসিক নির্বাচনের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা প্রলয় কুমার সাহা। এর আগে বিকেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও মহানগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে শোকজ করা হয়। আবু জাফরের নির্বাচনী ইশতেহার ॥ সিপিবি-বাসদের মেয়র প্রার্থী আবু জাফরের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার বিকেল ৩টায় নগরীর একটি হোটেলের হলরুমে সাংবাদিক সম্মেলনে আবু জাফর সিলেট সিটি কর্পোরেশন নিয়ে ২১ দফা ইশতেহার পাঠ করে শুনান। ইশতেহারে আবু জাফর বলেন, যুগোপযোগী দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। আরিফুল হকের অভিযোগ ॥ সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের নির্বাচনী সভায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ অর্ধশতাধিক সরকারী কর্মকর্তা অংশ নেয়ায় সিটি নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মনোনীত ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। বুধবার আরিফুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত সিলেট সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর এই অভিযোগ দাখিল করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের গণসংযোগ ও সমাবেশ ॥ মেয়র প্রার্থী কামরানের সমর্থনে সিলেটের সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে গণসংযোগ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার নগরীর ধোপাদিঘীরপারস্থ একটি সেন্টারে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইর্শাদ আলীর সভাপতিত্বে ও গোলাম দস্তগীর খান ছামিন এর পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ খান। প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনিত প্রার্থী বদর উদ্দিন কামরানের সমর্থনে আজ আমি এখানে এসেছি। আগামী ডিসেম্বরে আমাদের মূল পরীক্ষা। আর এ পরীক্ষায় যেতে হলে আমাদের দিন রাত পরিশ্রম করে আগামী ৩০ জুলাই নির্বাচনে কামরান বিজয়ী করতে হবে।
×