ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ডাক্তারি পরীক্ষার মূল্য তালিকা প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে;###;নির্দেশ না মানলে কারাদ- ও অর্থদ-ের বিধান রাখা হয়েছে খসড়া আইনে

ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রমরমা বাণিজ্যে রোগী, স্বজনরা দিশেহারা

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২০ জুলাই ২০১৮

ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রমরমা বাণিজ্যে রোগী, স্বজনরা দিশেহারা

নিখিল মানখিন ॥ বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালে প্যাথলজি ও ডাক্তারি পরীক্ষার ফি আদায় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্যাথলজি ও ডাক্তারি পরীক্ষার ফি ইচ্ছে মতো আদায় করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শুধু তাই নয়, রোগী মারার কারখানা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও নিম্নমানের হাসপাতাল। এ সব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম বিভ্রান্তিতে পড়েন। রোগীদের দুর্ভোগ ও হয়রানি হ্রাস করতে প্যাথলজি ও ডাক্তারি পরীক্ষার মূল্য তালিকা প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে সরকার। এ জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন সংশোধন করছে সরকার। কোন প্রতিষ্ঠান তা না করলে এক বছর কারাদ-, ৫০ হাজার টাকা অর্ধদ- অথবা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে খসড়া আইনে। জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অধিদফতর জানায়, ২০০৯ সালের এ আইন সংশোধন হলে রক্ত, মল-মূত্র পরীক্ষা, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এমআরআই, এনজিওগ্রাম, ইসিজি ও ইটিটি পরীক্ষার মূল্য তালিকা সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে ‘সহজে দৃশ্যমান স্থানে’ প্রদর্শন করতে হবে। বর্তমানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে বিভিন্ন ‘সেবা’র মূল্যতালিকা প্রদর্শনের কথা বলা হলেও সেবাগুলো নির্দিষ্ট করা ছিল না। খসড়ার ওপর মতামত দেয়া হয়েছে। সংশোধিত আকারে আইনটি পাস হলে সরকার এ আইনের আলোকে বিধি প্রণয়ন করতে পারবে বলে জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর। রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে দেশের অবৈধ ও প্রশ্নবিদ্ধ শত শত বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা আর্থিক সুবিধা নিয়ে ওই সব অবৈধ প্রতিষ্ঠান লালন পালন করে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। র‌্যাব সদস্যের অভিযান প্রশংসিত হলেও ঘন ঘন অভিযান চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে দেশজুড়ে অবৈধ ওইসব সেন্টারের ছড়াছড়ি। সাইনবোর্ড সর্বস্ব এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়মনীতির বালাই নেই, হাতুড়ে টেকনিশিয়ান দ্বারাই চালানো হয় রোগ নির্ণয়ের যাবতীয় পরীক্ষা। তারা মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করে ঠকাচ্ছে নিরীহ মানুষকে। একই রোগ পরীক্ষায় একেকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে একেক রকম রিপোর্ট পাওয়ার অনেক ঘটনা রয়েছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও দেশের অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধ অভিযান অব্যাহত থাকবে। সরলতার সুযোগ নিয়ে এসব ক্লিনিকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দিনের পর দিন রোগীদের ঠকিয়ে যাচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার উচ্ছেদে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যালস কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা শত শত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার দেশের স্বাস্থ্যসেবার জন্য চরম হুমকি। ওই সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজ সম্পাদনের অভিযোগও পাওয়া যায়।
×