ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

কেরানীগঞ্জে কারাগারের নির্মাণাধীন আরপি গেট ধসে আহত ৮

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ১৬ জুলাই ২০১৮

  কেরানীগঞ্জে কারাগারের নির্মাণাধীন আরপি গেট ধসে আহত ৮

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর অদুরে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্মাণাধীন প্রধান ফটকের (আরপি গেট) ছাদ রবিবার সকালে হঠাৎ করে ধসে পড়েছে। এতে ঘটনাস্থলেই ৮ শ্রমিক ও গেটের নিচে থাকা আরও কয়েক আসামির সঙ্গে সাক্ষাতপ্রার্থী স্বজন আহত হয়েছেন। নির্মাণ ত্রুটি ও প্রকল্প মনিটরিংয়ের জন্য নিয়োজিত গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলার কারণে এটি ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে কারাগারের নির্মাণাধীন কোন স্থাপনা এভাবে ধসে পড়তে দেখা যায়নি। এদিকে খবর পেয়ে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন কেরানীগঞ্জে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। ঘটনার পরপরই কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়। আহত শ্রমিকরা হলেন- সেলিম (৩০), মাইনুদ্দিন (২৭), রিপন (৩২), হান্নান (৩৩), রাজ্জাক (৩০) ও সোহরাব (৩০)। বাকি দুই শ্রমিক ও আহত আসামির স্বজনদের নাম জানা যায়নি। আহতদের মাঝে কয়েকজনকে স্থানীয় আব্দুল্লাহপুর ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েকজনকে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কারা সূত্র জানায়, প্রধান ফটকটি নির্মাণে ব্যাপক গাফিলতি করা হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ফটকটি তৈরির জন্য দেয়া নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার আট মাসেও এই ফটকটি নির্মাণ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সূত্র জানায়, গিয়াস উদ্দীন রনি নামের স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মমতাজ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এটিই প্রথম কোন নির্মাণকাজ বলে জানা গেছে। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কার্যাদেশ পাওয়ার পর পরবর্তী আট মাসে এই ফটকটি নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা গত ১৬ মাসেও এটি নির্মাণ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সরেজমিনে দেখা গেছে, ছাদে মাত্র তিন ইঞ্চি রড দেয়া হয়েছে, যা নিয়মানুযায়ী পাঁচ ইঞ্চি দেয়ার কথা। মাত্র কয়েকদিন আগেই এই ছাদ ঢালাই করা হলেও সময় না দিয়েই ছাদের ওপরে ভারি কাজ শুরু করায় চাপ সইতে না পারায় তা ধসে মাটিতে পড়ে। কোন কারণ ছাড়াই এটি ধসে পড়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারগণ দাবি করলেও মূলত নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার ও নিয়মানুযায়ী ইট, বালু ও পরিমাণ মতো রড ও সিমেন্ট ব্যবহার না করায় এই ফটকের ছাদটি ভেঙ্গে পড়েছে। অপর একটি সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ছাদ ঢালাইয়ের পর নির্দিষ্ট সময় না দিয়ে অতি কম সময়েই সকল কাজ শেষ করে দ্রুত বিল পাওয়ার জন্যই নিয়ম না মেনেই এই ফটকটি নির্মাণ করছিলেন। সকল কাজ অতি দ্রুততার সঙ্গে করা হচ্ছিল। তাই ছাদটি চাপ সহ্য করতে না পেড়ে আকস্মিক ভেঙ্গে পরে এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ পথের ফটক নির্মাণের কাজ চলছে। সপ্তাহখানেক আগে ফটকের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। রবিবার বেলা সাড়ে আটটার দিকে হঠাৎ সেটি বিকট শব্দে ভেঙ্গে পড়ে। এতে নিচে থাকা কয়েক শ্রমিক চাপা পড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক কারারক্ষী অভিযোগ করেন, ছাদ ঢালাইয়ের পর নিচে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে ঠেকা দেয়া ছিল। নিম্নমানের ইট, সিমেন্ট ও বালুসহ বিভিন্ন মাল ব্যবহার করায় ছাদটি ভেঙ্গে পড়েছে। দুর্ঘটনার সময় সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন কারারক্ষী শিরীন আক্তার। তিনি বলেন, ১৫/১৬ শ্রমিক ফটক নির্মাণের কাজ করছিল। হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফটকের ছাদ ভেঙ্গে পড়ে। জানা গেছে, কারাগারের প্রবেশপথের ফটক নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মমতাজ ইঞ্জিনিয়ারিং। প্রতিষ্ঠানটির মালিক রনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাওছার বলেন, গত বৃহস্পতিবার ফটকের ছাদটি ঢালাই দেয়া হয়েছিল। কী কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তবে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহারের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। কেরানীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ সজীব সরকার বলেন, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আমাদের দুটি ইউনিট দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। আহত কয়েকজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছ। এ বিষযে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, কারা সীমানার প্রধান ফটক (আরপি গেট) ধসে পড়ার জন্য ডিজাইন ত্রুটি, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার কিংবা কনস্ট্রাকশন সমস্যা জানতে আমরা তা তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাব। হঠাৎ করে ছাদ ধসে পড়ার সঠিক কোন কারণ আমরা এখনই বলতে পারছি না। তদন্তের পরই কেবল সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করা সম্ভব।
×