ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৩ জুলাই ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়টি, সবাই মানবেন, কেবল শিক্ষার্থীদের নয়। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাধারণের সংশ্লিষ্টতা যারপরনাই পুরনো এবং ইতিহাস দ্বারা স্বীকৃত। কিন্তু গত সোমবার থেকে এর উল্টো প্রচার কানে আসছিল। একটি মহল বিপুল আগ্রহ নিয়ে এই কথা প্রচার করছিল যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে প্রবেশে নতুন করে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে। সাধারণের প্রবেশ আর মেনে নেয়া হচ্ছে না। এতকালের আচার থেকে এভাবে সরে আসার সমালোচনা হচ্ছিল খুব। সমমনারা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজটি করছিলেন। কিন্তু মঙ্গল বুধ এবং বৃহস্পতিবার ঢাবি ক্যাম্পাস ঘুরে তেমন কিছুই চোখে পড়ল না! টিএসসিতে আগের মতোই প্রাণবন্ত আড্ডা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এখানে যত, তারও বেশি অন্যান্য শ্রেণী পেশার মানুষ। শিল্প-সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষেরা জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এক আড্ডায় তিনজনের দুজনই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের। একজন মামুন, পুলিশে আছেন। অন্যজন ইমরান। আইটি ব্যবসায়ী। একটি আবৃত্তি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তারা। সে সূত্রেই টিএসসির আড্ডায়। কিন্তু এখানে আসতে কোন বাধার মুখে পড়তে হয়েছে কি? জানতে চাইলে ইমরান কিছুটা অবাকই হন। বলেন, না তো। সব সময়ের মতোই এসেছি। আসছি। কোন সমস্যা দেখিনি। এটা আসলে অপপ্রচার। এ প্রসঙ্গে যৌক্তিকভাবেই চলে আসে কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গ। আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শুরু থেকেই অপপ্রচারে মেতেছিল। এখনও তাই হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, অদ্ভুত এই আন্দোলন। অনেক দুর্বলতা। তার মতে, আন্দোলনকারীরা চির বঞ্চিত নারীর বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। আদিবাসীদের সমাজের মূল ¯্রােতের সঙ্গে মিশতে দিতে নারাজ। পঙ্গু প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার অস্বীকার করার মতো অমানবিক তারা। সর্বোপরি তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানে না। একাত্তরের বীরদের অবদান তারা ভুলে থাকতে চান। আন্দোলনকারীদের সব চাওয়া স্বাধীনতাবিরোধী ও ধর্মীয় মৌলবাদীদের চাওয়ার সঙ্গে হুবহু মিলে যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, এর পর আর কোন আন্দোলন গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না। তাই অপপ্রচার বন্ধের পরামর্শ দেন তিনি। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মামুন আরও একটু পেছনে ফিরে যান। কিছুদিন আগের একটি ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন যারা করছেন তারা আমাকে চারুকলার সামনে আটকে দিয়েছিলেন। ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেননি। আমার পরিচয় জানতে চেয়েছিলেন তারা। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তাদের কাছে আমার পরিচয় দেয়ার ইচ্ছে হয়নি। বিধি নিষেধ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার কথা হচ্ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদার ক্যাম্পাস। এখানে সাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল না। নেই বরং ক্যাম্পাসের এটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সার্বিক সৌন্দর্যেরও অংশ। তবে একইসঙ্গে মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী অপশক্তি সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ঘাড়ে ভর করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারে। অপতৎপরতা চালাতে পারে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সচেতন আছেন বলে জানান তিনি। ফুটবল বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে আসা যাক। শেষ হতে চলল দুনিয়া কাঁপানো আসর। আর মাত্র একটি খেলা এবং বলার অপেক্ষা রাখে না, সেটি ফাইনাল! সঙ্গত কারণেই টান টান উত্তেজনা। নতুন করে মেতেছে বাঙালী। নতুন করে মেতেছে বলার কারণ, প্রিয় দল আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের বিদায়ের পর একরকম ভেঙ্গে পড়েছিলেন সমর্থকরা। খেলার প্রতি আগ্রহ যেন হারিয়েই ফেলেছিলেন। তবে এখন তেমনটি মনে হচ্ছে না। বিশেষ করে সেমিফাইনালের দুটি ম্যাচ উত্তেজনা ফিরিয়ে দিয়েছে। ফ্রান্স-বেলজিয়ামের খেলা বিপুল উপভোগ করেছেন ঢাকার দর্শক। বুধবার রাতে ছিল ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়ার খেলা। এ ম্যাচের ফল পেতেও নির্ঘুম কাটিয়েছে শহর। এখন ফাইনালে চোখ। কেউ ফ্রান্সের সমর্থন আছেন। কেউ ক্রোয়েশিয়ার। নতুন করে উত্তাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায়। আগামী রবিবার মাসব্যাপী উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। তার আগে পর্যন্ত ঢাকাবাসী আর কিছুতে মনোযোগ দিতে পারবেন বলে মনে হয় না। শেষ করা যাক স্মার্টফোন ও ট্যাব মেলার কথা বলে। এক ছাদের নিচে সব ধরনের স্মার্টফোন। ট্যাবলেট কম্পিউটার। নামী-দামী কোম্পানির ডিভাইস হাতে নিয়ে দেখার সুযোগ। একটির সঙ্গে অন্যটির তুলনা করে ভালটি কেনা যাচ্ছে। ফলে প্রথম দিন থেকেই মোটামুটি জমজমাট স্মার্টফোন ও ট্যাবমেলা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার থেকে এই মেলা শুরু হয়েছে। আয়োজক এক্সপো মেকার। স্মার্ট গ্যাজেট নিয়ে এটিকে বলা যায় বেশ উল্লেখযোগ্য একটি আয়োজন। বিকেলে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হলেও, মেলা শুরু হয়ে গিয়েছিল সকাল থেকেই। দর্শনার্থীরাও আসছিলেন দল বেঁধে। বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখছিলেন তারা। মেলায় রয়েছে ২টি প্লাটিনাম স্পন্সর প্যাভিলিয়ন। ২টি গোল্ড স্পন্সর প্যাভিলিয়ন। ৪টি সিলভার স্পন্সর প্যাভিলিয়ন। এ ছাড়াও রয়েছে ৪টি প্যাভিলিয়ন ও ১২টি স্টল। স্যামসাং, টেকনো, সিম্ফনি, উই, হুয়াওয়ে, নোকিয়া, ভিভো, আইফোন, লাভা, উইনম্যাক্স, লেনেভো, ডিটেইল, উইমিডিজি, সোলার ইলেক্ট্রোসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে। উপস্থাপন করছে নতুন নতুন মডেলের স্মার্টফোন ও স্মার্ট ডিভাইস। মেলায় পাওয়া যাচ্ছে এ্যাপলের আইফোন, আইপ্যাড। আছে মোবাইল এ্যাক্সেসরিজও। উদ্যোক্তারা জানান, ক্রেতাদের টানতে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মেলায় বিশেষ ছাড় ও উপহার দিচ্ছে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। শেষ হবে আগামীকাল শনিবার।
×