ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জিম্মি সেবা কার্যক্রম

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১০ জুলাই ২০১৮

জিম্মি সেবা কার্যক্রম

চট্টগ্রামের দেড় শ’ শয্যাবিশিষ্ট ম্যাক্স হাসপাতালে মাত্র আড়াই বছরের সাংবাদিক কন্যা শিশু রাইফার অকাল মৃত্যু যেমন দুঃখজনক তেমনি মর্মান্তিক। শিশুটি সামান্য গলা ব্যথা ও জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছিল উক্ত হাসপাতালে। এরপর থেকেই একাধিক শিশু চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞকে তলব করা হলেও শিশুটির চিকিৎসা যথাযথ হয়নি বলে রাইফার বাবার অভিযোগ। মূলত চিকিৎসকদের অনাদর-অবহেলাতেই রাইফার অকাল মৃত্যু ঘটেছে বলে মনে করেন তার পরিবার। অবশ্য যথারীতি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। তবে গণমাধ্যমে এই মর্মান্তিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এ নিয়ে শুরু হয় ক্ষোভ-বিক্ষোভ। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর এ বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত চালিয়ে ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পান। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের পক্ষ থেকেই গঠিত তদন্ত কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট তিনজন চিকিৎসকসহ ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে চরম অব্যবস্থাপনার ১১টি বিষয় চিহ্নিত করেছে। সর্বশেষ সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাইফার সাংবাদিক বাবা সংশ্লিষ্ট তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও শিশু রাইফার চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত ২ চিকিৎসককে বহিষ্কার এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসককে ওই হাসপাতালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তবে এ বিষয়ে যে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গেছে তা যেমন বিস্ময়কর তেমনি আশ্চর্যজনক। অভিযুক্ত চিকিৎসকরা কেউই ওই হাসপাতালে কর্মরত নন। যেখানে তাদের নিয়োগপত্রই নেই সেখানে বরখাস্ত করার প্রশ্ন আসে কোত্থেকে? আরও যা আশ্চর্যের তা হলো দেড় শ’ শয্যার ম্যাক্স হাসপাতালে শুধু ওই দুজনই নন, কারও নাকি নিয়োগপত্র নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতর গঠিত তদন্ত কমিটি এই বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছে। কমিটি ম্যাক্সের লাইসেন্সের ত্রুটি পাওয়ার কথাও উল্লেখ করেছে। এর বাইরেও উক্ত হাসপাতালে প্যাথলজির কোন লাইসেন্স নেই। ব্লাড ব্যাংক নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ১১টি ত্রুটির উল্লেখসহ ১৫ দিনের মধ্যে নোটিসের জবাব দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষকে। সর্বশেষ ম্যাক্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রামের সব বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছে সেবা কার্যক্রম, যা অন্যায় ও অনভিপ্রেত। তবে ম্যাক্সের মতো মোটামুটি একই রকম চিত্র প্রত্যক্ষ করা যায় ঢাকা-চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বিভাগীয় বেসরকারী হাসাপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে, হাতেগোনা কয়েকটি উচ্চমানের বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক বাদে। এমনকি সরকারী হাসাতালগুলোতেও ডাক্তার-নার্স বেডসহ প্রয়োজনীয় জনবল সঙ্কটের বিষয়টি সুবিদিত। ডাক্তার-নার্স-হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা-অনাদরে শিশু-নারীসহ রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। তাই বলে চিকিৎসা সেবার পরিবর্তে এদের গুচ্ছের ব্যবসা কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না কিছুতেই। বরং দিন দিন বাড়ছে। রোগী ও অভিভাবকরা দিন দিন জিম্মি হচ্ছে ডাক্তার-নার্সসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর গঠিত তদন্ত কমিটি ম্যাক্স হাসপাতালে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি পেয়েছে সেসব অনেক স্থানেই আছে। এসব নিয়মিত দেখভালের জন্য সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষও রয়েছে। তবু ঘটনা ঘটেই চলেছে। ডাক্তার-নার্সরাও কর্তব্যে অবহেলা করেন তা সত্য নয় সর্বাংশে। ম্যাক্স হাসপাতালে শিশু রাইফা খানমের অকাল মৃত্যু নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির সুষ্ঠু তদন্ত ও সমাধান সব মহলের প্রত্যাশিত। সর্বত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠিত হলে এর অবসান হতে পারে।
×