ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমের বাজার

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৪ জুলাই ২০১৮

আমের বাজার

বিগত কয়েক বছর ধরেই দেশে আমের ফলন বেশ ভাল হচ্ছে। এ বছর শুধু নওগাঁ জেলার ১১টি উপজেলায় ১৪ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে আমের চাষ করা হয়েছে। প্রায় আড়াই লাখ টন ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আম পচনশীল কৃষিপণ্য বলেই সময়মতো ভোক্তা না পেলে চাষী ও ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হন। চলতি মৌসুমে যেমন নওগাঁয় ক্রেতা না পাওয়ায় আমের বাজারে ধস নেমেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতিমণ আম ৮শ’-৯শ’ টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। আমে ফরমালিনের ব্যবহার ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসন থেকে কঠোর নজরদারির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবার। উপজেলা প্রশাসন থেকে আমচাষীদের ১ জুনের আগে গাছ থেকে আম পাড়া ও বাজারজাতকরণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ১ জুনের পর সব চাষী এক সঙ্গে গাছ থেকে আম নামিয়ে বাজারজাত করতে গিয়ে বাজারে প্রচুর আম সরবরাহ করে। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় বাজারে আম বেশি হওয়ায় দাম কমে গেছে। এখন আম চাষী ও বিক্রেতাদের লাভের পরিবর্তে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তিন বছর আগে প্রথমবারের মতো ইউরোপে রফতানি হয়েছিল আম। আর একই বছরে দেশের একটি বড় কোম্পানি ১০০ কোটি টাকার আমের অর্ডার দিয়েছিল। কৃষিমন্ত্রী একবার সংসদে জানান, আম উৎপাদনে আমরা বিশ্বে সপ্তম অবস্থানে রয়েছি। বলাবাহুল্য, রসালো ফল আম প্রায় সবারই প্রিয়। এটি ভারত উপমহাদেশ ও এশিয়ার একটি বিশেষ ফল। আম শরীরের জন্যও খুব উপকারী। আমে রয়েছে- ক্যালোরি, কার্বোহাইড্রেট, সুগার, প্রোটিন, ক্যারোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, থায়ামিন, রিবোফ্লোবিন, ফলিক এসিড, জিংক, ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি। একসঙ্গে এত ভিটামিন, মিনারেল ও শরীরের প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপাদানের জোগান খুব কম ফলেই আছে। মোটকথা, আমে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি একত্রে পাওয়া যায়। তাই আমকে বলা যায় সব রোগের জন্য শক্তিশালী প্রতিরোধক। এমন একটি ফল নষ্ট হবে, এটি কোন কাজের কথা নয়। তাই ফলের জন্য বিখ্যাত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সরকারীভাবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ফল স্টোররুম অথবা আধুনিক প্রযুক্তিতে ফল সংরক্ষণের সুব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এতে ফলচাষীরা তাদের ন্যায্যমূল্য পাবেন। সেই সঙ্গে বিদেশী ফলের আমদানিও অনেকাংশে কমে যাবে। ফল সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে নি¤œ তাপমাত্রা ও উচ্চ আর্দ্রতায় রাখা হয়। এতে ফলের স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিমান প্রায় অপরিবর্তিত থাকে। নি¤œ তাপমাত্রার কারণে ফলের মধ্যকার জারকের ক্রিয়া সীমিত থাকে এবং উচ্চ আর্দ্রতার কারণে এগুলো শুকিয়ে সঙ্কুচিত হয় না। আনারস, কমলালেবু, কাঁঠাল, নাশপাতি ইত্যাদি ফল টাটকা অবস্থায় সংরক্ষণ করা যায়। প্রক্রিয়াজাত করেও আমসহ বিভিন্ন ফল সংরক্ষণ করা যায়। এদিকেও বিশেষ লক্ষ্য দেয়া দরকার। আনারস, লিচু, আম, পেঁপে, কমলা, নাশপাতি ইত্যাদি ফল চিনি ও লবণের দ্রবণে সংরক্ষণ করা যায়। লেবু, আনারস, আম ইত্যাদি ফলের রস তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায়। কয়েকটি ফল দিয়ে জ্যাম বা জেলি করা যায়। আচার-চাটনি এবং মোরব্বা করেও ফল সংরক্ষণ করা সম্ভব। প্রক্রিয়াজাতভাবে ফল সংরক্ষণের জন্য তাই ছোট ছোট কারখানা গড়ে তোলা দরকার। এতে ফলের অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে। মোটকথা কৃষিপণ্য পরিবহন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন জরুরী। তাতে আমচাষীসহ অন্য চাষীরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি বিপুল পরিমাণ কৃষিপণ্য নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
×