ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টার অভিযোগ

গাড়ি চাপায় পথচারীর মৃত্যু ॥ ৪ দিনেও ঘাতক গাড়ি জব্দ করেনি পুলিশ

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ২৩ জুন ২০১৮

  গাড়ি চাপায় পথচারীর মৃত্যু ॥ ৪ দিনেও ঘাতক গাড়ি জব্দ করেনি পুলিশ

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর স্ত্রীর গাড়িচাপায় পথচারী সেলিম বেপারি নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য পুলিশ লুকোচুরি করছে। মামলার কোন অগ্রগতি নেই। চার দিনেও ঘাতক গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৭৬৫৫ নম্বর) জব্দ করেনি পুলিশ। এমনকি এই ঘটনায় অভিযুক্ত এমপি ছেলে শাবাব চৌধুরীর বিষয়েও কোন সিদ্ধান্তে আসেনি পুলিশ। এদিকে দুর্ঘটনার পর চালক গাড়িটি নিয়ে পালিয়ে আসে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের ন্যাম ফ্ল্যাটের পাঁচ নম্বর ভবনের নিচে। সেখানকার সিসিটিভির ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়নি। এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে বলেছে, পুলিশ কাউকে বাঁচানোর জন্য মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি গাড়িটি জব্দ করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে শাবাবের বিরুদ্ধে গাড়ি চাপা দিয়ে পথচারী হত্যার অভিযোগের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোঃ আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এখনি আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারব না কে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তদন্তের পরই সবকিছু জানা যাবে। তবে এটুকু বলতে পারি কেউ আইনের উর্ধে নন। তিনি যদি এমপি পুত্রও হন। শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত হোটেল আমারি আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এদিন কাফরুল থানার ওসি শিকদার মোহাম্মদ শামিম হোসেন জানান, মামলার তদন্ত চলছে। তবে এ বিষয়ে জানতে ডিসি মিডিয়া মাসুদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলুন। রাত পৌনে ৮টার দিকে ডিসি মিডিয়া মাসুদুর রহমানের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি তার ব্যক্তিগত মোবাইল ধরেননি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আহম্মেদ জানান, দুর্ঘটনা ঘটানোর অভিযোগে দায়ের করা মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। গাড়িটি কে চালাচ্ছিল তা জানার চেষ্টা চলছে। তবে ওই গাড়িটি জব্দ করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান ডিসি মাসুদ আহম্মেদ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, গাড়িটি কার নামে রেজিস্ট্রেশন করা ছিল। তারা সেটা শনাক্ত করেছেন। তবে গাড়িটি সে সময় কে চালাচ্ছিল তা এখনও জানা যায়নি। পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার সময় গাড়িটির চালককে ছিল তা জানার জন্য ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও দুর্ঘটনার পর চালক গাড়িটি নিয়ে পালিয়ে আসে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের ন্যাম ফ্ল্যাটের পাঁচ নম্বর ভবনের নিচে। সেখানকার সিসিটিভির ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মঙ্গলবার রাতে মহাখালী ফ্লাইওভারে গাড়িচাপায় সেলিম বেপারি (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। সেলিম নিজেও ছিলেন পেশায় একজন গাড়িচালক। তিনি নাখালপাড়ার জনৈক ইমরান নামে এক ব্যক্তির গাড়ি চালাতেন। মঙ্গলবার রাত পৌনে দশটার দিকে তিনি মালিকের বাসায় গাড়িটি রেখে উত্তরখানের নিজ বাসায় ফিরে যাচ্ছিলেন। মহাখালী ফ্লাইওভারের কাছে বাসে ওঠার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। এ অবস্থায় পেছন থেকে একটি প্রাইভেটকার তাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা ওই গাড়িটির নম্বর প্লেটের সূত্র ধরে গাড়ির মালিককে শনাক্ত করে পুলিশ। সূূত্রগুলো জানায়, ঢাকা মেট্রো গ-১৩-৭৬৫৫ সিরিয়ালের গাড়িটির মালিক কামরুন্নাহার শিউলী নামে এক নারী। তার স্বামী একরামুল করিম চৌধুরী নোয়াখালী-৪ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। কামরুন্নাহার শিউলি নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চেয়ারম্যান। দুর্ঘটনার পর ওই গাড়িটি ধাওয়া করে শামীম আশরাফী নামে প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার পর মহাখালী থেকে চালক গাড়িটি নিয়ে পালিয়ে গিয়ে মানিক মিয়া এভিনিউতে ন্যাম ভবনের ভেতরে ঢোকে। গাড়িটিকে অনুসরণ করে তারাও ন্যাম ভবনের ভেতরে ঢোকেন। একই সময় এক মোটরসাইকেল আরোহীও ঘাতক গাড়িটিকে অনুসরণ করে ন্যাম ভবনে ঢুকে পড়ে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে শাবাব চৌধুরী। তিনি চালকের আসনে ছিল। তার পরনে ছিল এক রঙের শার্ট ও কালো প্যান্ট। প্রত্যক্ষদর্শী শামীম আশরাফী জানান, তারা ভেতরে ঢুকে দেখতে পান আশপাশের লোকজন গাড়ি থেকে নেমে আসা তরুণকে শাবাব নামে ডাকছে। শাবাব নামের ওই তরুণ হুমকি-ধমকি দিয়ে মোটরসাইকেল আরোহীর সঙ্গে থাকা মোবাইলের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ মুছে দেয়। শামীম আশরাফী আরও জানান, ন্যাম ভবনে কিছুক্ষণ থাকার পর দায়িত্বরত আনসার ও কেয়ারটেকাররা তাদেরকে বের করে দেন। এ সময় তরুণের পরিচয় জানতে চাইলে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরাও ওই তরুণের নাম শাবাব বলে জানান। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শামীম আশরাফী বলেন, এটি একটি অডি গাড়ি। আমি শতভাগ নিশ্চিত ওই তরুণ নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে শাবাব চৌধুরী। তিনি নিজেও ন্যাম ভবনের ভেতরে এভাবেই পরিচয় দিচ্ছিলেন। তার গাড়িটিতে স্টিকার ছিল। এদিকে ঘটনার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাতকারে এমপি একরামুল করিম চৌধুরী ও তার স্ত্রী কামরুন্নাহার শিউলী দাবি করেন দুর্ঘটনার সময় তাদের সন্তান গাড়িতে ছিলেন না। নূর আলম নামে এক চালক গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। একটি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাতকারে একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, আমার ছেলে গাড়ি চালায়-ই নাই। চালাইছে আমার ড্রাইভার। এখন এক্সিডেন্ট করছে। এক্সিডেন্ট তো এক্সিডেন্টই। পুলিশ তদন্ত করতেছে। আমার পাঁচ-ছয়টা ড্রাইভার। সবাই তো ছুটিতে গেছিল। আমি নোয়াখালীতে। এখন কোনটা (ড্রাইভার) আইসা ডিউটি করতেছে, বলতে পারতেছি না।
×