ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রোকেয়া প্রাচী

আস্থা রাখুন অভিযানে

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৬ জুন ২০১৮

আস্থা রাখুন অভিযানে

সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। সামনেই আসছে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। শুধু দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নই নয়; ভবিষ্যত প্রজন্ম যাতে সুস্থ পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তার নির্ভয় চিত্তের কঠিন সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। দেশে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছে, হচ্ছে। শত প্রতিবন্ধকতা, ভয়-ভীতি, সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠে তিনি সাফল্য ছুঁয়েছেন। কেউ কেউ অভিযোগ করে আসছে, পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে নানা কৌশলে তরুণদের ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়। এটাই নাকি কৌশল। ‘ছেলে ঘুমোলো পাড়া জুড়োলো বর্গি এলো দেশে’- এ কথাটি অন্তত সত্য হতে দেননি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুদ্ধাপরাধসহ নানা ইস্যুতে রাজপথে হোক আর ফেসবুকেই; দেশের তরুণরাই সর্বদা জাগ্রত- এ কথা প্রমাণিত সত্য। এ তারুণ্যের ওপর নির্ভর করেই ডিজিটাল বাংলাদেশের অঙ্গীকার নিয়ে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। আজ দেশের তারুণ্যের হাতের মুঠোয় সারাবিশ্ব। তথ্যপ্রযুক্তিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি ঘুম পাড়ানো তারুণ্যকে জাগিয়ে তুলেছেন আত্মবিশ্বাসে। ১৬ কোটি জনগণের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এই তরুণরাই। উন্নয়নের পালে যখন হাওয়া তখন ঘুমপাড়ানো মাদকে কেন আচ্ছন্ন থাকবে তরুণ সমাজ? মাদকের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান চলছে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে অন্তত দেড়শ’। সমালোচনা এসেছে বিচারবহির্ভূত হত্যার। মানবতাবাদী সংগঠনগুলোসহ বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই এর বিরোধিতা করেছেন। নিশ্চয় কোন নাগরিকই তা সমর্থন করবে না। সরকার নিশ্চয় এসবের সুষ্ঠু তদন্ত করবে। সর্বত্রই সাধারণ মানুষকে উস্কে দেয়ার জন্য সক্রিয় আড়ালে ঘাপটি মেরে থাকা বিরোধী শক্তি। বারবার অপকৌশলে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা কারা করছে, জনগণ তা জানে। সাময়িক উত্তেজনার বশে অঙ্কে যেন আমরা বড় কোনো ভুল না করে বসি। পাকিস্তানের দোসর, রাজাকার-যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র যেন আবার দেশকে বিপদাপন্ন করে তুলতে না পারে। দেশের মানুষের আস্থা ও নির্ভরতার জায়গাটুকু কেউ যেন বিতর্কিত করে ফায়দা লুটতে না পারে, সেটিও মাথায় রাখতে হবে জনগণকে। বরং আসুন, সরকারের পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে পাড়া-মহল্লায় সচেতনমূলক কার্যক্রম হাতে নিই। মাদকাসক্তদের ঘৃণা বা তাচ্ছিল্য না করে তার পাশে দাঁড়াই। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের ধরিয়ে দিই। আমার ব্যক্তিগত অভিমত, জানি এর সঙ্গে আরও অনেকেই একমত হবেন- তরুণ সমাজের যথাযথ বিনোদনের অভাবই মাদকাসক্ত করে তুলছে তাদের। সারাদেশে সাংস্কৃতিক কর্মকা- বাড়াতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সাংস্কৃতিক খাতে বাজেট আরও বাড়ানোর পাশাপাশি তার যথাযথ বাস্তবায়নও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক ইউনিয়ন, পাড়া-মহল্লায় পাঠাগার, সংস্কৃতিকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি মসজিদের ইমামদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে মাদকের বিরুদ্ধে জোরালো জনসচেতনতা সৃষ্টিতে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, মাদকবিরোধী অভিযানের আগে মাদকের মতো ভয়াবহ সমস্যাটি নিয়ে কেউ কোনো টুঁঁ শব্দটিও করেননি কেন? এ প্রশ্নের উত্তর কোথাও মেলেনি। অথচ ভেতরে ভেতরে এক কোটিরও বেশি মানুষ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে। যার মধ্যে শিশু-কিশোর প্রায় তিন লাখ। অনেকে জড়িয়ে পড়েছে নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে। যদি জিজ্ঞেস করি, আমাদের সচেতন সমাজ কি তাহলে এতদিন ঘুমিয়েই ছিল? সরকারী উদ্যোগের বাইরে কেন পাড়া-মহল্লায় মাদকবিরোধী কর্মকা- দেখা যায়নি? কেন প্রতিবাদ আসেনি? সমালোচনা আসছে- রাঘববোয়ালদের না ধরে কেন খুচরো ব্যবসায়ীদের ধরা হচ্ছে? শেখ হাসিনা তার উত্তরে বলেছেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীরা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমি যখন যা ধরি, ভাল করেই ধরি।’ তাই দেশকে যিনি আপন নেতৃত্বের গুণে বিশ্বমানচিত্রে প্রতিনিয়ত গৌরবোজ্জ্বল করে প্রতিষ্ঠিত করছেন; সাময়িক উস্কানিতে কান না দিয়ে এ একটি নামেই আস্থা রাখুন। নামটি হলো শেখ হাসিনা। লেখক : অভিনেত্রী
×