ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ভূঞাপুর ৫০ শয্যা হাসপাতাল

পাঁচ লাখ মানুষের চিকিৎসায় মাত্র ৬ ডাক্তার

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ৫ জুন ২০১৮

পাঁচ লাখ মানুষের চিকিৎসায় মাত্র ৬ ডাক্তার

সংবাদদাতা, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল, ৪ জুন ॥ ভূঞাপুর ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও ৬টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবায় ডাক্তার রয়েছেন ৬ জন। দীর্ঘদিন যাবত এসব পদে ডাক্তার না থাকায় বৃহৎ এই জনগোষ্ঠী চিকিৎসা সেবা থেকে মারাত্মকভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়ন ও এ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে এলাকাবাসী। জানা গেছে, ৫০ শয্যা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এ সঙ্কট নিরসনে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন পদক্ষেপ নেই। হাসপাতালটি উপজেলার সীমান্তবর্তী স্থানে হওয়ায় উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী ঘাটাইল, গোপালপুর ও কালিহাতী উপজেলা থেকে প্র্রচুর পরিমাণ রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক, নার্স, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সঙ্কটের কারণে কোন সেবা পাচ্ছে না রোগীরা। ধনাঢ্য পরিবারের রোগীরা টাকা দিয়ে ক্লিনিকে সেবা নিলেও চরম ভোগান্তি শিকার চরাঞ্চলবাসী ও দরিদ্র্য পরিবারের রোগীরা। প্রত্যন্ত চরাঞ্চল থেকে অনেক রোগী সেবার প্রত্যাশা নিয়ে হাসপাতালে এলেও চিকিৎসা সেবা না পেয়ে আশাহত হয়ে ফিরে যাচ্ছেন তারা। দরিদ্র্যের কারণে হয়ত চিকিৎসাও জুটছে না তাদের ভাগ্যে। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বিধি মোতাবেক বিশেষজ্ঞ ২৭ জন ডাক্তারের অনুমোদন রয়েছে। সেখানে ডাক্তার আছে ১৬ জন। ৬ জন রয়েছে ডেপুটেশনে, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ১ জন, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের দায়িত্বে ১ জন, ইউনানি ১ জন ও ১ জন ডেন্টাল সার্জন রয়েছে। বাকি ৬ জন ডাক্তার দিয়ে চলছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও ৬টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। এর মধ্যে অধিকাংশ ডাক্তার সপ্তাহে ৩ দিনের বেশি অফিস করেন না। দীর্ঘদিন যাবত ডাক্তার না থাকায় বৃহৎ এই জনগোষ্ঠী চিকিৎসা সেবা থেকে মারাত্মকভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতালে ডাক্তার না পেয়ে রোগীরা বিভিন্ন ক্লিনিকে ভিড় জমাচ্ছে। সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবত ডেপুটেশনে থাকা ডাক্তার কাজি নজরুল ইসমের, ডাক্তার সাদিয়া আফরিন চৌধুরী, ডাক্তার সায়মা আক্তার, ডাক্তার ফাহমিদা হাসান ও ডাক্তার ফৌজিয়া আক্তারের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। এদের আত্মীয়স্বজন বড় মাপের হওয়ায় এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র রোগী দেখতে তাদের কোন আগ্রহ নেই। যতদিন ছিল তাতেও ইচ্ছে করে রোগীদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ রয়েছে অসংখ্য। নার্সদের ডিউটি নিয়ে রয়েছে নানা অনিয়ম। স্বাস্থ্য সহকারী, টেকনিশিয়ান, ল্যাবরেটরি এসিস্ট্যান্ড, সিএইচসিপি ও এমএলএসএস পদে ১টি করে পদ থাকলেও কোন জনবল নেই। অফিস সহকারী ৩ জনের মধ্যে রয়েছে ১ জন। তাও আবার আফিস করে সুবিধামতো সময়ে। স্বাস্থ্য সহকারী পদ শূন্য রয়েছে ৫টি। বৃহৎ এলাকাজুড়ে হাসপাতালে সিকিউরিটি গার্ড থাকার কথা ৩ জন সেখানে রয়েছে মাত্র ১ জন। যা রাতে ডিউটি করলে দিনে পরিণত হয় ক্রিকেট খেলার মাঠ, আর দিনে ডিউটি করলে রাতে বসে মাদকের হাট। হাসপাতালে দীর্ঘদিনে একটি পুুরানো এক্সরে মেশিন কোন রকম চলে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। কিন্তু ১ সপ্তাহের পর্যবেক্ষণে কোন এক্সরে করতে দেখা যায়নি। আল্টাস্নোগ্রাম মেশিন আছে বটে কিন্তু কোন সনোলিস্ট না থাকায় সেটিও বিকল। প্যাথলজিক্যাল ল্যাবে নামে মাত্র কিছু পরীক্ষা করলেও সেখানে টাকা বেশি নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিনের পুরনো এ্যাম্বুলেন্সটিও দুর্ঘটনার কবলে পরে দুুমড়ে মুচড়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন যাবত। মূলত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এ হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙ্গে পড়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
×