ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকৌশলী নাজমুল হোসেন

মতামত ॥ বিষয়টি ভাবতে পারেন

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৯ মে ২০১৮

মতামত ॥ বিষয়টি ভাবতে পারেন

সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছরে উন্নীতকরণের দাবি নিয়ে রাজপথ, শাহবাগ চত্বর, জাতীয় প্রেস ক্লাব ও দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ (বাসাছাপ)’ নামের একটি অহিংস ও অরাজনৈতিক সংগঠন আন্দোলন করে আসছে। দেশে এখন ২৬ লাখ বা তদুর্ধ উচ্চশিক্ষিত বেকার। দেশজুড়ে এই বেকার সন্তান দুশ্চিন্তা, হতাশা আর উৎকণ্ঠার সঙ্গে দিনাতিপাত করছে। তাদের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য কি করণীয় তা আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভাল করেই জানেন। আমরা বেকাররা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সন্তানতুল্য। সন্তানের কত শত আবদার থাকে মায়ের কাছে। মা কখনও সন্তানকে বঞ্চিত করে না। বিশ্বাস করি, আমাদের মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি বিবেচনায় রাখবেন। কিছুদিন আগে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিনা আন্দোলনে তাদের আবেদনের বিদ্যমান বয়সসীমা ৩৫ থেকে বাড়িয়ে ৩৯ করা হয়েছে। তাছাড়া বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের উচ্চ শিক্ষিত ছাত্র সমাজকে মেধা, যোগ্যতা আর দক্ষতার ভিত্তিতে দক্ষ জন শক্তিতে রূপান্তরিত করে থাকে। কোন কোন দেশে অবসরের বয়সসীমা নির্দিষ্ট থাকলেও প্রবেশের কোন সীমা নেই। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে ৫৯, কানাডাতে ৫৯, সুইডেনে ৪৭, এ্যাঙ্গোলাতে ৪৫, নরওয়েতে ৩৫, কাতারে ৩৫, শ্রীলঙ্কাতে ৪৫, ইন্দোনেশিয়াতে ৪৫, ইতালিতে ৩৫, ফ্রান্সে ৪০, তাইওয়ানে ৩৫ বছর। তাহলে আমাদের দেশে ৩৫ বা তার বেশি হবে না কেন? প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই ছোট্ট যৌক্তিক আবদার মেনে নিতে পারেন। বিশ্বজুড়ে আজ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নাম-ডাক। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর মেধা, দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন সে জন্য বিশ্বের ইতিহাস খ্যাত যে কয়জন সফল রাষ্ট্র নায়ক রয়েছেন, পাশে শেখ হাসিনার নামও রয়েছে। সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মায়ানমারে যখন মানবতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত-বিপর্যস্ত তখন পালিয়ে আসা সেই লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে এ দেশে ঠাঁই দিয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্যও আন্তর্জাতিক মহলের সহায়তায় যা করে যাচ্ছেন তাতে করে সারা বিশ্বে একজন সফল রাষ্ট্র নায়কের জন্য বড় দৃষ্টান্ত। এছাড়াও পার্বত্য শান্তি চুক্তির সমাধান এবং বাংলাদেশ, এশিয়া ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নারীদের শিক্ষা ও উন্নয়নে অসামান্য নেতৃত্বের জন্য ‘গ্লোবাল উইমেন’স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন এই ক্ষেত্রে তাঁকে আরও একধাপ এগিয়ে দিয়েছে। চাকরিতে প্রবেশনারী ক্ষেত্রে নার্সদের জন্য ৩৬, ডাক্তারদের জন্য ৩২, বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য ৪০, জুডিশিয়ালদের জন্য ৩২ রেখেছেন এবং অবসরের ক্ষেত্রে বিচারপতিদের জন্য ৬৮, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের জন্য ৬৮ তে বর্ধিত করেছেন। দেশ যখন পুরনো ধ্যান-জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়েছিল, বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি ঠিক তখনই আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাল ধরেছেন। পিছিয়ে থাকা দেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ে নিয়েছেন সময়োপযোগী সব উদ্যোগ। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট স্থাপন তার উল্লেখযোগ্য একটি। কম্পিউটার ও ইন্টারনেট শিক্ষার জন্য বিভিন্নভাবে সুযোগ করে দিয়েছেন। সরকারী-বেসরকারী প্রতিটি সেক্টর আজ কম্পিউটার ও ইন্টারনেট নির্ভর। তাছাড়া দেশের অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য উন্নয়নে নিয়েছেন সময়োপযোগী সব পদক্ষেপ ও প্রকল্প। বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন, দেশজুড়ে বিদ্যুতায়ন, পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, মহাসড়ক চার লেনে রূপান্তর, তিস্তার সঠিক পানি বণ্টন (প্রক্রিয়াধীন)সহ আরও অনেক কিছু তারই উদাহরণ। সরকার গড় আয়ু, কর্মক্ষমতা ও দক্ষতার যুক্তি দাঁড় করিয়ে বিদ্যমান প্রৌঢ় চাকরিজীবীদের অবসরের বয়স ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৫৯ করেছেন এবং ৬২ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গড় আয়ু যখন ৪৫ ছিল প্রবেশের বয়স ছিল ২৭। গড় আয়ু ৫০ অতিক্রম করলে প্রবেশের বয়স বেড়ে হয় ৩০। কিন্তু ২০১৮ সালের গড় আয়ুর রিপোর্টে প্রকাশিত আমাদের বর্তমান গড় আয়ু ৭১.৬০। তাহলে কি ৫৭ বছরের বৃদ্ধদেরই শুধু গড় আয়ু, কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা বেড়েছে? ৩০ বছরের তরুণ-তরুণীদের বাড়েনি? তাছাড়া বেঁধে দেয়া এই ৩০ এর সীমাবদ্ধতাকে অনুসরণ করে বিভিন্ন প্রাইভেট সেক্টর যেমন ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও ৩০ এর পরে নিয়োগ দিচ্ছে না। ফলে এদিকেও প্রবেশটা সংকুচিত হয়ে গেছে। তাহলে আমরা যাব কোথায়? সবাই আশা করি, আধুনিক বাংলাদেশের একজন রূপকার হিসেবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা সাধারণদের জন্য ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫-এ উন্নীতসহ মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্যদের আনুপাতিকহারে বর্ধিত করবেন । [email protected]
×